নরওয়ের সবচেয়ে বড় দুই তারকা আর্লিং হলান্ড (ডানে) ও মার্টিন ওডেগার্ড
নরওয়ের সবচেয়ে বড় দুই তারকা আর্লিং হলান্ড (ডানে) ও মার্টিন ওডেগার্ড

হলান্ড-ওডেগার্ডের নরওয়ে কি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে একটি প্রশ্ন করা যাক। বলুন তো, আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোন দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কাছে কখনোই হারেনি? উত্তর—নরওয়ে।

রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে দুটিতে জিতেছে নরওয়ে, বাকি দুটিতে করেছে ড্র। আর বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের সাফল্য শতভাগ, দুই ম্যাচ খেলে জিতেছে দুটিতেই। সেই নরওয়েকেই কি না ১৯৯৮ সালের পর আর বিশ্বকাপে দেখা যায়নি!

কিন্তু আর্লিং হলান্ড, মার্টিন ওডেগার্ড, আলেকজান্ডার সরলোথদের এই সোনালি প্রজন্ম যেভাবে খেলে যাচ্ছে, তাতে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন নরওয়েজিয়ানরা।

নরওয়েজিয়ানরা ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন বুনছেন

ইউরোপীয় অঞ্চলের (উয়েফা) বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দলটি এখন পর্যন্ত নিজেদের গ্রুপে শীর্ষেই আছে। শুক্রবার রাতে নিজেদের মাঠ ওসলোর উলেভাল স্টাডিয়নে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে নরওয়ে। এর পর থেকে দলটিকে নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে।

নরওয়ে কি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে? ইতালির বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ের পর নরওয়েজিয়ান পত্রিকা ভার্ডেন্স গ্যাং প্রশ্নটি করেছিল দেশটির জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ এজ হারেইডকে। উত্তরে হারেইড বলেন, ‘এবার আমি ১০০% নিশ্চিত।’

২০২৬ বিশ্বকাপে ইউরোপ থেকে সুযোগ পাবে ১৬ দল। বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বের শীর্ষ ১২ দল সরাসরি মূল পর্বে জায়গা করে নেবে। বাকি চার দল আসবে বাছাইয়ের প্লে-অফ থেকে।

প্লে-অফে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ১২ দলের সঙ্গে উয়েফা নেশনস লিগের যোগ্য ৪ দল করে নেবে। এই ১৬ দলের মধ্যে ৪ দল মূল পর্বের টিকিট পাবে।

মলদোভা, ইসরায়েলের পর ইতালি—টানা তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘আই’ গ্রুপের শীর্ষে আছে নরওয়ে। এই তিন ম্যাচে তারা গোল করেছে ১২টি। গ্রুপের আরেক দল এস্তোনিয়ার বিপক্ষে আজ রাতে খেলবেন হলান্ড-ওডেগার্ডরা। ম্যাচটা জিতলে ২৮ বছর পর বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে তাঁদের দল।

এস্তোনিয়ার বিপক্ষে আজ জিততে পারলে ২০২৬ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে নরওয়ের

গ্রুপের চার দলের বিপক্ষে নরওয়ের ফিরতি লেগের ম্যাচ এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। ‘আই’ গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারলে এ বছরই ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে নরওয়ের।

তবে দুইয়ে থেকে শেষ করলে খেলতে হবে প্লে-অফে। সে ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বকাপে ওঠার পথ আরও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হবে। অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর মার্চে প্লে-অফ ফাইনাল পর্যন্ত। হলান্ডরা নিশ্চয় সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ঘুরো পথে বিশ্বকাপে যেতে চাইবেন না।

ফুটবলের পরিসংখ্যান–বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘ফুটবল মিটস ডেটা’ বলছে, ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাইয়ের ‘আই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে নরওয়ের সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা এখন ৭৭%।

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে সম্ভাব্য সব ট্রফি জিতেছেন আর্লিং হলান্ড

হলান্ডও তাতে সায় দিচ্ছেন। ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা স্ট্রাইকার স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনআরকেকে বলেছেন, ‘ভালো দল হয়েও আমরা বড় টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিতে পারিনি। আমি বিশ্বকাপ ও ইউরো—দুটিতেই খেলব। এ কথা বলে নিজের ওপর চাপ বাড়াচ্ছি না। তবে আমি খেলবই।’

১৯৯৮ সালে নরওয়ের সর্বশেষ বিশ্বকাপ দলের খেলোয়াড় ছিলেন স্টালে সোলবাক্কেন। সেই সোলবাক্কেন এখন নরওয়ের প্রধান কোচ।

দল নিয়ে আশাবাদী হলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তিনি এখনই স্রোতে গা ভাসাতে নারাজ, ‘কোচ হিসেবে এটা দুর্ভাগ্য যে আমাকে এখন পরের ম্যাচে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। আপনারা আমাদের খেলা উপভোগ করতে পারেন এবং আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে পারেন, তবে (বিশ্বকাপে খেলার ব্যাপারে) আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’