
কী এমন বয়স তাঁর! মাত্র ১৮। এই বয়সে কিশোরেরা স্বপ্ন দেখে বড় কিছু হওয়ার, বড় কিছু করার। লামিনে ইয়ামাল অবশ্য এই বয়সেই একের পর এক বড় বড় কীর্তি গড়ে চলেছেন। বলা যায়, এখনই তিনি বার্সেলোনা আর স্প্যানিশ ফুটবলের নতুন রাজপুত্র। একদিন তিনি ফুটবল–বিশ্ব শাসন করবেন, হবেন লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো কিংবদন্তি, এমন বাজি ধরার মানুষেরও অভাব নেই। ফুটবলবোদ্ধারাও বলছেন, বিশ্বসেরা হওয়া ইয়ামালের জন্য স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
তবে এই আলোচনার মধ্যেও ইয়ামালকে নিয়ে বিতর্ক কম নয়। মাঠে গোল করা আর মাঠের বাইরে মন দেওয়া-নেওয়া—দুটোর ভারসাম্য রাখা যে কত কঠিন, সেটা বার্সেলোনার এই বিস্ময়বালক এখনই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। কখনো ইনফ্লুয়েন্সার অ্যালেক্স প্যাডিলা, কখনো আবার আর্জেন্টিনার পপ তারকা নিকি নিকোল—ইয়ামালকে নিয়ে কত গুঞ্জন! সর্বশেষ খবর হলো, নিকি নিকোলের সঙ্গে সেই ‘বসন্তের দিন’ ফুরিয়ে গেছে। ইয়ামাল নিজেই নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা আর একসঙ্গে নেই।
ইয়ামাল ও নিকির প্রেমের শুরুটা ছিল অনেকটা সিনেমার মতো। গত জুলাইয়ে ইয়ামালের ১৮তম জন্মদিনে আর্জেন্টিনা থেকে বার্সেলোনায় উড়ে গিয়েছিলেন নিকি। এর পর থেকে বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায়ই তাঁকে দেখা যেত। চ্যাম্পিয়নস লিগে অলিম্পিয়াকোসের জালে বল জড়িয়ে গ্যালারির দিকে ইয়ামালের সেই ‘ফ্লাইং কিস’ তো এখনো সমর্থকদের চোখে লেগে আছে। সবাই ধরে নিয়েছিল, ওটা নিকির জন্যই ছিল।
দুজনের সোশ্যাল মিডিয়া ছিল রঙিন সব ছবিতে ঠাসা। কখনো রোমান্টিক ডিনার, কখনো ক্রোয়েশিয়ার নীল জলরাশির ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ানো। গত সেপ্টেম্বরে এক ফ্যাশন ইভেন্টে নিকি তো লাজুক হেসে বলেই ফেলেছিলেন, ‘আমি প্রেমে মজে আছি, খুব সুখে আছি। ইয়ামাল আমাকে কাতালান ভাষায় “আই লাভ ইউ” বলা শিখিয়েছে।’
কিন্তু অক্টোবর আসতেই নীল আকাশে মেঘ জমল। স্প্যানিশ ট্যাবলয়েডগুলো খবর রটাল, ইয়ামাল নাকি মিলানে গিয়ে চুপিচুপি অন্য কারও সঙ্গে দেখা করেছেন। ইতালিয়ান এক ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গেল। তবে ১৮ বছরের তরুণ ইয়ামাল কিন্তু মাঠের মতো মাঠের বাইরেও বেশ চটপটে। টেলিভিশন পর্দায় এসে সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে অন্য কেউ নেই। আমি কারও সঙ্গে কোনো লুকোচুরি করিনি। বিচ্ছেদ হয়েছে বলেই আমি একা মিলানে গিয়েছিলাম।’
ইয়ামালের এই প্রেম-বিচ্ছেদের নাটকের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন এসি মিলান ও আতলেতিকো মাদ্রিদের সাবেক পর্তুগিজ উইঙ্গার পাউলো ফুত্রে। তাঁর মতে, ইয়ামালই হবেন আগামীর বিশ্বসেরা, তবে একটা শর্ত আছে। শর্তটা বেশ অদ্ভুত—ইয়ামালের নাকি দ্রুত একজন স্থায়ী ‘গার্লফ্রেন্ড’ খুঁজে নেওয়া দরকার!
স্প্যানিশ একটি টেলিভিশনে ইয়ামালকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফুত্রে যুক্তি দেখিয়েছেন, একজন দায়িত্বশীল স্থায়ী জীবনসঙ্গী থাকলে খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি পেশাদার হয়ে ওঠেন। নিজের উদাহরণ টেনে ফুত্রে বলেন, ‘আমার সন্তানদের মায়ের সঙ্গে যখন পরিচয় হলো, তখন থেকেই আমি শতভাগ ফুটবলার হয়ে উঠলাম। অকারণে বাইরে আড্ডা দেওয়া কমিয়ে দিলাম। ড্রেসিংরুমে আমার গুরুত্ব বেড়ে গেল, কারণ আমি দায়িত্বশীল হতে শিখেছিলাম।’
ফুত্রের দাবি, মনের মাঝে যদি একান্ত আপন কেউ থাকে, তবে মাঠের বাইরের মন হুটহাট বিচলিত হয় না।
এখন দেখার অপেক্ষা, পাউলো ফুত্রের এই ‘দাওয়াই’ মেনে ইয়ামাল কি কোনো স্থায়ী বন্ধনে জড়ান, নাকি ‘একলা চলো’ নীতিতে কাটিয়ে দেন জীবন!