
রেফারি ফুটবল মাঠের সেই চরিত্র, যিনি আলোচিত বা বিতর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত না দিলে তাঁর দিকে কারও চোখ পড়ে না। তবে তাঁর কাজটা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা মানেন সবাই। বছরের পর বছর, টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট চাপ সামলে ম্যাচ পরিচালনা করে যাওয়া এই রেফারিদের কেউ কেউ দক্ষতায়, যোগ্যতায় হয়ে ওঠেন সেরাদের একজন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস) ফুটবলের সেরা রেফারিদের র্যাঙ্কিং তৈরি করেছে। দেখে নিন শীর্ষ দশে কারা।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল যাঁরা দেখেছেন, নিকোলো রিজোলিকে তাঁদের চেনার কথা। মারাকানা স্টেডিয়ামে জার্মানি–আর্জেন্টিনার সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের রেফারি ছিলেন রিজোলি। ইতালির এই রেফারি ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও পরিচালনা করেছিলেন। সিরি আ–তে কাজ করেছেন ২০০২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। এ সময়ে সাতবার সিরি আর বর্ষসেরা রেফারির পুরস্কার জিতেছিলেন।
কলম্বিয়ার এই রেফারির টানা তিনটি বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। ২০০২, ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে রেফারিং করা অস্কার রুইজ ফুটবলের বাইরে একজন আইনজীবী এবং শিক্ষক। রেফারিং ছাড়ার পর দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল সংস্থা কনমেবলের রেফারি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি মিসরের ফুটবলে রেফারিং দেখভাল করেন।
কুনিয়াত কাকির ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। দুই আসরেই একটি করে সেমিফাইনালে বাঁশি ছিল তাঁর কাছে। ২০১৫ সালে বার্সেলোনা–জুভেন্টাসের চ্যাম্পিয়নস লিগ পরিচালনাও করেছিলেন তুরস্কের এই রেফারি। বর্তমানে তিনি জর্জিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের রেফারিং বিভাগের প্রধান।
১৯৯০ বিশ্বকাপে পিটার মিকেলসেন যখন প্রথমবার ম্যাচ পরিচালনা করতে নামেন, তিনি ছিলেন বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী রেফারি। ১৯৬০ সালে জন্ম নেওয়া এই রেফারি পরে ১৯৯৪ বিশ্বকাপেও রেফারিং করেছেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। দুবার আইএফএফএইচএস বর্ষসেরা রেফারিও হয়েছেন। ২০১৯ সালে মিকেলসন পৃথিবী ত্যাগ করেন।
নেদারল্যান্ডসের এই রেফারি দুটি বিশ্বকাপ ও তিনটি ইউরোয় রেফারিং করেছেন। এর মধ্যে ২০২০ ইউরোয় ইতালি–ইংল্যান্ড ফাইনালও আছে। কুইপার্স ২০০৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মাঠে ছিলেন।
এ সময়ের মধ্যে ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পাশাপাশি দুটি ইউরোপা লিগ ফাইনালেও ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। তাঁর অন্য একটি পরিচয়—তিনি বড় মাপের ব্যবসায়ী। নেদারল্যান্ডসে বেশ কয়েকটি সুপারমার্কেটের মালিক তিনি।
ইংলিশ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েবের একটি অনন্য রেকর্ড আছে। ২০১০ সালে তিনি ফিফা বিশ্বকাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল পরিচালনা করেছিলেন। একই বছরে দুটি বড় টুর্নামেন্টের ম্যাচ রেফারিংয়ের প্রথম কৃতিত্ব তাঁর। ২০১৪ সালে মাঠ থেকে অবসর নেওয়া ওয়েব এখনো প্রায়ই আলোচিত হন। কারণ, এই মুহূর্তে তিনি ইংলিশ প্রফেশনাল ফুটবলের রেফারিদের প্রধান।
ডেনমার্কের এই রেফারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ডেনিশ শীর্ষ লিগে রেফারিং শুরু করেন। ৪৫ বছর বয়সে ফিফা রেফারিং থেকে অবসরে যাওয়ার কাজে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালসহ সব বড় মঞ্চেই ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার দিয়েগো সিমিওনে লাথি মারার দায়ে ডেভিড বেকহামকে লাল কার্ড দেখানোর ঘটনা তো ছিল বেশ আলোচিতই। ১.৯৬ মিটার উচ্চতার নিয়েলসেন বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের চেয়ে লম্বা ছিলেন বলে মাঠে আলাদা করে চেনা যেত।
২০১৮ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড–সার্বিয়া ম্যাচে সার্বদের একটি পেনাল্টি না দেওয়া নিয়ে তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন ব্রিখ। সে বিশ্বকাপে ওই একটা ম্যাচের পর ফিফা তাঁকে আর কোনো খেলায় রেফারির দায়িত্বই দেয়নি।
তবে মোটের ওপর ব্রিখ নামি রেফারিদেরই একজন। জার্মানির এই রেফারি আইএফএফএইচএসের চোখে ২০১০–২০ দশকের সেরা রেফারি। এমনকি ২০০০ থেকে ২০২০—এই দুই দশকের সেরা রেফারির পুরস্কারও উঠেছিল তাঁর হাতে।
তাঁর মূল পেশা ডেন্টিস্ট। তবে রেফারিংয়ের কারণেই পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ছয়বার জার্মানির বর্ষসেরা রেফারির খেতাব জিতেছিলেন।
বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন ২০০২ ও ২০০৬ আসরে। সামলেছেন ২০০৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ২০০৪ ইউরোর ফাইনালও। বর্তমানে স্কাই ডয়েশ্চেল্যান্ডে বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন মার্কাস মার্ক।
১৯৯৮ থেকে ২০০৩—টানা ছয় বছর আইএফএফএইচএসের বর্ষসেরা রেফারি হয়েছিলেন পিয়েরলুইজি কলিনা। ২০০২ সালে ব্রাজিল–জার্মানি ফাইনাল, ১৯৯৯ সালে বায়ার্ন মিউনিখ–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফাইনাল পরিচালনা করা এই ইতালিয়ান কারও কারও চোখে ‘রেফারিদের রেফারি’।
২০১১ সালে ইতালিয়ান ফুটবলের হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া কলিনা বর্তমানে ফিফার রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান।