
একটা সময় ছিল, যখন পিএসজি মানে ছিল কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আর একরাশ আক্ষেপের গল্প। ঘরোয়া লিগে রাজত্ব থাকলেও ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব তাদের কাছে ছিল মরীচিকার মতো। তবে লুইস এনরিকে কোচ হওয়ার পর প্যারিসের সেই বিষণ্ন আকাশ বদলে গেছে। এনরিকে শুধু পিএসজির একজন কোচই নন, তিনি যেন প্যারিসের রাজা। আর সেই রাজাকে আজীবন প্যারিসের প্রাসাদে রেখে দিতে এবার নজিরবিহীন এক প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের বিদায়ের পর এনরিকে যখন পিএসজির দায়িত্ব নিলেন, চ্যালেঞ্জটা ছিল পাহাড়সম। কিন্তু স্প্যানিশ এই কোচ প্রমাণ করেছেন, সঠিক কারিগরের হাতে পড়লে সাধারণ পাথরও হয়ে উঠতে পারে হীরা! এনরিকের জমানায় পিএসজি এখন শুধু ইতিহাসই গড়ছে না, নিজেরাই এক ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
গত মৌসুমে পিএসজির ডাগআউটে বসে এনরিকে যা করেছেন, তা এককথায় রূপকথা। দশকের পর দশক যে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটার জন্য প্যারিস হাহাকার করেছে, সেটি এনে দিয়েছেন গত বছরই। সব মিলিয়ে ১৪৩ ম্যাচে এনরিকের জয় ৯৮টি, ড্র ২৬ আর হার মাত্র ১৯টিতে। জয়ের হার ৬৮.৫৩ শতাংশ। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা শুধু মাঠের খেলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, রূপ পেয়েছে ট্রফিতেও। সম্প্রতি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে চেলসির সাবেক ডিফেন্ডার ফিলিপ লুইসের ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গোকে হারিয়ে আরও একটা ট্রফি জিতেছে প্যারিসিয়ানরা। মাঝে শুধু চেলসির কাছে ক্লাব বিশ্বকাপে হারটা একটু খচখচানি হয়ে আছে। তারপরও সাম্প্রতিককালে সাফল্যে পিএসজির জুড়ি মেলা ভার।
এই সাফল্যের পুরস্কারও পাচ্ছেন এনরিকে। পিএসজির সঙ্গে ৫৫ বছর বয়সী কোচের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু পিএসজি এখনই তাঁকে আজীবনের জন্য বেঁধে ফেলতে চায়। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস জানাচ্ছে, ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে আগে কখনো দেখা যায়নি, এমন এক ‘লাইফটাইম কন্ট্রাক্ট’ বা আজীবন চুক্তির কথা ভাবছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা এনরিকের কাজে এতটাই মুগ্ধ যে তারা তাঁকে শুধু কোচ হিসেবে নয়, পিএসজির ভবিষ্যৎ পরিচয়ের প্রধান কারিগর মনে করছেন।
পিএসজির এই বদলে যাওয়ার রহস্য কী? এনরিকে ডাগআউটে আসার পর ক্লাবের সবাইকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—দলের চেয়ে বড় কেউ নয়। কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ার পর অনেকে ভেবেছিলেন, পিএসজি হয়তো খেই হারিয়ে ফেলবে, কিন্তু হয়েছে উল্টো। এনরিকে কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুরো দলকে একটি সুতায় গেঁথেছেন।
তাঁর অধীন কোনো ফাঁকিবাজি চলে না। যত বড় তারকাই হোক না কেন, অনুশীলনে ঢিলেমি করলে সোজা সাইডবেঞ্চে বসিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না। এই কঠোর অনুশাসনের ফলও পেয়েছেন। উসমান দেম্বেলে, যাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে একসময় অনেক প্রশ্ন ছিল, সেই দেম্বেলে এখন ব্যালন ডি’অর আর ফিফা বর্ষসেরার ট্রফিজয়ী! আবার ব্র্যাডলি বারকোলা বা খিচা কাভাস্কেইয়ার মতো প্রতিভাবানেরাও বুঝে গেছেন, মাঠে শতভাগ না দিলে জায়গা হবে বেঞ্চে।
পিএসজি আর এনরিকের এই বন্ধন যদি সত্যিই আজীবনের হয়, তবে ইউরোপীয় ফুটবলে রাজত্বের গল্পটাও হয়তো নতুন করে লেখা হবে।