'সুপার সাব' টিপুর নিঠুর বর্তমান

ম্যাচ শেষের পথে। গোল আসছে না। চিন্তা কী! টিপুকে নামিয়ে দাও। বদলি নেমে ঠিকই গোল এনে দেবেন এই স্ট্রাইকার। একটা সময় ঢাকার ফুটবল বা জাতীয় দলে এমনই ভরসার নাম ছিলেন শাহাজউদ্দিন টিপু। যাঁর নামের পাশে বসে যায় ‘সুপার সাব’ তকমা।
সেই ঝলমলে সময়টা কোনো অতীতের স্মৃতি মনে হচ্ছে তাঁর কাছে। নিঠুর বর্তমানের সঙ্গে লড়াই করে যে আর পারছেন না! দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত স্ত্রী সাজেদা বেগমের চিকিৎসার জন্য দরকার অনেক টাকা। নিজের যা ছিল, গত দেড় বছরে প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। কিন্তু আর সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না। তাই ঢাকার আবাস ছেড়ে চলে গেছেন পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথগঞ্জে। ঢাকার দামি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলের জীবনেও তাই ঘটে গেছে রদবদল।
১৭ বছরের বিবাহিত জীবনের সঙ্গীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেই এখন তাঁর যত চেষ্টা। কাল ছুটে এলেন বাফুফে ভবনে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে সহায়তার আশ্বাসও পেলেন। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন বাদল রায়, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীরসহ অনেকেই।
একটু যেন ভরসা পেলেন ২০০৮ সালে অবসরে যাওয়া টিপু। সবচেয়ে বেশি সাত বছর খেলেছেন আবাহনীতে। জাতীয় দলেও ছিলেন বছর সাতেক। বারবার উঠে আসছিল সেই সব গল্প। কিন্তু তাঁর কথাগুলো যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছিল। তবু ১৯৯৯ সাফ গেমসের সেমিফাইনালে কাঠমান্ডুর মাঠে ভারতের বিপক্ষে বদলি নেমে তাঁর সেই জয়সূচক গোলের কথা কি আর না বলে পারেন! মালদ্বীপের বিপক্ষে যুব ফুটবলে বদলি হিসেবে সাত মিনিটে হ্যাটট্রিক করার সেই দিনটির কথাই-বা ভোলেন কী করে। ঢাকায় ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মোহামেডানের জালে বল পাঠিয়ে দলকে জেতান নির্ধারিত সময়ের শেষক্ষণে মাঠে নেমে।
কত সাফল্য। কত অর্জন! কিন্তু সেসব ভেবে আনন্দময় স্মৃতির রাজ্যে ডুবে যেতে পারেন না। জীবনসংশয়ে থাকা স্ত্রী, আর পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ মা-ই এখন তাঁর চিন্তাজুড়ে। টিপু তাই বলছিলেন, ‘ফুটবল অঙ্গনে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি আমি। এই দুঃসময়ে ফুটবল আমার পাশে থাকলে একটু লড়াই তো করতে পারব।’