গত ১৮ নভেম্বর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ–ভারত
গত ১৮ নভেম্বর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ–ভারত

কখনো ফিফা বিশ্বকাপে না খেলা জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০ দল, বাংলাদেশ-ভারতসহ আরও যারা

জনসংখ্যায় বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে জায়গা করেছে কুরাসাও। দুই লাখের কম জনসংখ্যার ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপদেশটি ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সবচেয়ে কম মানুষের দেশ। বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তালিকায় থাকা অনেক দেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে জায়গা করতে পারেনি। তেমনই শীর্ষ ১০টি দেশের খবর জানুন।

মিয়ানমার

মিয়ানমার ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ৫.৫ কোটি

বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৬৩

একসময় এশিয়ান ফুটবলে সমীহ জাগানো দল ছিল মিয়ানমার। ১৯৬৬ ও ১৯৭০ এশিয়ান গেমসের ফুটবল চ্যাম্পিয়ন তারা। ১৯৬৮ এশিয়ান কাপে হয়েছিল রানার্সআপও। কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপে মিয়ানমার কখনো জায়গাই করতে পারেনি। আবার মিয়ানমারই সেই দেশগুলোর একটি, যারা একাধিকবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

১৯৫০, ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপে দেশটি বাছাইয়ে অংশ নেয়নি, যার ফলে শেষবার পরবর্তী আসরে নিষিদ্ধও ছিল। দুর্বল ঘরোয়া লিগ, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুটবল কাঠামো আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কম ম্যাচ মিলিয়ে গত কয়েক দশকে দেশটির ফুটবল আরও পিছিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৬ বিশ্বকাপের এএফসি বাছাইয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় মিয়ানমার।

কেনিয়া

কেনিয়া

জনসংখ্যা: ৫.৭ কোটি

র‍্যাঙ্কিং: ১১৩

পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ১৯৭৪ বিশ্বকাপ থেকে বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। আফ্রিকা মহাদেশের শীর্ষ প্রতিযোগিতা আফ্রিকা কাপ অব নেশনসেও দলটির সাফল্য নেই। এখন পর্যন্ত পাঁচবার খেলে প্রতিবারই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ।

কেনিয়ার ফুটবল প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা, ফিফার নিষেধাজ্ঞা আর অ্যাথলেটিকসের প্রাধান্য মিলিয়ে দেশটি এখনো ফুটবলে নিজেদের হাতড়ে বেড়াচ্ছে। যদিও র‍্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে কেনিয়া।

তানজানিয়া

তানজানিয়া ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ৭ কোটি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১১২

ভবিষ্যতে আফ্রিকা থেকে যেসব দেশ বিশ্বকাপে জায়গা করার সম্ভাবনায় এগিয়ে, তানজানিয়া তার একটি। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মোট ৭ ম্যাচ খেলে ৩টিতে জয় আর ১টি ড্র করেছে দেশটি। ১৯৮২ বিশ্বকাপ দিয়ে বাছাইপর্বে প্রবেশ করার পর প্রায় চার দশক অবশ্য বলার মতো কিছুই করতে পারেনি তানজানিয়া।

২০১৯ সালে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের মূল পর্বে জায়গা করার পর থেকে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে দলটি। ২০২৩ সালের পর ২০২৫ আফ্রিকা কাপ অব নেশনসেও জায়গা করেছে, যা তানজানিয়ার ইতিহাসে আগে ঘটেনি।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড

জনসংখ্যা: ৭.১৬ কোটি

র‍্যাঙ্কিং: ৯৫

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ প্রতিযোগিতা আসিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ৭ বার ট্রফি জিতেছে থাইল্যান্ড। ১৯৭২ এএফসি এশিয়ান কাপে হয়েছিল তৃতীয়। সর্বশেষ দুই আসরেও মহাদেশীয় প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোয় খেলেছে দলটি। কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপে জায়গা করার লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরানের মতো দলগুলোর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি থাইল্যান্ড।

২০০২ ও ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে তো শেষ রাউন্ডে গিয়ে হতাশ হতে হয়েছে। এবার ২০২৬ আসরের বাছাইয়ে থাইল্যান্ডের পথচলা থেমেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে কয়েক বছর ধরে থাইল্যান্ডের লিগের মান বেড়েছে, ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের আনাগোনাও দেখা যাচ্ছে। এশিয়ান ফুটবলে থাইল্যান্ডকে উদীয়মান শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ১০.১ কোটি

র‍্যাঙ্কিং: ১১০

১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে বাছাইয়ে খেলছে ভিয়েতনাম। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাফল্য ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছানো। ২০২৪ আসিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি জিতলেও ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইয়ে আটকে গেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে।

