ইদ্রিসা গুয়েকে মাইকেল কিনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছেন এভারটন গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। গতকাল রাতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে
ইদ্রিসা গুয়েকে মাইকেল কিনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছেন এভারটন গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। গতকাল রাতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে

সতীর্থকে চড় মেরে লাল কার্ড, ১০ জনের এভারটনের বিপক্ষে হার ইউনাইটেডের

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ০–১ এভারটন

অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। ম্যাচে তখন ১৩ মিনিটের খেলা চলছিল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একটি শট এভারটনের পোস্টের বাইরে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এভারটন রক্ষণ বল ‘ক্লিয়ার’ করতে না পারার ফল হিসেবে শটটি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইউনাইটেড। সম্ভবত এ নিয়েই কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন এভারটনের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইদ্রিসা গুয়ে ও সেন্টারব্যাক মাইকেল কিন। উত্তপ্ত সেই পরিস্থিতিতে গুয়ে মেজাজ হারিয়ে কিনের মুখে চড়ও মারেন।

পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, এমনটা আঁচ করেই সম্ভবত গুয়ের সামনে শান্তির বার্তা নিয়ে দাঁড়ান এভারটন গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। গুয়েকে জড়িয়ে ধরে অন্য পাশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পিকফোর্ড। তখন পিকফোর্ডের জার্সি ধরে তাঁকেও দুকথা শুনিয়েছেন গুয়ে।

রেফারি টনি হ্যারিংটনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। গুয়েকে তিনি লাল কার্ড দেখান। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত ১৭ বছরের মধ্যে সতীর্থের সঙ্গে মারামারি করে লাল কার্ড দেখা প্রথম খেলোয়াড় গুয়ে। তাঁর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালে স্টোক সিটির সতীর্থ ও অধিনায়ক অ্যান্ডি গ্রিফিনকে চড় মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন রিকার্ডো ফুলের। সতীর্থের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে লাল কার্ড দেখার তৃতীয় ঘটনা এটি প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে।

গুয়েকে থামাতে গিয়ে তাঁর কড়া আচরণের শিকারও হন পিকফোর্ড

১০ জনে পরিণত হওয়া এভারটন কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে ম্যাচ হেরে আসেনি। ২৯ মিনিটে মিডফিল্ডার কিয়েরনান ডিউসবুরি-হলের দারুণ বাঁকানো শটে করা গোলে এগিয়ে যায় এভারটন। শেষ পর্যন্ত এ গোলেই ইউনাইটেডের ঘরের মাঠ থেকে বিরল এক জয় নিয়ে ফিরেছে ডেভিড ময়েসের দল।

ইউনাইটেডের সাবেক কোচ ময়েস এভারটনের দায়িত্বে ফেরার পর প্রতিপক্ষ দলের কোচ হিসেবে ১৮তম বারের চেষ্টায় ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম জয় পেলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের পর ইউনাইটেডের মাঠে এটাই প্রথম জয় এভারটনের। সেই ম্যাচে ইউনাইটেডের ডাগ আউটে ছিলেন ময়েস।

ম্যাচে ৭৭ মিনিট সময়জুড়ে ১০ জনের এভারটনের বিপক্ষে খেলার সুবিধা আদায় করতে পারেনি ইউনাইটেড। চেষ্টা যে ছিল না তা নয়, ২৫টি শট নিয়েছে। তবু গোল করতে না পারায় প্রথমবারের মতো একটি তেতো স্বাদ পেতে হলো ইউনাইটেডকে। অপটা জানিয়েছে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখার পরও হারের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম ইউনাইটেডের। অতীতে এমন ৪৬টি ম্যাচে ১০ ড্রয়ের পাশাপাশি ৩৬টি জয় ছিল তাদের।

কিয়েরনান ডিউসবুরি-হলের শটে গোল পায় এভারটন

ইউনাইটেড কোচ রুবেন আমোরিম স্বাভাবিকভাবেই এমন পারফরম্যান্সে ভীষণ হতাশ। ঘরের মাঠে টানা পঞ্চম জয়ের আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু হার দেখার পর আমোরিম বলেন, ‘আমরা এভাবে ম্যাচ জিততে পারব না। এ ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে আমি সত্যিই হতাশ। বিশেষ করে নিজেদের মাঠে।’

জয়ের পর এভারটন কোচ ময়েস জানিয়েছেন, সেনেগালিজ খেলোয়াড় গুয়ে ক্ষমা চেয়েছেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির জন্য, ‘ফুটবলে এটা হতেই পারে। আমার মনে হয় রেফারি একটু সময় নিয়েছেন। কেউ একটা বাজে পাস দিলে, নিজের কাজটা ঠিকমতো না করলে, আমি চাই আমার খেলোয়াড়েরা পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া করুক।যে ধৈর্য ও দৃঢ়তা দেখিয়ে আমরা ফলটা পেয়েছি, আমার মনে হয় জয়ী দল চাইলে এমন খেলোয়াড় থাকতে হবে যারা এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।’

পয়েন্ট তুলে নিতে না পারায় হতাশ ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টে গুয়ে ক্ষমা চেয়ে লেখেন, ‘সবার আগে আমি আমার সতীর্থ মাইকেল কিনের কাছে ক্ষমা চাই। নিজের প্রতিক্রিয়ার সম্পূর্ণ দায় আমার। সতীর্থ, স্টাফ, ক্লাব ও ভক্তদের কাছেও ক্ষমা চাই...এটা যেন আর কখনো না ঘটে সেটা নিশ্চিত করব।’

পয়েন্ট টেবিলের দশে ইউনাইটেড। ১২ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৮। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে এভারটন ১১ তম। আর্সেনাল ১২ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে।