উত্তেজনা, রোমাঞ্চ এবং নাটকীয়তা—এ শব্দগুলোও যেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চিত্রকে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারছে না। লিগের শেষ দিকে এসে এখন যা–ই ঘটুক, উত্তেজনা যে সব সীমা ছাড়িয়ে যাবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। শেষ পর্ব শুরুর আগে পয়েন্ট তালিকার দিকে তাকালেই উত্তাপটা টের পাওয়া যাবে। শীর্ষে থাকা তিনটি দলের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান যে মাত্র ১।
এমনকি আর্সেনাল ও লিভারপুলের পয়েন্ট সমান ৬৪ হওয়ায় শীর্ষ দুই দলকে আলাদা করতে হয়েছে গোল ব্যবধান দিয়ে। আর তিনে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৬৩। এমন জমজমাট পরিস্থিতিতে মৌসুম শেষে এই তিন দলের যে কারও হাতেই উঠতে পারে ট্রফি। তবে এই পরিস্থিতিতে আজ রাতের ম্যাচ দুটি হয়ে উঠতে পারে শিরোপা নির্ধারক। এই রাতে যারা ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে নিতে পারবে, শিরোপা দৌড়ে তারা এগিয়ে যাবে অনেক দূর।
আজ সন্ধ্যা সাতটায় অ্যানফিল্ডে লিভারপুল মুখোমুখি হবে ব্রাইটনের। এই ম্যাচে জিতলে অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য লিগের শীর্ষে উঠতে পারবে লিভারপুল। তবে আর্সেনাল-সিটি ম্যাচের পর বদলে যেতে পারে এ চিত্র। এই দুই ম্যাচের সম্ভাব্য ফল বিবেচনায় নিয়ে শিরোপা দৌড়ে কারা এগিয়ে যাবে, সেটি বের করেছে ফুটবলের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক ওয়েবসাইট অপ্টার সুপারকম্পিউটার।
যদি লিভারপুল ব্রাইটনকে হারায়
রোববার অ্যানফিল্ডে ব্রাইটনের বিপক্ষে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে লিভারপুল। ম্যাচ–পূর্ব অনুমান বলছে, এ ম্যাচে লিভারপুলের জয়ের সম্ভাবনা ৬০.৭ শতাংশ। প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে বর্তমানে ২৬ ম্যাচে অপরাজিত আছে লিভারপুল, যেখানে ২০ ম্যাচেই জিতেছে তারা। ইয়ুর্গেন ক্লপের এই দলকে হারানো বা থামানো ব্রাইটনের জন্য মোটেই সহজ হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাইটনের ছন্দও ভালো নেই। নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে তারা।
তবে ব্রাইটন সর্বশেষ টানা দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। কিছু পরিসংখ্যান অবশ্য ব্রাইটনের পক্ষেও আছে। অ্যানফিল্ডে সর্বশেষ তিন ম্যাচে হারেনি তারা। আর সিগালদের বিপক্ষে সর্বশেষ ৭ ম্যাচের মাত্র একটিতে জিতেছে লিভারপুল (চার ড্র, দুই হার)। এরপরও অবশ্য এই ম্যাচে লিভারপুলই ফেবারিট হিসেবে খেলতে নামবে।
এখন অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করে লিভারপুল যদি জেতে আর আর্সেনাল যদি সিটির বিপক্ষে হেরে যায়, তবে গানারদের শিরোপা জেতার সম্ভাবনা নেমে আসবে ৯ শতাংশে। বিপরীতে আর্সেনালকে হারানোয় সিটির সম্ভাবনা হবে ৫৪ শতাংশ এবং ব্রাইটনকে হারিয়ে লিভারপুলের সম্ভাবনা হবে ৩৭ শতাংশ।
সম্ভাবনার নিরিখে পিছিয়ে পড়লেও লিভারপুল কিন্তু সিটির চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে আসবে। আর লিভারপুলের চেয়ে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে আর্সেনাল নেমে যাবে তিনে।
অন্যদিকে লিভারপুল যদি জেতে এবং আর্সেনাল-সিটি ম্যাচ যদি ড্র হয়, তবে অ্যানফিল্ডের দলটি শীর্ষে ওঠার সঙ্গে শিরোপা দৌড়েও এগিয়ে যাবে। তখন লিভারপুলের ৪৭ শতাংশ সম্ভাবনার বিপরীতে সিটির সম্ভাবনা হবে ৩৪ শতাংশ। আর লিভারপুলের জয়ের সঙ্গে যদি আর্সেনালও জেতে, তবু সম্ভাবনাই এগিয়ে থাকবে ক্লপের দল। সে ক্ষেত্রে পয়েন্ট তালিকায় অবশ্য আর্সেনালই শীর্ষস্থান ধরে রাখবে।
