বুয়েনস এইরেসেরই একটি মফস্সল শহর সান মার্তিন। মেসির শহর রোজারিও থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আটলান্টিকের পাশ ধরে গাড়ি চালালে সান মার্তিন থেকে রোজারিও যেতে ১৫ থেকে ২৫ মিনিট লাগে। সান মার্তিন আর রোজারিওর মধ্যে বিনি সুতার মালা গাঁথার চেষ্টা কেন? দুটি জায়গাকে যে এক সুতায় বেঁধেছে এবারের বিশ্বকাপে লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা দল!
আর্জেন্টিনা, তথা বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির জন্ম যে রোজারিওতে, তা আর এখন কাউকে বলে দিতে হয় না। সেখান থেকে একটু দূরে, ২০ কিলোমিটারের মতো এগিয়ে গেলেই মফস্সল শহর সান মার্তিন। সেখানে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে জন্ম এনজো ফার্নান্দেসের। সেই ফার্নান্দেস এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে মেসির সতীর্থ।
আমরা দুজন একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলে খেলছি—কাতার বিশ্বকাপে পা রাখার আগপর্যন্ত এটাই ছিল ফার্নান্দেসের একমাত্র সুখ! বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়ে বেনফিকার এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের সুখের সংজ্ঞাটা কিছুটা পাল্টেছে। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলছি, এটাই আমার গর্ব!’ আর এবার নতুন করে সুখের সংজ্ঞা লিখলেন ফার্নান্দেস—বিশ্বকাপে একটি গোল করার শৈশবের স্বপ্ন যে পূরণ হয়েছে তাঁর।
মেক্সিকোর বিপক্ষে কাল মেসির সঙ্গে একই ম্যাচে গোল করেছেন ফার্নান্দেস। ৬৪ মিনিটে বাঁ পায়ের মাটি–কামড়ানো এক শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। ৮৭ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করা গোলটি এসেছে বক্সের ভেতর থেকে ফার্নান্দেসের অসাধারণ বাঁকানো শটে। তাঁর এই গোলে সহায়তা মেসিরই।
ম্যাচ শেষে ফার্নান্দেস বলেছেন তাঁর স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কথা, ‘আমি সব সময়ই এই জার্সি পরে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। আজ আমার বিশ্বকাপে একটি গোল করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আজ খুব খুশি। এই দলের এটা প্রাপ্য।’
অথচ এই সান মার্তিনের ক্লাব লা রেকোভায় ফুটবলে হাতেখড়ি হওয়া ২১ বছর বয়সী ফার্নান্দেসের এই বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না। আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের মূল ভরসা জিওভান্নি লো সেলসো চোটে না পড়লে হয়তো বিশ্বকাপ দলে ডাকই পেতেন না কালকের আগপর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলা ফার্নান্দেস।
তা বিশ্বকাপে খেলা হলো, বিশ্বকাপে গোলও পেয়ে গেলেন। আগে থেকেই ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর নজরে আসা ফার্নান্দেসকে নিয়ে হয়তো এখন আরও বেশি মাতামাতি হবে। ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটে নাম লেখানো ফার্নান্দেসকে এ মৌসুমেই দলে ভেড়ায় পর্তুগালের দল বেনফিকা।