ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ জয়

ফুটবল গোলের খেলা—এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং ক্লিশে কথাগুলোর একটি এটি। কিন্তু কখনো কখনো ফুটবলে এত বেশি গোল হয় যে কথাটিকে আর ক্লিশে লাগে না। শীর্ষ স্তরের ফুটবলে কোনো কোনো ম্যাচে এত গোল হয়েছে যে স্কোরলাইন প্রথমবার দেখলে অবিশ্বাস্যই মনে হবে। যেমন শীর্ষ স্তরের পেশাদার ফুটবলে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডটি ৩৬–০ গোলের। অবিশ্বাস্যই বটে! ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ফুটবল ইলাস্ট্রেটেড’ খুঁজে বের করেছে পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ জয়ের গল্প...

চীন ১৯: ০ গুয়াম

জানুয়ারি, ২০০০

আন্তর্জাতিক ফুটবলে তেতো অভিজ্ঞতা গুয়ামের (যুক্তরাষ্ট্রের এক স্বশাসিত অঞ্চল) জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু চীনের বিপক্ষে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে থং নট স্টেডিয়ামে নির্মম এক ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল তাদের। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের সেই ম্যাচে তারা একে একে হজম করেছিল ১৯ গোল। সেই সময় গুয়ামের কোচ ছিলেন নিউক্যাসলের সাবেক গোলরক্ষক উইলি ম্যাকফাউল। কিন্তু দলটি সে অর্থে পেশাদার ছিল না। খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ক্যাশিয়ারসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করা লোকজন। তাঁদের পক্ষে চীনের দাপট সামাল দেওয়ার কোনো সামর্থ্যই ছিল না। তবে সেটি ছিল গুয়ামের ধারাবাহিক বড় হারের কেবল শুরু।

ইরান ১৯: ০ গুয়াম

নভেম্বর, ২০০০

এবারও শিকার সেই গুয়াম। হারের ব্যবধানও একই রকম ১৯–০। তবে প্রতিপক্ষ ছিল ভিন্ন। চীনের কাছ থেকে হারের ১০ মাস পর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ইরানের কাছেও গুয়াম হারে ১৯–০ গোলের ব্যবধানে। সেবারও হারের সময় গুয়ামের ডাগআউটে ছিলেন উইলি ম্যাকফাউল।

কুয়েত ২০: ০ ভুটান

ফেব্রুয়ারি, ২০০০

২০০০ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ১৯ গোল হজম করেছিল গুয়াম। তাদের সেই কষ্ট এক মাস পরই কিছুটা কমিয়ে দেয় ভুটান। কুয়েতের কাছে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে ভুটান হেরেছিল ২০–০ ব্যবধানে। কুয়েতের বিপক্ষে সেই ম্যাচের মাত্র দুই দিন আগে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আগমন ঘটে ভুটানের। কিন্তু নবাগত দলটিকে কোনো ছাড় দেয়নি কুয়েত। কুয়েত সিটিতে সেদিন গুনে গুনে ২০ বার ভুটানের জালে বল জড়ায় তারা। এমনকি কুয়েতের গোলরক্ষক আহমাদ জাসিমও পেনাল্টি থেকে গোল করেন সেদিন।

গুয়াম ০: ২১ উত্তর কোরিয়া

মার্চ, ২০০৫

সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়া দলের তালিকায় ৭ নম্বরেও সেই গুয়ামের নাম। ১৯ গোল খাওয়ার প্রায় ৫ বছর পর ২০০৫ সালের মার্চে তাইপেতে উত্তর কোরিয়ার কাছে গুয়াম হজম করে ২১ গোল। পূর্ব এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের সেই ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্য ছিল গোল ব্যবধান বাড়ানোর। এই ম্যাচের আগে প্রতিযোগিতায় তারা হংকংয়ের চেয়ে ১৮ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। যে কারণে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে উত্তর কোরিয়া। শেষ পর্যন্ত হংকংয়ের সঙ্গে ব্যবধান মেটানোর পথে উত্তর কোরিয়া গোল করে ২১টি। সেই ম্যাচটি ছিল গুয়ামের গোলরক্ষক জোসেফ লানানের অভিষেক ম্যাচ। ৮ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে লানান সব মিলিয়ে হজম করেন ৭৯ গোল।

