Thank you for trying Sticky AMP!!

লালে আর গোলে বোধন বিশ্বকাপের

কাল সৌদি আরবে ঈদ। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ শেষ হতে হতেই সে খবর জানা গেল। এর আগেই অবশ্য জানা হয়ে গেছে, ঈদ আনন্দ ঠিক তেমনভাবে পাওয়া হবে না। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রাশিয়া ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরবকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তৃপ্ত করতে পারেনি কাউকে। প্রথম ম্যাচ করতে পারবে এমন আশাও খুব একটা করা হচ্ছিল না। একে তো র‍্যাঙ্কিংয়ের বিচারে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে দুর্বল দুই দলের খেলা। তার ওপর দুই দলেই নেই কোনো তারকা খেলোয়াড়। নিরপেক্ষ দর্শকের জন্য খুব একটা আহামরি আকর্ষণ নয়। 

বিশ্বকাপে রাশিয়ার উড়ন্ত সূচনা। ছবি: রয়টার্স

একদিকে দুই প্রান্ত ব্যবহার করে খেলছে রাশিয়া, টিকিটাকার অপভ্রংশ দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে সৌদি আরব। কার্যকরী ফুটবলে উদ্বোধনী দিনটা তাই নিজেদের করে নিয়েছে রাশিয়া।

ক্যারিয়ারের প্রথম গোলের আনন্দ, সেটাও আবার বিশ্বকাপে! ছবি: রয়টার্স

প্রথম ম্যাচ তবু পাস নম্বর পেয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা গুরুত্ব পায়, অন্য একটি কারণে। স্বাগতিক দলের খেলা, সে ম্যাচে শুভসূচনা হলেই বিশ্বকাপটা জমে ওঠে। আর ফলটা অন্যরকম হলেই বিপদ। আয়োজক দেশের আনন্দ, আগ্রহটা একটু চুপসে যায়। সে দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে বেশ দ্রুত। ২১তম বিশ্বকাপের প্রথম গোল বলেই বলেই হয়তো গোলের মুহূর্তেও ২ আর ১ থাকল। শুধু একক ও দশকের স্থানটা অদলবদল করে ম্যাচের ১২ মিনিটে স্টেডিয়ামে নাচন তুলে দিলেন ইউরি গাজিনস্কি।

কর্নার থেকে ঘুরে ফিরে এসেছিল আলেক্সান্দর গোলোভিনের কাছে। তাঁর ক্রস থেকে বল ছোট বক্সের একটু বাইরে থাকা গাজিনস্কির কাছে। এই মিডফিল্ডারের পাহারায় থাকা সৌদি ডিফেন্ডার লাফাতে গিয়েও পেরে উঠলেন না। মাটিতে পড়ে যেতে যেতে দেখলেন, কীভাবে গাজিনস্কির হেড গোলরক্ষক আবদুল্লাহ আল-মাইয়ুফের গ্লাভসকে ‘এত কাছে তবু কত দূরে’ বলে জালে চলে যাচ্ছে! ২৮ বছর বয়সে এসে প্রথম আন্তর্জাতিক গোল পাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো উপলক্ষ হয়তো নিজেও লিখতে পারতেন না গাজিনস্কি।

বদলি নেমে গোল করেছেন জিউবা। ছবি: রয়টার্স

২৪ মিনিটে অবশ্য স্বাগতিকদের আনন্দ মিইয়ে যেতে বসেছিল। দারুণ এক প্রতি আক্রমণে উঠেছিল রাশিয়া। দুজন সৌদি ডিফেন্ডারের বিপরীতে তিন রাশিয়ান ফরোয়ার্ড। এর মাঝেই হঠাৎ হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ল আলান জাগোয়েভের। বিশ্বকাপের প্রথম গোলের সঙ্গে প্রথম চোটের সঙ্গেও নাম লিখল রাশিয়া। মাঠে নামলেন দেনিস চেরিশেভ। তাতেই ইতিহাস হলো। বিশ্বকাপের ইতিহাসে উদ্বোধনী ম্যাচে বদলি নেমে গোল করতে পারেননি কেউ। রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমির এই সাবেক খেলোয়াড় সে ইতিহাস গড়লেন ৪৩ মিনিটে। সৌদি রক্ষণের হাস্যকর সব ভুলের সুবিধা নিয়ে প্রথমার্ধটা ২-০ ব্যবধানে শেষ করল রাশিয়া।

জোড়া গোল করেছেন চেরিশেভ। ছবি: রয়টার্স

যে ইতিহাস কেউ করতে পারেনি, সেটা দুবার হয়ে গেল ২৮ মিনিটের মধ্যে। ৭০ মিনিটে বদলি নামা আরতিয়ম জিউবা পরের মিনিটেই গোল করে ফেললেন। মুখস্থ নিয়মেই। বক্সে উড়ে আসা ক্রস, আর সেখান থেকে জোরালো হেডে সৌদি গোলরক্ষককে পরাস্ত করা। এরপরও সৌদি আরব চেষ্টা করেছে ম্যাচে ফেরার, গোল ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু যোগ করা সময়ে সে আশাও শেষ হলো।

৯২ মিনিটে প্রতিপক্ষের রক্ষণের আরেকটি ভুলে বল পেয়ে গেলেন চেরিশেভ। বাঁ পায়ের দারুণ এক শটে ব্যবধান বাড়ল (৪-০)। কিন্তু এতেও ক্ষুধা মিটল না স্বাগতিকের। ১ মিনিট পরেই বক্সের বাইরে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত গোল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক দলের গোলদাতাদের ছোট তালিকায় নাম উঠল আলেক্সান্দর গোলোভিনেরও। ভিআইপি বক্সে মোহাম্মদ বিন সালমানকে আরও একটা খোঁচা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন ভ্লাদিমির পুতিন। মাঝখানে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোকে রেখে দুই দলের দুই হর্তাকর্তা বসেছিলেন খেলা দেখতে।

ম্যাড়ম্যাড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যতটা হতাশ করেছিল, রাশিয়া দলটা গোলের পর গোল করে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিল। বিশ্বকাপের শুরুটা মেনে এবার বাকি রোমাঞ্চেও পয়সা উশুলের অপেক্ষা।