ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় এই লিগ শুরুর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লিভারপুল একই চূড়ায় দাঁড়িয়ে। দুই দলই সমান ২০ বার করে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগ জিতেছে। ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগ চালু হওয়ার আগের সময় বিবেচনা করে এই হিসাব করা হয়েছে। অর্থাৎ, এবারের মৌসুমে শিরোপা জয়ে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ইংলিশ ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। সে হিসাবে বর্তমানে দুই দলকে সমতায় রেখে একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে, ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে সর্বকালের সেরা দল কোনটি? লিভারপুল না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড?
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে দুই দলের বিভিন্ন পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে সেরা দল বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। গত মৌসুমে লিভারপুল লিগ জিতে ইউনাইটেডের পাশে বসে। সমান ২০ বার করে শিরোপা জেতা এ দুই দল থেকে ৭টি শিরোপার ব্যবধানে পিছিয়ে তিনে আর্সেনাল (১৩)। সমান শিরোপা জিতলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সর্বোচ্চ ১৭ বার রানার্সআপ হওয়ায় শীর্ষে আর ১৫ বার রানার্সআপ হয়ে দুইয়ে লিভারপুল।
ইউনাইটেড ও লিভারপুলের মধ্যে কোন দল ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে সেরা—সেই বিতর্কে দুই পরাশক্তির পক্ষেই যথেষ্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা যায়।
রানার্সআপ হওয়ার হিসাব সামনে আনলে ইউনাইটেড এগিয়ে যেটা আগেই বলা হয়েছে। একই মৌসুমে এই দুই দলের প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান দখলের নজির দেখা গেছে পাঁচবার—লিভারপুল ১৯৪৭, ১৯৬৪, ১৯৮০ ও ১৯৮৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছর দ্বিতীয় হয়েছে ইউনাইটেড। আর ২০০৯ সালে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরে দ্বিতীয় হয় লিভারপুল। নিকট অতীত বছরগুলোয় ইউনাইটেডের পারফরম্যান্স বেশ বাজে হওয়ায় এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারায় আগামী মৌসুমে এমন না দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
লিগে পয়েন্ট তালিকায় গড় অবস্থান বিচারে লিভারপুল ইউনাইটেডের চেয়ে এগিয়ে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটি এ তালিকায় পাঁচে। জানিয়ে রাখা ভালো, এই তালিকায় তৃতীয় দল অ্যাক্রিংটন মাত্র পাঁচ মৌসুম খেলেছে—শীর্ষ লিগে প্রথম পাঁচ মৌসুম। ২২ মৌসুম দ্বিতীয় বিভাগে খেলায় গড় অবস্থানে নেমে গেছে ইউনাইটেড। লিভারপুল দ্বিতীয় বিভাগে ছিল ১১ মৌসুম।
তবে সব লিগে অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে ইউনাইটেড। লিভারপুলের চেয়ে তারা ৯ পয়েন্টে এগিয়ে। ১৯৯০ সালে আর্সেনালের সঙ্গে ম্যাচে মারামারি না করলে এই ব্যবধান ১০ পয়েন্ট হতে পারত। তখন ১ পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয় ইউনাইটেডের। তবে মোট পয়েন্টের এই হিসাব একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে জিতলে যখন ২ পয়েন্ট পাওয়া যেত (১৯৮১ সাল পর্যন্ত), তখন এই ২ পয়েন্টই হিসাবে যোগ করা হয়েছে। জিতলে ৩ পয়েন্টের যে বর্তমান হিসাব, সেটা বিবেচনা করা হয়নি ওই হিসাবে। ইউনাইটেডের পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ৩ পয়েন্ট পাওয়ার নিয়ম চালুর পর বেশির ভাগ সাফল্য পেয়েছে তারা।
যদিও শুধু শীর্ষ লিগে ফলের হিসাবে ইউনাইটেডের চেয়ে এগিয়ে লিভারপুল, দুইয়ে আর্সেনাল ও তিনে ইউনাইটেড। প্রশ্ন হলো, ইতিহাস, বিভিন্ন বিভাগে খেলা এবং ১৯৮১ সালের আগে ও পরে পয়েন্টের যে বৈপরীত্য—এসব কিছু আমলে নিয়ে একদম সঠিক হিসাব কি বের করা সম্ভব? ফুটবলের পরিসংখ্যানবিদ নিয়াল ম্যাকসুইনি সেই চেষ্টাই করেছেন।
১৯৮১ সালের আগে লিগে প্রতিটি ম্যাচে ছিল ২ পয়েন্ট। জিতলে পূর্ণ পয়েন্ট মিলবে, ড্র করলে ১ পয়েন্ট। ১৯৮১ সাল থেকে লিগের ম্যাচগুলোয় গড়ে ২.৭৩১ পয়েন্ট দেখা গেছে (জিতলে ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট পায় একটি দল আর ড্র করলে ২ পয়েন্ট ভাগ হয় দুই দলের)। ১৯৮১ সালের আগে যেহেতু ২ পয়েন্ট করে দেওয়া হতো ম্যাচপ্রতি, সেই সময়ের তুলনায় ১৯৮১ সালের পরে ১.৩৬৬ গুণ পয়েন্ট বেড়েছে।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, নিম্নতর লিগে পাওয়া পয়েন্টগুলোকে শীর্ষ স্তরের লিগে সমন্বয় করা। যেহেতু শীর্ষ লিগের চেয়ে নিচের লিগে পয়েন্ট বেশি পাওয়া যায়, হিসাব করে দেখা গেছে ১৯৮১ সালের পর নিচের লিগের তুলনায় শীর্ষ লিগে ৪৪ শতাংশ পয়েন্ট কম পেয়েছে দলগুলো। এ কারণে ১৯৮১ সালের পর নিচের লিগের পয়েন্ট ৪৪ শতাংশ কমিয়ে তারপর হিসাব করা হয়েছে।
এসব বিচার করে লিভারপুলের পয়েন্টই সবচেয়ে বেশি হয়। দুইয়ে ইউনাইটেড ও তিনে আর্সেনাল। তবে দলগুলোর ম্যাচ খেলার হিসাবে তারতম্য আছে। আর্সেনাল যেমন তিনে থেকেও ইউনাইটেডের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে।
ইউরোপে যে তিনটি দেশে শীর্ষ লিগে শিরোপা জয়ের রেকর্ড ভাগাভাগি করছে দুই দল, তার মধ্যে ইংল্যান্ড একটি। স্কটল্যান্ডে সেল্টিক ও রেঞ্জার্স (৫৫ বার) এবং মাল্টায় স্লিয়েমা ওয়ান্ডার্স ও ফ্লোরিয়ানা সমান ২৬ বার করে শীর্ষ লিগের শিরোপা জিতেছে।