টোঙ্গা ০: ২২ অস্ট্রেলিয়া

এপ্রিল, ২০০১

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল টোঙ্গা ও অস্ট্রেলিয়া। ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে টোঙ্গার জালে অস্ট্রেলিয়া বল জড়ায় ২২ বার। ম্যাচে কভেন্ট্রি সিটির স্ট্রাইকার জন অ্যালোইসি একাই করেন ৬ গোল।

প্রেস্টন নর্থ অ্যান্ড ২৬: ০ হাইডে

অক্টোবর, ১৮৮৭

১৮৮৭–৮৮ মৌসুমের এফএ কাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংলিশ ক্লাব প্রেস্টন নর্থ অ্যান্ড এবং হাইডে। সেই ম্যাচে পাত্তাই পায়নি ম্যানচেস্টারের পুঁচকে ক্লাব হাইডে। প্রতিপক্ষ প্রেস্টন একে একে বল জালে জড়ায় ২৬ বার। এক ম্যাচে ২৬ গোল করেও প্রেস্টন অবশ্য ট্রফি জিততে পারেনি। ফাইনালে ২–১ গোলে হেরে যায় ওয়েস্ট ব্রমউইচের কাছে।

তাহিতি ৩০: ০ কুক আইল্যান্ড

সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

সাউথ প্যাসিফিক গেমস মূলত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অলিম্পিকের মতো। যেখানে তিরন্দাজ, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, সাইক্লিং, ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে এই প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল তাহিতি। ফুটবল ইভেন্টের গ্রুপ পর্বে কুক আইল্যান্ডকে সামনে পেয়ে রীতিমতো গোল উৎসবে মাতে তাহিতি। সব মিলিয়ে সেদিন প্রতিপক্ষের জালে তারা বল জড়ায় ৩০ বার।

অস্ট্রেলিয়া ৩১: ০ আমেরিকান সামোয়া

এপ্রিল, ২০০১

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট আমেরিকান আঞ্চলিক অঞ্চল আমেরিকান সামোয়া। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে যারা হজম করেছিল ৩১ গোল, যা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়–হারের বিশ্ব রেকর্ড। টোঙ্গাকে ২২ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার দুই দিন পরই সামোয়ার মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচেও গোলের মেলা বসায় তারা। ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার আর্চি থম্পসন একাই করেন রেকর্ড ভাঙা ১৩ গোল, যা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে এক ম্যাচে কোনো ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোল।

ডান্ডি হার্প ৩৫: ০ অ্যাবরডিন রোভার্স

সেপ্টেম্বর, ১৮৮৫

নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় ম্যাচেই অ্যাবরডিন রোভার্স মুখোমুখি হয়েছিল ডান্ডি হার্পের। কিন্তু কে জানত, বিব্রতকর এক হারই সেদিন অপেক্ষা করছিল অ্যাবরডিনের জন্য। স্কটিশ কাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটিতে ডান্ডির কাছে অ্যাবরডিন হজম করেছিল ৩৫ গোল।

আরব্রোথ ৩৬: ০ বোন আকর্ড

সেপ্টেম্বর, ১৮৮৫

ফুটবল ইতিহাসে এ এক অদ্ভুত কাকতাল হয়ে আছে। যেদিন (১২ সেপ্টেম্বর ১৮৮৫) অ্যাবরডিনের বিপক্ষে ডান্ডি ৩৫ গোল করে, সেই একই দিন বোন অ্যাকর্ডের বিপক্ষে গেফিল্ড পার্কে আরব্রোথ করে ৩৬ গোল। ম্যাচের প্রথমার্ধে ১৫ গোল করা আরব্রোথ দ্বিতীয়ার্ধে করে ২১ গোল। অবিশ্বাস্যই বটে! এটিই এখন পর্যন্ত পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে কোনো দলের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পাওয়া জয়।