মোজাফফরভ–বোয়াটেং এখন মোহামেডানের নতুন জুটি
মোজাফফরভ–বোয়াটেং এখন মোহামেডানের নতুন জুটি

মোহামেডানের নতুন যাত্রায় নতুন জুটি

ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁই ছুঁই, ধানমন্ডি মাঠে মাথার ওপরে তেজ ছড়াচ্ছে দুপুরের সূর্য। টানা দুই ঘণ্টা অনুশীলনের ইতি টানলেন কোচ আলফাজ আহমেদ। মাঝমাঠ থেকে একের পর এক বল ফেলছিলেন উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফর মোজাফফরভ, লক্ষ্য ঘানার স্ট্রাইকার স্যামুয়েল বোয়াটেংকে দিয়ে গোল করানো। কোচ বারবার নির্দেশ দিচ্ছিলেন, কীভাবে গোল করতে হবে। দেখলেই বোঝা যায়, মোজাফফরভ আর বোয়াটেংয়ের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে চান তিনি।

কতটা সফল হবেন, তা দেখা যাবে এবারের প্রিমিয়ার লিগে। ২৭ সেপ্টেম্বর ফর্টিস এফসির বিপক্ষে মাঠে নামবে সাদা–কালোরা। ফর্টিস গত লিগের ষষ্ঠ দল, শুরুতেই তাদের বিপক্ষে কীভাবে ম্যাচ, তা নিয়ে গোলকধাঁধায় মোহামেডান শিবির।

বাফুফে বলছে, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সূচি করা হয়েছে। সে যা–ই হোক, ২৩ বছরের খরা ভেঙে গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল মোহামেডান। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ চালুর পর এটাই তাদের প্রথম শিরোপা। মোহামেডানের এখন শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।

নতুন চ্যালেঞ্জে ৮৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী দলটির সারথি মোজাফফরভ ও বোয়াটেং। সবচেয়ে বড় ভরসার নাম মোজাফফরভ। দূরপাল্লার শট এবং নিখুঁত ফ্রি–কিকে গোল করে নিজেকে মেলে ধরেছেন ৩০ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। উইং থেকে লম্বা পাসে দলকে খেলাতে পারদর্শী। ২০২২ থেকে ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন মোহামেডানের। ২০২৩ সালে ৯ বছর পর মোহামেডানের ফেডারেশন কাপ জয় আর গত মে মাসে লিগ শিরোপা জয়ের পেছনে বড় অবদান তাঁর। অনুশীলন শেষে কাল দুপুরে বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’

চাওয়া পূরণে মোজাফফরভ পাশে চান সাদা–কালোর সমর্থকদের, ‘মোহামেডানের সমর্থকেরা পাশে থাকলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারব, এই বিশ্বাসটা রাখছি। দু–তিনটি ম্যাচ খেললে আমাদের দলের সমন্বয় আরও দৃঢ় হবে।’

অনুশীলনে কোচ আলফাজ আহমেদের সঙ্গে খেলোয়াড়রা

বোয়াটেংয়ের সঙ্গে জুটি কেমন হবে, জানতে চাইলে আশাবাদী দেখায় তাঁকে, ‘সে মোহামেডানে প্রথমবার খেলছে। গোল করার জন্য আমি সব ধরনের সহায়তা দেব তাকে।’ উজবেকিস্তানের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা আজামত আবদু রহিমভ ৩৩ বছর আগে মোহামেডানে খেলে গেছেন। ঢাকায় ১১ ম্যাচে ১৭ গোল করে সাড়া ফেলেছিলেন।

মোহামেডানের প্রবীণ সমর্থকদের মুখে আজও রহিমভ নামটা ঘুরে–ফিরে আসে। রহিমভের পর মোজাফফরভ এখন মোহামেডানের আলো, মোহামেডানের আস্থা।
তবে নতুন মৌসুমে সাদা–কালো শিবিরে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়াবাতের চলে যাওয়া। গত লিগে মোজাফফর-দিয়াবাতে জুটি জমেছিল ভালোই।

লিগে ১৯ গোল করে দিয়াবাতে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। দিয়াবাতে এখন আবাহনীতে। তাঁর জায়গায় মোহামেডান নিয়েছে বোয়াটেংকে, যিনি রহমতগঞ্জের হয়ে গত লিগে একটি ডাবল হ্যাটট্রিকসহ করেছিলেন সর্বোচ্চ ২১ গোল। তবে বড় দলের চাপটা আলাদাই। এরই মধ্যে তা টের পেয়ে সতর্কই ২৭ বছর বয়সী বোয়াটেং, ‘আমি জানি, মোহামেডান বড় ক্লাব। এখানে দায়িত্ব অনেক বেশি। আমার চেষ্টা থাকবে ক্লাবকে ভালো কিছু উপহার দেওয়া।’

নতুন চ্যালেঞ্জে ৮৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী দলটির সারথি মোজাফফরভ ও বোয়াটেং। সবচেয়ে বড় ভরসার নাম মোজাফফরভ।

কোচ আলফাজও মানছেন, মোজাফফরভ–বোয়াটেংই তাঁর দলের বড় অস্ত্র হবেন এবার। তাঁর কথায়, ‘মোজাফফরভ পরীক্ষিত এবং একজন নিখুঁত শুটার, বোয়াটেং সুযোগ সন্ধনী। দুজনের মধ্যে একটা সমন্বয় তৈরির চেষ্টা করছি। এ মৌসুমে আরও ভালো খেললে বোয়াটেং বেশি বেশি গোল পাবে।’

১৯ এপ্রিল কুমিল্লার মাঠে চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের কাছে মোহামেডান ৪-১ গোলে হেরেছে। শেষ মুহূর্তে সাদা–কালোর দুর্গ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। দলের সব খেলোয়াড়কে কোচ হাতে পেয়েছিলেন ফাইনালের মাত্র তিন দিন আগে। অনুশীলন–ঘাটতির সঙ্গে বড় সমস্যা বরাবরের মতো মাঠও।

অনুশীলনে মনোযোগী মোজাফফরভ

দেশি খেলোয়াড়দের গতবারের প্রাপ্য সব টাকা এখনো শোধ হয়নি। নতুন মৌসুমেও এখনো প্রতিশ্রুত অঙ্ক পাননি ফুটবলাররা। ক্লাবের ভেতরে শঙ্কা, সময়মতো পারিশ্রমিক না পেলে মাঠে তার প্রভাব পড়তে পারে। তা ছাড়া গতবারের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমানুয়েল সানডেকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি, বলছেন দলের অনেকেই।

তবু আলফাজের বিশ্বাস, নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠুসহ জাতীয় দলের তারকা রহমত মিয়া, গোলকিপার সুজন, শাকিল আহাদ  আর সুমন রেজাদের সঙ্গে বিদেশিদের ভালো সমন্বয় হলে মোহামেডান শিরোপার জন্য লড়াই করতে পারবে। গত মৌসুমেও তো অনেক সংকট পেরিয়ে সাদামাটা দল নিয়েও লিগ ট্রফি জিতেছিল তারা।

কে জানে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না!