ঘড়িতে তখন বিকেল ৫টা বেজে ৫০ মিনিট। জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটে আজারবাইজানের টিম বাস। তখনো মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত মালয়েশিয়ার নারী ফুটবল দল। বাস থেকে নেমেই সোজা স্টেডিয়ামের ভেতরে চলে যায় আজারবাইজান দল। এক খেলোয়াড়ের হাতে সাউন্ড বক্সে উচ্চ শব্দে র্যাপ সংগীত বাজছে। কয়েকজন সেই গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।
মিনিট দশেক পর দৃশ্যটা একটু বদলায়। স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে মালেয়েশিয়া দলের অনুশীলন শেষের অপেক্ষায় আজারবাইজান নারী ফুটবল দল। মিনিটে মিনিটে তাদের গতিবিধি পরিবর্তন হচ্ছে। মনে হলো, দাঁড়িয়ে থেকে কিছুটা বিরক্ত। ইনফিনিক্স ত্রিদেশীয় ফুটবল সিরিজে আগামীকাল দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে মালয়েশিয়া–আজারবাইজান। এর আগে আজ যেন অনুশীলনেই মুখোমুখি দুই দল।
মালয়েশিয়ার কোচ জোয়েল কর্নেলি হাত নেড়ে কিছু একটা বলতে চাইছেন। হয়তো তিনি তাঁর দলবল নিয়ে আরও কিছুক্ষণ অনুশীলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আজারবাইজানও মাঠে নামতে উন্মুখ। শেষ পর্যন্ত সাতটা বাজতেই তড়িঘড়ি করে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়েছে মালয়েশিয়া দলকে।
আজারবাইজানও সময়ক্ষেপণ না করে পশ্চিম পাশের ডাগআউটে বসে অনুশীলনে নামার আগের প্রস্তুতিটা সেরে নেয়। গান তখনো বাজছে। এরপর মাঠের অনুশীলন শুরু। গানের তালে তালে রানিং করছেন আজারবাইজানের মেয়েরা। প্রায় ৩০ মিনিট চলে গান ও অনুশীলন। এরপর মাঠে দাঁড়িয়ে টিম মিটিংটা সেরে নেন কোচ সিয়াসাত আসগারভ। অবশ্য মিটিং চলাকালে গানটা বন্ধই ছিল। এরপর আবার গান ছেড়েছেন। এর মধ্যেই বল নিয়ে কারিকুরি দেখান কয়েকজন ফুটবলার।
অবশ্য ৭টা ৩৫ মিনিটের পর আর তাঁদের অনুশীলন দেখার সুযোগ হয়নি গণমাধ্যমকর্মীদের। এমন আনন্দ নিয়ে অনুশীলন করা আজারবাইজানের ফুটবলে উত্থানের গল্পেও রোমাঞ্চ কম নেই। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক তাদের। এর পর থেকে খুব বেশি টুর্নামেন্ট না খেললেও উন্নতির গ্রাফটা ঈর্ষণীয়। তিন বছরের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৫৫ নম্বর অবস্থানটা নিজেদের করে নেয় উয়েফার সদস্য দেশটি। বর্তমানে একটু কমে র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ৭৪।
এই অল্প সময়ে দলটির পারফরম্যান্সও দারুণ। ২০০৯ ইউরো বাছাইয়ে নাম লিখিয়ে এস্তোনিয়াকে হারায় আজারবাইজান। ২০১১ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বিশ্ব দেখেছে তাদের চমক, শক্তিশালী ওয়েলসকে হারানোর পর ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি বেলজিয়ামের পয়েন্টে ভাগ বসায়। এর আগে ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে পয়েন্ট কেড়ে নেয় দলটি।
আজারবাইজানের এমন পথচলার সঙ্গী দলটির অধিনায়ক সেভিঞ্জ জাফারজাদে বলেছেন এতটা পথ পাড়ি দিতে কতটা লড়াই করতে হয়েছে, ‘আমি জানি আপনাদের (বাংলাদেশের) একটি ভালো দল আছে। এটা ভেবে আমি খুব খুশি যে আপনারা নারী ফুটবলের জন্য চেষ্টা করছেন। কিছু মুসলিম দেশে এটা খুব কঠিন। মানসিকতা কিংবা নানা কারণে। আমার দেশেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন, আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছু বদলে গেছে, কারণ আমরা ইউরোপে ভালো ফল দিচ্ছি।’ তাঁদের ঘরোয়া লিগও বেশ শক্তিশালী। অল্প সময়ে দলটি এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এই লিগ ব্যবস্থার অবদানও কম নয়।