ফুটবলের ‘এক গ্রেটকে নিয়ে অসাধারণ তথ্যচিত্র, যিনি গ্রেটেস্ট হতে পারতেন’—আইএমডিবিতে এক দর্শকের মন্তব্য। আবার লেটারবক্সডে এক দর্শকের ভিন্নমত, ‘তথ্যচিত্রটি রোনালদোর ব্যক্তিত্বে ডুব দিতে পারেনি, যতটা কাভার করেছে তাঁর ক্যারিয়ার।’
পরিচালক ও প্রযোজক ডানকান ম্যাকম্যাথ বার্সেলোনার সমর্থক। পেপ গার্দিওলার সর্বজয়ী বার্সেলোনা (২০০৮–২০১২) নিয়ে তাঁর তথ্যচিত্র ‘টেক দ্য বল, পাস দ্য বল’ (২০১৮) ভালো প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এরপর তিনি মন দিলেন রোনালদোতে। ২০২১ সালে বানালেন ‘এল প্রেসিদেন্তে’—রোনালদোর ক্লাব রিয়াল ভায়াদোলিদ নিয়ে। পরের বছর বের করলেন ‘দ্য ফেনোমেনন’, যেখানে বিষয়বস্তু রোনালদো নিজেই।
আইএমডিবির সেই মন্তব্য যেমন সত্যি, তেমনি লেটারবক্সডের কথাটাও মানতে হয়। ডানকানের ‘দ্য ফেনোমেনন’-এ অনেকের শৈশবের নায়কের পুরো ক্যারিয়ার আছে। সাফল্য, ব্যর্থতা—সবই এসেছে যত্নের সঙ্গে। কিছু মুহূর্তের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নষ্টালজিক, আবেগতাড়িত করে। প্রচুর ফুটেজও আছে। তবে নামের মতো করে রোনালদোর মনোজগতে আলো ফেলা হয়েছে খুব অল্পই।
রোনালদো লুইস নাজারিও দি লিমাকে নিয়ে আমরা যা জানি, তার সবই আছে এই তথ্যচিত্রে। নতুন লাগতে পারে এমন কিছু তথ্যও আছে। যেমন ধরুন, বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে চোট থেকে ফেরা রোনালদোর ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলা দরকার ছিল। কিন্তু ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন কোচ হেক্টর কুপার তাঁকে খেলাতে গড়িমসি করেছিলেন। আবার ২০০২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তুরস্কের বিপক্ষে তাঁর সেই বিখ্যাত ‘টো পোক’ গোল—আসলে পায়ের ভেতরের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। চোট পেয়েছিলেন। তাই দূর থেকে ওই অদ্ভুত শট নিতে হয়েছিল।
তথ্যচিত্রে এমন দারুণ সংযোজন আছে। কিন্তু ’৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগমুহূর্তে রোনালদো ঠিক কী কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কেন খিঁচুনি উঠেছিল—এসব প্রশ্নের নতুন কোনো উত্তর নেই। রোনালদো নিজে এত দিন যা বলেছেন, তাই আবার বলেছেন। খাওয়াদাওয়ার পর একটু ঘুম এসেছিল, তারপর কী হয়েছে, তাঁর মনে নেই। রুমমেট রবার্তো কার্লোসের বয়ানও আছে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ার আগে কী ভাবছিলেন, আগের কিছুদিন ধরে তাঁর মনে কী চলছিল—এসব নিয়ে কোনো আলাপ নেই। প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নিয়ে ফাইনালে খেলার গল্প আছে। কিন্তু তিনি না খেললে ব্রাজিল দলের জন্য ভালো হতো কি না—সে প্রশ্ন তোলা হয়নি। ঘটনার এক পাশটাই বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ৩ অক্টোবর তথ্যচিত্র মুক্তির সময় ডিএজেডএনের ওয়েবসাইটে রোনালদো বলেছিলেন, ‘এটা বানানো আমার জন্য আবেগের সঙ্গে স্বস্তিদায়ক অভিজ্ঞতাও। এই তথ্যচিত্রে আমার জীবনের সত্যিকার ও সৎ প্রতিফলন আছে। একদম হৃদয় থেকে বানানো। সবকিছু নিয়েই বলা হয়েছে, কিছুই বাদ পড়েনি।’
কথাটা মিথ্যা নয়। রোনালদোর শৈশবের গল্প বলেছেন তাঁর মা। ব্রাজিল দলে শুরুর দিকটা বলেছেন বেবেতো ও রোমারিও। বার্সেলোনার গল্প বলেছেন গার্দিওলা। জিনেদিন জিদান আর পেলে তাতে যোগ করেছেন বাড়তি মণিকাঞ্চন। জিদানের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরু, রিয়াল মাদ্রিদের দিনগুলো, মারাত্মক দুটো চোট আর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জয়—সবই দেখানো হয়েছে রূপকথার মতো করে।
তবে ভক্তরা যদি জানতে চান, গোলকিপারকে একা সামনে পেলেই কোন জাদুবলে ‘ফেনোমেনন’ হয়ে উঠতেন রোনালদো—সেই উত্তর নেই। ওয়ান-ওয়ান পরিস্থিতিতে তাঁর শরীর ও মনে কী চলত, তা বলা হয়নি। কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপে তাঁর সেই বিখ্যাত চুলের ছাঁটের গল্প আছে। অদ্ভুত সেই ছাঁটটা কেন দিয়েছিলেন, তার উত্তরও আছে। যদি ভেবে থাকেন ফ্যাশনসেন্স থেকে, তাহলে ভুল করবেন। এসব জায়গায় তথ্যচিত্রটি একদমই আলাদা। অসাধারণ।
দ্য ফেনোমেনন (২০২২):
পরিচালক: ডানকান ম্যাকম্যাথ
চিত্রনাট্য: ডানকান ম্যাকম্যাথ
আছেন যাঁরা: রোনালদো নাজারিও, জিনেদিন জিদান, পেলে, রোমারিও, পাওলো মালদিনি, গ্যারি লিনেকার।
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৬/১০
রানটাইম: ১ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট