লিওনেল মেসি যখন দিল্লিতে। ১৫ ডিসেম্বর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে
লিওনেল মেসি যখন দিল্লিতে। ১৫ ডিসেম্বর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে

ভারত সফরে কত টাকা পেয়েছেন মেসি, উঠে এল তদন্তে

কলকাতা দিয়ে শুরু। এরপর হায়দরাবাদ, মুম্বাই হয়ে দিল্লি—গত সপ্তাহটা ভারতজুড়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন লিওনেল মেসি। সঙ্গে ছিলেন দুই পুরোনো বন্ধু লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো দি পল। ইন্টার মায়ামির এই মহাতারকাদের সফরটি ছিল পুরোপুরি বাণিজ্যিক। তবে ফুটবলের চেয়েও এই সফর বেশি আলোচনায় এসেছে কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামের নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার কারণে।

সেই বিশৃঙ্খলা এখন গড়িয়েছে আদালত আর তদন্ত কমিটি পর্যন্ত। আর তদন্ত করতে গিয়েই বেরিয়ে আসছে চোখ কপালে ওঠার মতো সব তথ্য। জানা গেছে, এই সফরের জন্য মেসি একাই পেয়েছেন ৮৯ কোটি রুপি!

পুরো সফরের মোট খরচ ছিল ১০০ কোটি রুপি। কলকাতার ঘটনায় আটক প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ তথ্য পেয়েছে ভারতের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি)। বার্তা সংস্থা পিটিআই এ খবর নিশ্চিত করেছে।

টাকা এল কোথা থেকে

জিজ্ঞাসাবাদে শতদ্রু দত্ত জানিয়েছেন, মেসিকে ৮৯ কোটি রুপি দেওয়ার পাশাপাশি ভারত সরকারকে কর হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি রুপি। এই বিপুল অর্থের জোগান নিয়ে শতদ্রুর দাবি, ৩০ শতাংশ টাকা এসেছে স্পনসরদের কাছ থেকে আর ৩০ শতাংশ এসেছে টিকিট বিক্রি করে।

এদিকে এসআইটি কর্মকর্তারা শতদ্রুর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে সেখানে ২০ কোটির বেশি রুপি পেয়েছেন। শতদ্রুর দাবি, এই টাকা কলকাতা ও হায়দরাবাদের ইভেন্টের টিকিট বিক্রি ও স্পনসর থেকে পাওয়া। তবে কর্মকর্তারা এই দাবি খতিয়ে দেখছেন। গত শুক্রবার শতদ্রুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নথিও জব্দ করা হয়েছে।

মুম্বাইয়ে মেসির কাছে সেলফি আবদার খুদে ভক্তের

সল্টলেকের সেই ‘রণক্ষেত্র’

১৩ ডিসেম্বর সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসিকে একঝলক দেখার জন্য চড়া দামে টিকিট কিনেছিলেন হাজার হাজার দর্শক। কিন্তু মেসি মাঠে নামার পরই বাধে বিপত্তি। ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ মেসিকে এমনভাবে ঘিরে ধরেন যে গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখাই যাচ্ছিল না।

প্রিয় তারকাকে দেখতে না পেয়ে মেজাজ হারান দর্শকেরা। শুরু হয় ভাঙচুর ও লুটপাট। স্টেডিয়ামের ভেতরে ও বাইরে পুলিশের সঙ্গে দর্শকদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেডিয়ামের পথে রওনা দিলেও মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

এ ঘটনার পর শতদ্রু দত্তকে হায়দরাবাদ যাওয়ার পথে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য সিনিয়র আইপিএস কর্মকর্তা পীযূষ পান্ডে, জাভেদ শামিম, সুপ্রতিম সরকার ও মুরলীধরের সমন্বয়ে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) গঠন করে।

কলকাতার সল্ট লেকে মেসিকে ঘিরে ছিলেন অনেক মানুষ

প্রভাবশালীর চাপে সব লন্ডভন্ড

জিজ্ঞাসাবাদে শতদ্রু জানিয়েছেন, মেসি মাঠে ঢোকার পর তাঁকে ছোঁয়া ও জড়িয়ে ধরা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, যে কারণে পূর্বনির্ধারিত সময় না কাটিয়ে তিনি আগেভাগে মাঠ ছেড়ে চলে যান। শতদ্রু আরও বলেন, ‘মেসি পিঠে হাত দেওয়া বা জড়িয়ে ধরা পছন্দ করবেন না’—এমনটা ফুটবলারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিদেশি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।

কলকাতায় মেসিকে ঠিকঠাক দেখতে না পেয়ে দর্শক ভাঙচুর চালান

অনুষ্ঠানজুড়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে মেসির খুব কাছাকাছি অবস্থানে দেখা যায়। বিভিন্ন দৃশ্যে দেখা গেছে, তিনি ছবি তোলার সময় আর্জেন্টাইন তারকার কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিজের প্রভাব খাটিয়ে আত্মীয়স্বজন ও ব্যক্তিগত পরিচিতদের মেসির কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে সমালোচনার মুখে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, কীভাবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ মাঠের ভেতরের এলাকায় প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন, সেটি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শতদ্রুর দাবি, শুরুতে মাত্র ১৫০টি গ্রাউন্ড পাস ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু একজন ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি’ স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেই সংখ্যা তিন গুণ করা হয় এবং তিনি পুরো বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন।