
পেপ গার্দিওলা কী বুঝে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কে জানে! কথায় আছে না, বড় মাপের কোচদের মেজাজ-মর্জি বোঝা কঠিন। ম্যানচেস্টার সিটির এই কোচের ক্ষেত্রেও কথাটা অনেকাংশে সত্যি। গত শনিবার রাতে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মাঠে ২-১ গোলে হারে তাঁর দল সিটি। পরের ম্যাচটাই ছিল গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে। গার্দিওলা করলেন কী, নিউক্যাসল ম্যাচের দলে একটি-দুটি নয়, ১০টি পরিবর্তন এনে লেভারকুসেনের বিপক্ষে একাদশ গড়লেন!
কিন্তু ফলটা তাঁর পক্ষে আসেনি। ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে লেভারকুসেনের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে সিটি। গোল করার সুযোগ যে গার্দিওলার দল পায়নি তা নয়। নাথান একে ও ৬৫ মিনিটে বদলি হয়ে নামা সিটির নরওয়ে তারকা আর্লিং হলান্ড ম্যাচের দুই অর্ধেই গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। তবে এতগুলো পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামলে সাধারণত যেটা হয়, খেলায় ছন্দ থাকে না—ঘরের দর্শকদের সামনে সিটিকে গতকাল রাতে এমনই ম্লানই লেগেছে।
উল্টো প্রতি–আক্রমণ ও সুযোগসন্ধানী–নির্ভর ফুটবল খেলে দুই অর্ধে দুটি গোল আদায় করে নেয় জার্মান ক্লাবটি। ২৩ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান কোফানের পাস থেকে লেভারকুসেনকে প্রথম গোলটি এনে দেন অধিনায়ক আলেহান্দ্রো গ্রিমালদো। ৫৪ মিনিটে ইব্রাহিম মাজার নিখুঁত ক্রস থেকে হেডে দ্বিতীয় গোলটি লেভারকুসেনের চেক স্ট্রাইকার প্যাট্রিক শিকের।
সিটি কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে এটা ছিল গার্দিওলার ১০০তম ম্যাচ। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ও আর্সেন ওয়েঙ্গারের পর কোনো ইংলিশ ক্লাবের তৃতীয় কোচ হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন গার্দিওলা।
মাইলফলকের এ ম্যাচে হারের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। মিডফিল্ডার নিকো গঞ্জালেস ছাড়া নিউক্যাসল ম্যাচে দলের আর কোনো খেলোয়াড়কেই তিনি লেভারকুসেনের বিপক্ষে একাদশে রাখেননি। হারের পর সিটির এই কোচ টিএনটি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘সব দায় আমার। আমি এখনো মনে করি, একাদশের হয়ে নামা খেলোয়াড়েরা অসাধারণ। কিন্তু আমাদের এমন কিছু ছিল না, যেটা শীর্ষ পর্যায়ে প্রয়োজন হয়।’
দলে পাইকারি হারে পরিবর্তন করার জন্য সমালোচনা মেনে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে গার্দিওলা বলেন, ‘আমাকে এটা মেনে নিতে হবে। জিতলে সমস্যা হতো না। তাই এটা মেনে নিতে হবে যে (হারের) কারণ বোধ হয় অনেকগুলো পরিবর্তন। দু-তিন দিন পরপর খেলতে হলে (দলে) পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু ফল দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো বেশি বেশি হয়ে গেছে।’ গার্দিওলা এটাও স্বীকার করেছেন, কোচিং ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো ম্যাচে দলে ১০টি পরিবর্তন আনলেন, ‘জীবনে প্রথম এটা (১০টি পরিবর্তন) করলাম এবং একটু বেশিই হয়ে গেছে।’
চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব ও লিগ পর্ব মিলিয়ে ঘরের মাঠে টানা ২৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারল সিটি। এবার লিগ পর্বে পাঁচ ম্যাচে এটাই প্রথম হার তাদের। ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ছয়ে সিটি। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১৩তম লেভারকুসেন। লিগ পর্বে দলগুলোর আটটি করে ম্যাচ শেষে শীর্ষ আট দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ ষোলোয় উঠবে।
জয়ের পর লেভারকুসেন কোচ ক্যাসপার হিউলমান্দ বলেন, ‘মাঠে তারা যাকেই খেলাক, দলটা মানসম্পন্ন। যে–ই খেলুক, দলটা অসাধারণ! আমার মনে হয়, আমরা ভালো করেছি।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে সিটি। আগামী ১০ ডিসেম্বর রিয়ালের মাঠে আতিথ্য নেবে গার্দিওলার দল। শেষ ষোলোয় ওঠা নিয়ে নির্ভার গার্দিওলা সামনের এই ম্যাচ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাতে (প্রস্তুতির) সময় আছে।’