যদি লিভারপুল ব্রাইটনের সঙ্গে ড্র করে
অ্যানফিল্ডে ব্রাইটনের সঙ্গে ম্যাচ ড্র করলে বড় ধাক্কা খাবে লিভারপুল। সে ক্ষেত্রে সিটি-আর্সেনাল দুই দলই থাকবে সুবিধাজনক অবস্থানে। নিজেদের মুখোমুখি ম্যাচে এই দুই দলের যে–ই জিতবে তারা শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে যাবে অনেক দূর। লিভারপুল ড্র করার পর সিটি যদি আর্সেনালকে হারায়, তবে গার্দিওলার দলের শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৫ শতাংশে। শুধু সম্ভাবনাই বাড়বে না, সিটি তখন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে আসবে।
তবে আর্সেনাল জিতলে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ স্থান সুদৃঢ় করার পাশাপাশি শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা হবে ৪৫ শতাংশ। আর্সেনাল কিন্তু চলতি মৌসুমে কখনোই অপ্টার সুপারকম্পিউটারের হিসাবে শিরোপা জয়ে ফেবারিট ছিল না। আজ সিটির বিপক্ষে জয় প্রথমবারের মতো শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে দিতে পারে তাদের। আর ম্যাচ দুটি ড্র হলেও সম্ভাবনার দিক থেকে এগিয়ে থাকবে সিটিই। তখন অবশ্য পয়েন্ট টেবিল কোনো অদল-বদল আসবে না। তিনটি দলই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে।
যদি লিভারপুল ব্রাইটনের কাছে হারে
লিভারপুল এবং আর্সেনাল হারলে এ দুই দলের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়ে শীর্ষে উঠবে সিটি। তখন সিটির শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছাবে। এমন কিছু হলে এরপর অবশ্য সিটিকে থামানো কঠিনই হবে। গত মৌসুমেও এমন পরিস্থিতিতে পাশার দান উল্টে দিয়েছিল গার্দিওলার দল। আর্সেনালকে শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে দিয়ে শিরোপা জিতে নেয় সিটিই।
আর্সেনালের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও অবশ্য আশাবাদী করবে সিটিকে। প্রিমিয়ার লিগে শেষ ১৩ ম্যাচের ১২টিতেই জিতেছে তারা। তবে একমাত্র হারটি অবশ্য এ মৌসুমেই দেখেছে সিটি। এমিরেটসে ১-০ গোলে মিকেল আরতেতার দলের কাছে হারে গার্দিওলার সিটি। আজ যদি সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ইতিহাদে গানাররা যদি সিটিকে হারাতে পারে, তবে তাদের সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৯ শতাংশে। আর ইতিহাদ থেকে জয় নিয়ে ফেরা মানে আত্মবিশ্বাসের পারদটা অনেক উঁচুতে। এরপর যেকোনো দলের আর্সেনালকে থামানো কঠিন এক চ্যালেঞ্জই হবে।
সাম্প্রতিক ফলও অবশ্য বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে আর্সেনালকে। প্রিমিয়ার লিগে শেষ ৮ ম্যাচের সব কটি জিতেছে তারা। এই আট ম্যাচে তারা ৮ গোল হজম করার বিপরীতে করেছে ৩৩ গোল। পাশাপাশি সিটিতে থাকছে না দলের অন্যতম দুই সেরা খেলোয়াড় কাইল ওয়াকার ও জন স্টোনস। ম্যানচেস্টারের প্রতিপক্ষদের হারানোর জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর কী হতে পারে! এখন মাঠে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারলেই হয়। অন্য দিকে ব্রাইটনের বিপক্ষে হার মানে লিভারপুলের জন্য বিশাল এক ধাক্কা। সে ক্ষেত্রে অন্য ম্যাচের ফলাফল যা–ই হোক, তা থেকে খুব সুবিধা পাবেন না ক্লপের শিষ্যরা।