নাপোলির উৎসবে ছিলেন ম্যারাডোনাও
নাপোলির উৎসবে ছিলেন ম্যারাডোনাও

নাপোলির শিরোপা জয়ে যেভাবে ছিলেন ম্যারাডোনাও

মৌসুমের শেষ লিগ ম্যাচ। প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও নিশ্চিত নয় শিরোপা। শেষ ম্যাচটা যেকোনো মূল্যে জিততেই হবে। সামান্য একটা ভুল শেষ করে দিতে পারে সব স্বপ্ন। এমন পরিস্থিতিতে শুধু খেলাটাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন অলৌকিক কোনো শক্তিরও। আর দলটির নাম যদি নাপোলি হয়, তবে তাদের অলৌকিক শক্তির নাম নিঃসন্দেহে ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

ফুটবলের সব সমীকরণ একদিকে আর ম্যারাডোনা–নাপোলি জোড় অন্যদিকে। এমনকি নাপোলির তিনটি প্রতীকেরও একটি হচ্ছেন ম্যারাডোনা। অন্য দুটি হচ্ছে পিৎজা এবং ফুটবল। কিন্তু নেপলসের ফুটবলকে আবার ম্যারাডোনা ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সে অর্থে নাপোলির প্রতীক আসলে দুটি পিৎজা এবং ম্যারাডোনা।

নাপোলির দেয়াল, বিলবোর্ড, বাড়িঘর কিংবা দোকানপাট—সবটাই যখন ম্যারাডোনাময়, তখন এমন স্বর্গীয় রাতে ম্যারাডোনা মাঠে থাকবেন না. তা হয় নাকি? ছিলেন কালও, গ্যালারিতে এবং মাঠেও।  প্রশ্ন হচ্ছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে যিনি অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন, তিনি কীভাবে কাল মাঠে ছিলেন?

উত্তরটা অবশ্য যাঁরা কাল মাঠে বসে বা টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা অন্য কোনো উপায়ে খেলাটা দেখেছেন, তাঁরা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন ম্যারাডোনার উপস্থিতি। অন্তত দুইবার তো বটেই। প্রথমবার ম্যারাডোনা ফিরেছিলেন স্কট ম্যাকটমিনের ওপর ভর করে, আর পরেরবার রোমেলু লুকাকুর মধ্য দিয়ে।

গতকাল রাতে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’তে একই সময়ে মাঠে নেমেছিল শিরোপাপ্রত্যাশী দুই দল ইন্টার মিলান ও নাপোলি। ক্যালিয়ারির বিপক্ষে জিতলে কোনো হিসাব ছাড়া চ্যাম্পিয়ন নাপোলি, কিন্তু পয়েন্ট হারোনোর সুযোগ নেই। তেমনটা হলে নিজেদের ম্যাচে ইন্টার জিতলে ট্রফি উঠবে তাদের হাতেই।

ম্যারাডোনাকে যেভাবে স্মরণ করেছে নেপলসবাসী

এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় ইন্টার এগিয়ে যাওয়ার পর অস্থিরতা ভর করে নাপোলির মধ্যে। গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা করে একাধিকবার ব্যর্থও হয় তারা। কিন্তু যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, তখনই পুরো গ্যালারিকে ম্যারাডোনাময় জাদুতে স্তব্ধ করে দিলেন স্কট ম্যাকটমিনে।

মাতেও পলিতানোর যখন ক্রসটা করেন, তখন ম্যাকটমিনের সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার তো ছিলেনই, এমনকি তাঁকে ঘিরে ছিলেন ক্যালিয়ারির অন্য তিনজনও। এমন পরিস্থিতিতে গোল করার জন্য ম্যারাডোনা–সুলভ জাদুকরি কিছুরই প্রয়োজন ছিল ম্যাকটমিনের এবং করলেনও তাই।

বল নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকায় পলিতানোর ক্রসের পর শরীরটাই ভাসিয়ে দিলেন স্কটিশ মিডফিল্ডার, যার ফলে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে পেরিয়ে গিয়ে শূন্যে থাকা তাঁর পা স্পর্শ করে বলকে। এরপর নিমেষেই দিক পাল্টে বল জালে জড়ায় এবং আবার পয়েন্ট তালিকায় ইন্টারের চেয়ে এগিয়ে দেয় নাপোলিকে।

এভাবেই নেপলসের আকাশের সঙ্গে মিশে আছেন ম্যারাডোনা

এরপর লুকাকুর করা গোলটাতেও ছিল খানিকটা ম্যারাডোনাময় ঝলক। আমির রাহমানি যখন নিজেদের সীমানার কাছাকাছি জায়গা থেকে বলটা পাঠান তখন লুকাকু ছিলেন নিজেদের অর্ধে। এরপর দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নেন বলের নিয়ন্ত্রণ। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দারুণভাবে কাটান একজনকে এবং অন্যজনকে কাছে ঘেঁষতে না দিয়ে নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল পাঠান জালের ঠিকানায়।

এই দুই গোল কোনো না কোনোভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে ম্যারাডোনাকে। হ্যাঁ, অপ্রতিরোধ্য অলৌকিক সেই ম্যারাডোনা না হতে পারেন, কিন্তু তাঁর খানিকটা ছায়া যে ছিলই, তা বোধ হয় সবাই স্বীকার করবেন। এই দুই গোলই মূলত নিশ্চিত করে দেয় নাপোলির সব মিলিয়ে চতুর্থ এবং তিন মৌসুমের মধ্যে দ্বিতীয় লিগ শিরোপা জয়।

এই তো গেল মাঠের গল্প। মাঠের বাইরে গ্যালারিতে এবং পুরো শহর কাল ছিল ম্যারাডোনাময়। কাল ম্যাচের আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল নাপোলি সমর্থকদের উদ্‌যাপন। যার পুরোটাজুড়ে নাপোলি সমর্থকদের মুখে ছিল ম্যারাডোনা–গীত আর স্লোগান। শিরোপা জয়ের পর উদ্‌যাপনেও নানাভাবে নাপোলির খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা মনে করিয়ে দেন ম্যারাডোনার কথা। যা আবার জানিয়ে দিয়েছে ম্যারাডোনা–নাপোলি অবিচ্ছেদ্য, চিরন্তন।