তবে গত এক দশকে ভিয়েতনামের উন্নতি লক্ষণীয়। ঘরোয়া লিগের মান বৃদ্ধি, বয়সভিত্তিক ফুটবল কাঠামোয় ভর করে দেশটি ২০১৮ এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ও ২০১৮ এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনাল এবং ২০১৯ এএফসি কাপের ফাইনালে খেলেছে।

ফিলিপাইন

ফিলিপাইন

জনসংখ্যা: ১১.৭ কোটি

র‍্যাঙ্কিং: ১৩৬

সর্বশেষ চারটি বিশ্বকাপ বাছাইয়েই দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছে ফিলিপাইন। এর মধ্যে ২০২৬-এর বাছাইয়ে তো ৬ ম্যাচে কোনো জয়ই নেই, ড্রও মাত্র একটি। এমনকি ২০১৯ এশিয়ান কাপ (গ্রুপ পর্ব) বাদে আগে-পরে এশিয়ার শীর্ষ মঞ্চেও জায়গা করতে পারেনি ফিলিপাইন।

ইথিওপিয়া

ইথিওপিয়া ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ১৩.৫ কোটি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৪৭

সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের দেশ ইথিওপিয়া ১৯৬২ থেকে বিশ্বকাপ বাছাই খেলছে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারছে না। সর্বশেষ ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জিতেছে ইথিওপিয়া, বাকি ৮টিতে ৫ হার ও ৩ ড্র।

ইথিওপিয়া বিশ্বকাপ খেলার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ২০১৪ আসরের বাছাইয়ে। সেবার প্লে-অফে নাইজেরিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় দেশটির।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ১৭ কোটি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৮০

বাংলাদেশ ফিফার সদস্য হয় ১৯৭৬ সালে, প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাই খেলে ১৯৮৬ আসরে। সে সময় থেকে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবলের প্রবল জনপ্রিয়তা থাকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য কমই। ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জয় আছে, কিন্তু ১৯৮০ সালের পর বাংলাদেশ আর এশিয়ান কাপে জায়গাই করতে পারেনি।

২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড মিলিয়ে মোট ৮টি ম্যাচ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। প্রথম রাউন্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে একমাত্র জয় বাদে বাকি ৭ ম্যাচের ২টিতে ড্র আর ৫টিতে হেরেছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তান

পাকিস্তান ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ২৫.৫ কোটি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৯৯

১৯৪৮ সালে ফিফার সদস্য হওয়া পাকিস্তান এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাই খেলেছে ১০ বার। প্রতিবারই প্রথম বা দ্বিতীয় রাউন্ডে দৌড় থেমে গেছে। সর্বশেষ বাছাইয়ে প্রথম রাউন্ডে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জিতলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ৬ ম্যাচের সব কটিতে হেরেছে পাকিস্তান।

কখনো এশিয়ান কাপে খেলতে না পারা পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় সাফও জিততে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ফিফার নিষেধাজ্ঞা আর কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই শর আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ভারত

ভারত ফুটবল দল

জনসংখ্যা: ১৪৬ কোটি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ১৪২

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ ভারত। যে জনসংখ্যার আধিক্য দেশটিকে ক্রিকেট-বাণিজ্যের কেন্দ্র বানিয়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকাও রেখেছে। কিন্তু ক্রিকেট-দুনিয়ায় যতটা বড়, ফুটবলে যেন ঠিক ততটাই ছোট উপস্থিতি ভারতের।

১৯৪৮ সালে ফিফার সদস্যপদ পাওয়া ভারত ১৯৫০ বিশ্বকাপেই খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এশিয়ার মিয়ানমার, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া বাছাই থেকে নাম প্রত্যাহার করায় ভারতকে চূড়ান্ত পর্বে খেলার আমন্ত্রণ জানায় ফিফা। ভারত ব্রাজিলে দল পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায়। কারণ দেখানো হয়, ‘দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে খেলার জন্য অর্থাভাব’ এবং ‘১৯৫২ অলিম্পিকে মনোযোগ বৃদ্ধি’। কিছু প্রতিবেদনে অবশ্য এমন খবরও বের হয়, ফিফা খালি পায়ে খেলার অনুমতি না দেওয়ায় খেলেনি ভারত। সেবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মোট ১৬ দল অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও ৩টি জায়গাই ফাঁকা ছিল।

হেলায় বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নষ্টের পর ১৯৫৪ বিশ্বকাপে ভারতের জন্য দরজা বন্ধ করে ফিফা। ভারত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফেরে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আগে। তবে এখন পর্যন্ত