
ইন্টার মিলান ছেড়ে ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেন আশরাফ হাকিমি। কিলিয়ান এমবাপ্পে তখন প্যারিসের এই ক্লাবে। হাকিমি ফরাসি ভাষা জানতেন না। এমবাপ্পে একটু একটু স্প্যানিশ পারতেন, যেটা হাকিমির জানা ছিল রিয়াল মাদ্রিদে খেলার কল্যাণে। ব্যস, ভাষা নিয়ে সমস্যার সমাধানে শুরু হলো দুজনের বন্ধুত্ব। হাকিমিকে ফরাসি ভাষায় দক্ষ করতে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। বন্ধুত্বের দাবি মেনে হাকিমির প্রতি এমবাপ্পের সেই সাহায্যের হাত আজও বর্তমান।
রাবাতে মৌলে আবদেল্লাহ স্টেডিয়ামে গতকাল রাতেও যেমন দেখা গেল। ৬৪,৮৪৪ জন দর্শকের মধ্যে ছিলেন এমবাপ্পেও! এবার অবশ্য সাহায্য নয়, বন্ধুর প্রতি সমর্থনের দাবি মিটিয়েছেন এমবাপ্পে। মানসিক দিক বিচারে সেটাও তো একরকম সাহায্যই! গ্যালারি থেকে বন্ধুবান্ধবের সমর্থন সব সময়ই প্রেরণাদায়ক। কিন্তু হাকিমি ও তাঁর সতীর্থরা মরক্কোর হয়ে প্রেরণাটুকু কাজে লাগাতে পারেননি। র্যাঙ্কিংয়ে ৪২ ধাপ পিছিয়ে থাকা মালির সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করে স্বাগতিক মরক্কো।
পয়েন্ট ভাগাভাগিতে মরক্কোর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিশ্ব রেকর্ড গড়া টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের দৌড়ও থামল। গত বছর জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জাম্বিয়াকে হারিয়ে জয়যাত্রা শুরু করেছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১১তম দলটি। এ পথে গত ১৪ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কঙ্গোকে হারিয়ে স্পেনের টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড (১৫ ম্যাচ—জুন ২০০৮ থেকে জুন ২০০৯) নিজেদের করে নেন হাকিমিরা। সেটা ছিল মরক্কোর টানা ১৬তম জয়। এরপর আরও তিনটি ম্যাচ জিতেছে মরক্কো। সব মিলিয়ে টানা ১৯ ম্যাচ জয়ের পর গতকাল রাতে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের গ্রুপ পর্বে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে থামল এই জয়রথ।
হাকিমির ২ নম্বর জার্সি পরে গ্যালারি থেকে মরক্কো দলকে সমর্থন দেন রিয়ালের ফরাসি তারকা এমবাপ্পে। যদিও চোট কাটিয়ে পুরো ফিট হতে না পারায় এ ম্যাচের স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামা হয়নি পিএসজি তারকা হাকিমির। বেঞ্চে বসেছিলেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’ জানিয়েছে, হাকিমিই স্বয়ং তাঁর বন্ধু এমবাপ্পেকে ম্যাচটি দেখার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। বিইন স্পোর্টস জানিয়েছে, বন্ধুর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এমবাপ্পে তাঁর ফুটবলার ভাই এবং বাবা–মাকেও নিয়ে এসেছিলেন।
গ্যালারিতে বসে তাঁরা দেখলেন, দুটি পেনাল্টিতে নির্ধারিত হলো ম্যাচের ভাগ্য। যেখানে পেনাল্টি থেকে গোলে প্রথমার্ধ শেষে ১–০ গোলে এগিয়ে ছিল মরক্কোই। জিতলেই শেষ ষোলোর নকআউট পর্বে ওঠা নিশ্চিত হতো তাদের। কিন্তু ৬৪ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি থেকে করা গোলে সমতায় ফেরে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৫৩তম মালি। শেষ ষোলোয় ওঠার অপেক্ষা আরও বাড়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি স্বাগতিক দর্শকেরা। হাকিমিরা মাঠ ছাড়ার সময় দুয়োধ্বনি শোনেন।
যদিও প্রথমার্ধে পরিস্থিতি তেমন ছিল না। বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন ব্রাহিম দিয়াজ–হাকিমিরা। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে মালির লেফট ব্যাক নাথাম গাসামা নিজেদের বক্সে হ্যান্ডবল করায় পেনাল্টি পায় মরক্কো। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) এ সিদ্ধান্ত দেন। স্পটকিক থেকে গোল করেন মরক্কোর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রাহিম দিয়াজ।
মালির পেনাল্টি পাওয়ার সিদ্ধান্তটিও দিয়েছে ভিএআর প্রযুক্তি। মালি ফরোয়ার্ড লাসিনে সিনায়োকোকে ফাউল করেন মরক্কোর ডিফেন্ডার জাওয়াদ এল ইয়ামিক। মাঠের রেফারি আবদেল মেফির এ যাত্রায়ও প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি। ভিএআরের হস্তক্ষেপে রেফারি মাঠের পাশে মনিটরে রিপ্লে দেখে তারপর পেনাল্টি দেন। স্পটকিক থেকে গোল করে মালিকে সমতায় ফেরান সিনায়োকো। জিততে না পারলেও টানা ২২ ম্যাচে অপরাজিত রইল মরক্কো। সর্বশেষ তারা হেরেছিল ২০২৩ সালে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসেই শেষ ষোলোয়।
২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে মরক্কো। সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে মালি। আগামী সোমবার জাম্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচ খেলবে মরক্কো। জিতলেই শেষ ষোলোর টিকিট পাবে ওয়ালিদ রেগারাগুইয়ের দল। ম্যাচ শেষে মরক্কোর মিডফিল্ডার আজ্জেদিন ওউনায়ি বলেন, ‘একই মানসিকতা নিয়ে আমরা তৃতীয় ম্যাচটি খেলব এবং সেটা হলো জয়। শীর্ষে উঠে গ্রুপ পর্ব শেষ করব।’
এই গ্রুপ থেকে অন্য ম্যাচে কমোরোসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে জাম্বিয়া। এর আগে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১–০ গোলে হারায় মিসর এবং জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করে অ্যাঙ্গোলা।