প্রিমিয়ার লিগ: ৯০ মিনিটের পরেই এবার সবচেয়ে বেশি নাটক

ম্যাচের শেষ দিকে আর কিছু হবে না ভেবে গ্যালারি ছেড়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে অনেক দর্শকেরই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কত ভাগ দর্শক এ রকম ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে যান, সেটার কোনো পরিসংখ্যান নেই ফুটবলের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান অপ্টার কাছে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত, সেই পরিসংখ্যান যদি থাকত, দেখা যেত, এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে শেষ বাঁশি বাজার আগে দর্শকের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার হার সবচেয়ে কম। কারণ, ২০২৫-২৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে অতীতের যেকোনো মৌসুমের তুলনায় শেষ মুহূর্তে গোল বেশি হচ্ছে, বিশেষ করে ৯০ মিনিটের পরে। আর এসব গোলে ম্যাচের ফল বদলে যাওয়ার হারও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।

অপ্টা বলছে, সর্বশেষ কয়েক বছর ধরেই প্রিমিয়ার লিগে যোগ হওয়া সময়টা একটু বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে খেলোয়াড়দের সময় নষ্ট করার অভ্যাস ঠেকাতে যোগ হওয়া সময় বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয় রেফারিদের। ফলে দেখা যাচ্ছে, ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে দেরিতে হওয়া ১০টি গোলের ৭টিই এসেছে ২০২৩-২৪ মৌসুম বা এর পরে।

এখন তাই দর্শকেরাও জানেন, ম্যাচের ঘড়ি ৯০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও যোগ হওয়া সময় এমনকি ১২-১৩ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। ফলে তাঁরাও প্রিয় দল নিয়ে আশায় বুক বাঁধেন—দলটা হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে। শেষ মুহূর্তে গোলের রোমাঞ্চবঞ্চিত হতে চান না বলে এখন দর্শকেরা মাঠে থাকছেন শেষ পর্যন্ত। আর এই মৌসুমে সেই রোমাঞ্চবঞ্চিত হওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি, কারণ প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে ৯০ মিনিটের পর হওয়া গোলে ম্যাচ নিষ্পত্তি হওয়ার হারও যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি।

প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল এ মৌসুমে বেশি দেখা যাচ্ছে

এবার এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের প্রতিটা ম্যাচ হয়েছে গড়ে ১০০ মিনিটের মতো। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসেই যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে দীর্ঘ ম্যাচগুলো হয়েছিল ২০২৩-২৪, যখন সময় নষ্টের নিয়ম প্রথম বদলানো হয়েছিল। সেবার প্রতিটি ম্যাচ হয়েছিল গড়ে ১০১ মিনিটের মতো।

তবে গড় হিসাবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই মৌসুমে দেরিতে গোল বেশি দেখা যাচ্ছে। এখন প্রতি ২.৯ ম্যাচে একটি করে গোল হচ্ছে ৯০ মিনিটের পর, যা ২০২৩-২৪ মৌসুমের (প্রতি ৩.৪ ম্যাচে একটি) চেয়েও বেশি। অবশ্য এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র সাতটি রাউন্ড গেছে। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা তাই কঠিন। তবে এই ধারা থাকলে এবার প্রিমিয়ার লিগে ৯০ মিনিটের পর হওয়া গোলের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোল (১২৪৬) হয়েছিল, গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩.২৮টি। সেবার ম্যাচগুলোর গড় সময় যেহেতু বেশি ছিল, তাই বেশি গোল হয়েছে, এই ব্যাখ্যাতে সহজেই আসা যায়। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে গড়ে হচ্ছে মাত্র ২.৬ গোল—১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। গোলের হার কম হলে ৯০ মিনিটের পর গোলও কম হওয়ার কথা। কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো।

শেষ মুহূর্তে গোল করার আনন্দে ভেসেছে এভারটনও

এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সব গোলের ১৩.২ শতাংশ এসেছে ৯০ মিনিটের পর—প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে যে হারটা সবচেয়ে বেশি। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০২৩-২৪ মৌসুমে, সেটাও এবারের চেয়ে  ৪.২ শতাংশ কম।

কেন এমন হচ্ছে—এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। মোট গোল কম, অথচ শেষ মুহূর্তের গোল বাড়ছে কেন?

হয়তো এখনো মৌসুমের শুরুর দিক বলেই এমন। আবার হতে পারে, দলগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট। বড় দলগুলোর গভীর স্কোয়াড আছে, ফলে পাঁচটি বদলির নিয়ম কাজে লাগাতে পারছে ভালোভাবে। হয়তো খেলার গতি এতটাই তীব্র যে যাঁরা রক্ষণে খেলছেন এবং বদলি হননি, তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন শেষ দিকে।

আরেকটা বড় বিষয়—এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের প্রায় সব দলই বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে সেট পিসে। হয়তো ক্লান্ত রক্ষণভাগ এই তৈরি করা পরিকল্পিত সেট পিস সামলাতে পারছে না। তাই সেট পিস থেকে ৯০ মিনিটের পর গোল বেড়েছে—২০২৪-২৫ মৌসুমে প্রতি ১৫ ম্যাচে ছিল এক গোল, আর এবার প্রায় প্রতি ১০ ম্যাচে একটা।

আরেকটা ব্যাখ্যা হতে পারে, মোট গোলের হার কমে যাওয়ায় ম্যাচগুলো এখন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে তাই ঝুঁকি নিয়ে জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে দলগুলো।

এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ২৪টি গোল হয়েছে ৯০ মিনিটের পর। এর মধ্যে ১০টি গোল ড্র ম্যাচকে পরিণত করেছে জয়ে—৪১.৭ শতাংশ, যা প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সবচেয়ে অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান হলো—মৌসুমের মোট ম্যাচের ১৪.৩ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে ৯০ মিনিটের পরে হওয়া গোলে। প্রিমিয়ার লিগের পুরো ইতিহাসে এমন হয়নি। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭.১ শতাংশ—২০২৩-২৪ মৌসুমে।

এই মৌসুমেই লিভারপুল দুইবার ৯০ মিনিটের পরে হওয়া গোলের দুই রকম স্বাদ পেয়েছে। তারা নিউক্যাসলকে ৩-২ এবং বার্নলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে যোগ হওয়া সময়ে গোল দিয়ে। আবার ক্রিস্টাল প্যালেস ও চেলসির কাছে ২-১ গোলে হেরেছে শেষ মিনিটে গোল হজম করে।

নিউক্যাসলের বিপক্ষে ৯৬ মিনিটে গোল করেন আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মাগালাইস

আর্সেনালও গ্যাব্রিয়েল মাগালাইসের ৯৬ মিনিটের গোলে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষেও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র করেছে। সিটি অবশ্য এখনো ৯০ মিনিটের পরে কোনো জয়সূচক গোল করতে পারেনি। তারা তেমন কিছু করতে পারলে হয়তো শিরোপার লড়াইয়ে আরও ভালোভাবে ফিরতে পারবে। আবার লিভারপুলের দুটি শেষ মুহূর্তের জয়সূচক গোল না পেলে এখন যেমন শীর্ষ স্থানের খুব কাছাকাছি আছে, হয়তো সেটা থাকত না।