
‘বেকহাম’ তথ্যচিত্রে ডেভিড বেকহামের মাঠ ও মাঠের বাইরের জীবন উঠে এসেছে। খেলাধুলা নিয়ে দারুণ সব তথ্যচিত্রের কাতারে ফিশার স্টিভেনসের এই কাজটি থাকবে।
যুক্তরাজ্যের অফিশিয়াল টিভি দর্শক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বার্ব–এর হিসাবে ৪ অক্টোবর মুক্তির পর ওই সপ্তাহ শেষ হয় ৮ অক্টোবর—এ সময়ের মধ্যে ভিউসংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ। নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও টপ রেটেড শো হয়েছিল সেটা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই। বেশি দিন আগের কথা নয়—২০২৩, ডেভিড বেকহামের বয়স তখন কতই–বা ৪৮।
বেকহামের আবেদন আসলে তখন যেমন ছিল, এখনো তাই। বেকহাম নামে তথ্যচিত্র মুক্তি পাবে এবং সেখানে তাঁর উঠে আসার গল্প থাকবে, এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবে না, তা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক ফিশার স্টিভেনস সেই আগ্রহ ভালোভাবেই মিটিয়েছেন। চার পর্বের এই তথ্যচিত্রে দক্ষিণ লন্ডনের শ্রমিক শ্রেণি (বেকহামের মা ছিলেন হেয়ারড্রেসার, বাবা কিচেন ফিটার) থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা, ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং তাঁর মাঠের বাইরের জীবন; ইংলিশ পপ কালচারে ফ্যাশন, খেলা ও গানকে এক মোহনায় মিলিয়ে সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটিদের একজন হয়ে ওঠা, এসবই আছে।
আরও আছে দুঃখ, বঞ্চিত হওয়ার যাতনা, গোটা ইংল্যান্ডে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হয়ে দিন কাটাতে কেমন লাগে, তা মর্মে মর্মে টের পাওয়া আর আছেন সবকিছুর পরও সব সময় পাশে থাকা ভিক্টোরিয়া বেকহাম। তাঁদের প্রেম, বিয়ে, সংসার এই তথ্যচিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভিক্টোরিয়ার জন্য পাগল ছিলেন বেকহাম, যেটা তাঁর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন মোড়ে বড় ভূমিকাও রেখেছে। যেমন ধরুন, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগের দিন বেকহাম জেনেছিলেন ভিক্টোরিয়া অন্তঃসত্ত্বা। খবরটা তখন জানানো ঠিক ছিল কি না, এই প্রশ্নে ‘স্পাইস গার্লস’ কন্যাকে দ্বিধায় ভুগতে দেখা গেছে।
কিন্তু ‘পশ অ্যান্ড বেকস’–এর প্রেম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পায়ের তলায় মাটি শক্ত হওয়ার দিনগুলোতে এই প্রতিযোগিতাকে পপ কালচারে কোথায় পৌঁছে দিয়েছিল, সেই গল্পের বয়ান আছে। বেকহাম নিজে, তাঁর বাবা-মা থেকে ভিক্টোরিয়া, ‘ক্লাস অব ৯২’ এর ইউনাইটেড সতীর্থরা, শৈশবের কোচ এবং স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন; সবার মুখে উঠে এসেছে বেকহামের ক্যারিয়ার এবং মানুষ বেকহাম কেমন।
প্রথম দুই পর্বে বেকহামের উত্থান এবং ’৯৮ বিশ্বকাপে সেই লাল কার্ড দেখার পর ইংল্যান্ডে সবার ঘৃণায় পরিণত হওয়াটা সেই সময়ের প্রচুর ফুটেজ, ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। বেকহামের পরিবার থেকে তাঁর সতীর্থ ও ভিক্টোরিয়ার মুখে তার বর্ণনা ব্যাপারটিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। ক্যামেরার কিছু ক্লোজ শট স্রেফ অবিশ্বাস্য।
পরের দুটি পর্বে দেখানো হয়েছে, ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে ‘গ্যালাকটিকোস’ গড়া এবং সেখান থেকে বেকহামের ক্যারিয়ার-সায়াহ্ন; ইন্টার মায়ামির সহমালিক হিসেবে লিওনেল মেসিকে নিয়ে আসা, এ পর্যন্ত এসে যতি টানা হয়েছে। বাকি গল্পটা চলমান।
বেকহামের পেছনে ফেলে আসা গল্পের এই বয়ানে সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো, ভক্তরা কিছু কিছু জায়গায় বেকহামকে সমীহ করেননি। ফার্গি থেকে নেভিল, নিজেরা যেটা মনে করেন, সেটাই বলেছেন। তাতে দুই দিকই বুঝে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দর্শক। একটি জায়গায় বেকহাম নিজে যেমন ভিক্টোরিয়ার ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন। নিজেদের উঠে আসার সময়টা বলছিলেন ‘পশ স্পাইস’। দুটি পরিবারই ‘ওয়ার্কিং ক্লাস’ থেকে উঠে এসেছেন, ভিক্টোরিয়া এই কথা বলতেই পেছনের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে বেকহাম তাঁর কাছে জানতে চান, ছোটবেলায় ভিক্টোরিয়া স্কুলে যাওয়ার সময় তাঁর বাবা কি গাড়ি ব্যবহার করতেন?
ভিক্টোরিয়া বেশ অস্বস্তিতে ভুগে উত্তর দেন, রোলস রয়েস। বেকহাম মুচকি হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দেন। ফুটবলের গ্লোবাল এই তারকা বাইরে ধোপদুরস্ত হলেও নিজ বাসায় কেমন থাকেন, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে মূল গল্পের ফাঁকে ফাঁকে নেওয়া ভিডিওতে। বেকহাম নিজে সবকিছু ঝকঝকে–তকতকে করে রাখেন।
আইএমডিবিতে ৮.১ রেটিং পাওয়া এই তথ্যচিত্র তেমনই ঝকঝকে। বেকহামের জীবন বেশ স্পষ্ট হয়েই ফুটেছে। ভেনচারল্যান্ড ও বেকহামের স্টুডিও ৯৯ এই তথ্যচিত্রের প্রযোজনা সংস্থা। পাঁচটি প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারে মনোনীত হওয়া বেকহাম রটেন টমেটোজে ৮৮% ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে। সময় থাকলে একবার দেখে নিতে পারেন নব্বই দশকে ফুটবলে অন্যতম সেরা রকস্টারের জীবনকে। সময়টা মন্দ কাটবে না।
বেকহাম (২০২৩):
পরিচালক: ফিশার স্টিভেনস
ধরন: তথ্যচিত্র
আছেন যাঁরা: ডেভিড বেকহাম, ভিক্টোরিয়া বেকহাম, পল স্কোলস, রিও ফার্ডিনান্ড, ফিল নেভিল, গ্যারি নেভিল, ডিয়েগো সিমিওনে, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
রানটাইম: প্রথম পর্ব (দ্য কিক) ১ ঘণ্টা ১১ মিনিট, দ্বিতীয় পর্ব (সিয়িং রেড) ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট, তৃতীয় পর্ব (গোল্ডেন বলস) ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট, চতুর্থ পর্ব (হোয়াট মেকস ডেভিড রান) ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট।