
রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করা পিএসজি অপ্টার পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছে। তালিকার শীর্ষ চারে নেই রিয়াল–বার্সা।
মোট ৬২টি ম্যাচের বাকি আছে একটি। গোল হয়েছে ১৯২টি। খেলা দেখতে মাঠে এসেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। গত প্রায় এক মাসে ক্লাব বিশ্বকাপ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেও উত্তর মিলেছে কমই।
তবে একটি প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে পাওয়া গেছে—পিএসজি এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ক্লাব। এমনকি যদি তারা চেলসির কাছে ফাইনালে হেরেও যায়, তবু বিশ্বসেরার অবস্থান থেকে পিএসজিকে সরানোর সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সই সবার ওপরে তুলেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের।
ক্লাব ফুটবলে পিএসজির দাপুটে অবস্থানের সর্বশেষ প্রমাণ ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তাদের ৪–০ গোলে জয়ের ম্যাচটি। লুইস এনরিকের দলের সামনে সেদিন ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা দাঁড়াতেই পারেনি। সেই সঙ্গে এই ম্যাচটি ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোর সঙ্গে পিএসজির পার্থক্যও যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
একটা সময় পর্যন্ত ইউরোপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ছিল পিএসজি। নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লিওনেল মেসিকে একসঙ্গে খেলিয়েও সুবিধা করতে পারেনি তারা। কিন্তু এই তিনজন ক্লাব ছাড়তেই এনরিকের হাত ধরে আমূল বদলে যায় ফরাসি ক্লাবটি। এবার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে এখন এনরিকের দল অপেক্ষায় ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার।
পিএসজির এই বদলে যাওয়ার মূল নায়ক এনরিকে। বড় তারকারা ক্লাব ছাড়লেও হাল ছাড়েননি তিনি। উসমান দেম্বেলে, আশরাফ হাকিমি, নুনো মেন্দেস এবং খিচা কাভারাস্কেইয়ার মতো তারকাদের নিয়ে অবিশ্বাস্য এক দল গড়ে তুলেছেন। যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৫–০ গোলে। এরপর ক্লাব বিশ্বকাপেও চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স দেখিয়ে উঠেছে ফাইনালে।
ক্লাব বিশ্বকাপে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪–০ গোলের জয় দিয়ে মিশন শুরু করেছিল পিএসজি। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারলেও সেটি যে একটা অঘটন ছিল, তা প্রমাণ করেছে নিজেরাই। পরে শেষ ষোলোয় লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে পিএসজি জিতেছে ৪–০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েছে ২–০ গোলে এবং সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে পেয়েছে ৪–০ গোলের জয়।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ঝলক নয়, পিএসজির এই বদলে যাওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে দলীয় ঐক্য। সাম্প্রতিক সময়ে দলগত নৈপুণ্যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর এমন দৃষ্টান্ত আর কোনো দলই দেখাতে পারেনি। তবে এটা তো কেবল শুরু। কে জানে, হয়তো এর মধ্য দিয়ে ইউরোপে পিএসজি–যুগের শুরুও হয়ে গেল।
এদিকে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার আগেই অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে পিএসজি। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর লিভারপুলকে টপকে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে প্যারিসের ক্লাবটি।
নভেম্বরের শেষ দিকে অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে আসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। গত বুধবার পর্যন্ত তারা সেই অবস্থান বেশ ভালোভাবেই ধরে রাখে। তবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা পিএসজি শেষ পর্যন্ত দুইয়ে নামিয়ে দিয়েছে লিভারপুলকে। লিগ ‘আঁ’, ফ্রেঞ্চ কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পাশাপাশি ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাও পিএসজির শীর্ষে ওঠায় ভূমিকা রেখেছে।
পিএসজি ও লিভারপুলের পর এই তালিকায় তৃতীয় আর্সেনাল। গত মৌসুমটা ভুলে যাওয়ার মতো কাটালেও ৪ নম্বর স্থান ধরে রেখেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এরপর ৫ নম্বরে আছে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতা বার্সেলোনা। সিটির মতো শূন্য হাতে মৌসুম শেষ করা রিয়াল মাদ্রিদ আছে তালিকার ছয়ে। রিয়ালের পরের স্থানটি জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখের এবং ৮ নম্বর স্থানটিতে ক্লাব বিশ্বকাপের অন্য ফাইনালিস্ট চেলসি অবস্থান করছে।