রাকিবের পাস দেওয়ার সেই মুহূর্ত
রাকিবের পাস দেওয়ার সেই মুহূর্ত

‎‘হামজা সত্যিকারের নেতা’, জাদুকরি পাসটা অনেক দিন মনে থাকবে রাকিবের

‎বাঁ প্রান্ত ধরে বল নিয়ে ছুটছেন রাকিব হোসেন। তাঁকে আটকাতে মরিয়া ভারতের তিন ফুটবলার। কিন্তু পারলেন না। বক্সের পাশ থেকে তাঁর নিখুঁত পাস, ডান দিক থেকে দৌড়ে আসা শেখ মোরছালিন বলটা জালে ঠেলে দিয়েই রাকিবকে নিয়ে উদ্‌যাপন মাতলেন। ততক্ষণে ২২ হাজার দর্শকের চিৎকারে প্রকম্পিত পুরো জাতীয় স্টেডিয়াম।

গতকাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে হারানো সেই গোলের মুহূর্তটা চাইলেও ভুলতে পারবেন না রাকিব। কারণ, এটা তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পাস।‎

২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক রাকিবের। এর পর থেকে বহু জয়ের সাক্ষী হয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে ৪৯ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল। পাশাপাশি ৫ গোলে সহায়তা।

‎কিন্তু গতকাল ভারতের বিপক্ষে যে গোল বানিয়ে দিয়েছেন সেটার গুরুত্ব তাঁর কাছে অনেক, ‘এই পাসটা আমার অনেক দিন মনে থাকবে। একটা গোল করার পর যতটা না ভালো লাগে, কাল ঠিক ততটাই খুশি লেগেছে।’

গোলের পর মোরছালিনের সঙ্গে উদ্‌যাপন রাকিবের

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আগের চার ম্যাচ জিততে জিততেও হয়নি। ভারতকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে সবাই দারুণভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ম্যাচের আগের রাতে টিম হোটেলেও খেলোয়াড়দের সবার কথা হয়। একটাই পণ ছিল—জিততেই হবে।

‎রাকিব আজ প্রথম আলোকে সেই মুহূর্তগুলোর কথাই বলেছেন, ‘আমরা ম্যাচের আগে সবাই কথা বলি। টিম হোটেলেও কথা হয়। সবার কমিটমেন্ট ছিল যত কষ্টই হোক, পরিশ্রম করে লড়াই করে হলেও ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই সেই কথা রেখেছে। শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ছে। এটাই তৃপ্তির জায়গা।’

‎গত ২৫ মার্চ শিলং থেকে দেশের ফুটবলের যে নবযাত্রা শুরু, তার পূর্ণতা এসেছে এই জয়ে। এর পেছনে বড় অবদান হামজা চৌধুরীর। পুরো দলকে উজ্জীবিত করার কাজটা নিয়মিত করছেন তিনি।

‎রাকিবের কাছে হামজা সাধারণ একজন সতীর্থ নন, সত্যিকারের নেতাও, ‘হামজা শুধু আমাদের টিমমেট নন, তিনি নেতাও। তিনি সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা দেন। ভারত ম্যাচের আগেও সাহস জুগিয়েছেন। কেউ ভুল করলেও সাপোর্ট দেন।’

দেশের ফুটবল নিয়ে, হামজাকে ঘিরে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। আগামী চার মাসের জন্য সেই উন্মাদনায় খানিকটা বিরতি পড়তে পারে। কেননা বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ আগামী ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে।

বাংলাদেশ দলে অন্যতম দ্রুততম ফুটবলার রাকিব (পেছনের সারিতে বাঁ থেকে তৃতীয়)

‎দুই হলুদ কার্ড দেখায় সেই ম্যাচ খেলা হবে না রাকিবের। না খেললেও বাংলাদেশের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী এই উইঙ্গার, ‘দুই হলুদ কার্ড দেখায় আমি সিঙ্গাপুর ম্যাচে খেলতে পারব না ৷ আমি না থাকলেও আশা করি সেই ম্যাচেও তিন পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ।’

‎শুধু রাকিব নয়, দুই হলুদ কার্ড দেখায় সিঙ্গাপুর ম্যাচ খেলা হবে না তপু বর্মণের। এ বছর সব মিলিয়ে আটটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে দুটি। তার মধ্যে ভারতকে হারানোই বড় প্রাপ্তি। কেননা এই জয়ে ২২ বছরের অপেক্ষার অবসানও হয়েছে।

‎রাকিব তাই এই জয়কে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার কথাই বলছেন, ‘এ বছর আমরা সব কটি ম্যাচ ভালো খেলেছি। কিছু ভুলত্রুটির জন্য হয়তো জিততে পারিনি। সবাই একটা জয়ের অপেক্ষায় ছিল। শেষ পর্যন্ত জয়টা পেলাম। এখন আর পেছনে ফেরার সময় নেই। এগিয়ে যেতে হবে। বলতে পারেন এটা আমাদের নতুন শুরু।’