Thank you for trying Sticky AMP!!

অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান।

বাংলাদেশকে টেস্টের সেরা পাঁচে দেখতে চাই

১০ নভেম্বর ২০০০। এরপর পেরিয়ে গেছে ২০ বছর। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দুই দশক পর কোথায় দাঁড়িয়ে টেস্ট ক্রিকেটের বাংলাদেশ দল? প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান রোমন্থন করেছেন প্রথম টেস্ট খেলার স্মৃতিও।
প্রশ্ন

অভিষেক টেস্টের কথা বললে প্রথম কোন স্মৃতিটা মনে পড়ে?

পুরো ব্যাপারটাই তো আসলে মনে রাখার মতো। তারপরও আলাদা করে বললে টসের কথাটাই আগে আসে। বাংলাদেশ দলের প্রথম টেস্ট, অধিনায়ক হিসেবে আমি টস করতে যাচ্ছি...। এমনিতে তো টস করতাম সাধারণ কয়েন দিয়ে। ম্যাচ রেফারি বা আম্পায়ার একটা কয়েন দিতেন, সেটা দিয়ে টস করতাম। কিন্তু অভিষেক টেস্টে বিশেষ স্মারক কয়েন দিয়ে টস হয়েছিল।

প্রশ্ন

দেশের হয়ে প্রথম টেস্টের টস। এক দিকে আপনি, আরেক দিকে সৌরভ গাঙ্গুলী। সে অনুভূতি কেমন ছিল?

ভালো তো অবশ্যই লাগছিল। তবে টসের জন্য আমি কয়েন ছুড়ে মারার পর একটা বিভ্রান্তি তৈরি হলো। সৌরভ প্রথমে দাবি করলেন, তিনি টসে জিতেছেন। পরে ম্যাচ রেফারিকে দেখালাম। ম্যাচ রেফারি বললেন, আমি জিতেছি। কয়েনটা যেহেতু সাধারণ কয়েনের মতো ছিল না, কী উঠেছিল, সেটা বুঝতে হয়তো সৌরভের অসুবিধা হয়েছিল।

প্রশ্ন

টেস্ট শুরুর আগের রাতটা নিশ্চয়ই অনেক রোমাঞ্চে কেটেছিল। একটু কি মনে করবেন, কেমন ছিল সে রাত?

রাতটা মোটামুটি ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। টেস্ট তো খেলিনি আগে! দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও ছিল খুব কম। কী হবে, কীভাবে খেলব—সব মিলিয়ে যেন অচেনা একটা জগতে ঢুকছিলাম।

দুই অধিনায়ক।
প্রশ্ন

টেস্টের আগে যে টিম মিটিংটা হয়েছিল, সেখানে কী আলোচনা হয়েছিল?

এখানে কোচ এডি বারলোর কথা বলতেই হয়। তিনি অসুস্থ ছিলেন, তারপরও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। আমাকে অধিনায়কত্বেও অনেক সাহায্য করেছিলেন। ইমরান স্যারও (কোচ সারওয়ার ইমরান) ছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্যও তো টেস্ট ক্রিকেট তখন নতুন। প্রথম টেস্ট খেলার আনন্দের পাশাপাশি সবার মধ্যে ভালো খেলার আগ্রহ ছিল।

প্রশ্ন

প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের ৪০০ রান—এটা কি অকল্পনীয় ছিল ওই সময়?

কিছুটা তো বটেই। আমরা ৪০০ রান করব ভাবিনি। ভালো খেলাটাই ছিল লক্ষ্য। বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম), সুমন (হাবিবুল বাশার) খুবই ভালো খেলল। বুলবুল ভাইয়ের ইনিংসটা তো ছিল অসাধারণ। আমাদের পরিকল্পনা ছিল দুই ইনিংসেই ভালো খেলা, যত বেশি সময় সম্ভব উইকেটে কাটানো এবং টেস্টটাকে লম্বা করা। প্রথম ইনিংসে আমরা তাতে সফল হয়েছি। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংটা আমাদের ভালো হয়নি।

প্রশ্ন

১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন আমিনুল ইসলাম। অভিষেক টেস্টেই নিজেদের মধ্যে একজন ও রকম ব্যাটিং করলেন। অবিশ্বাস্য লাগছিল কি?

এটা তো আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। যদি ওই সময়ের ভিডিও ফুটেজ দেখেন, ড্রেসিং রুমের সামনের দৃশ্যগুলো দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন কতটা রোমাঞ্চিত ছিলাম আমরা। সুমনের ইনিংসটাও ছিল দারুণ। বুলবুল ভাইয়ের তুলনায় ছোট ইনিংস হলেও ওর ইনিংসটা ছিল বেশি আনন্দদায়ী।

আমাদের সেই টেস্ট দলের অফিশিয়াল কোনো ছবিও নেই। দল নির্বাচন নিয়ে টেস্টের আগের দিনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।
প্রশ্ন

অভিষেক টেস্টে আপনার একটা কৃতিত্বও তো অম্লান। অফ স্পিনে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন, যেখানে ছিল শচীন টেন্ডুলকার আর সৌরভ গাঙ্গুলীর উইকেটও...

ওই সময়ের ভারতীয় দল, বিশেষ করে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাদের বিপক্ষে বল করা, অলআউট করা, আমার ৬ উইকেট পাওয়া—সবকিছুই আসলে বিশেষ ছিল। বিশেষ করে টেন্ডুলকারের উইকেটটি পাওয়ার পর আনন্দের শেষ ছিল না।

প্রশ্ন

অভিজ্ঞতা ছাড়া ওই সময় আপনাদের আর কী কী ঘাটতি ছিল?

খেলোয়াড়দের মতো তখন আমাদের সংগঠকেরাও টেস্ট ক্রিকেট আয়োজনে নতুন। অভিষেক টেস্টে সবাইকে টেস্ট ক্যাপ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেওয়া হয়নি। এটা কারও চিন্তায়ও ছিল না। টেস্ট ক্যাপ দেওয়া হয় অনেক পরে। আমাদের সেই টেস্ট দলের অফিশিয়াল কোনো ছবিও নেই। দল নির্বাচন নিয়ে টেস্টের আগের দিনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। তখন আসলে সবই আমাদের জন্য নতুন।

প্রশ্ন

অভিষেকের ২০ বছর পর টেস্টের বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে?

অনিয়মিতভাবে হলেও টেস্টে কিছু অসাধারণ পারফরম্যান্স আমাদের আছে। তবে ধারাবাহিকতার জায়গায় ঘাটতি আছে। আমাদের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলছে। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে টেস্টে দল হিসেবে আমাদের পারফরম্যান্স আরও বেশি ধারাবাহিক হওয়া উচিত ছিল। কয়েকজন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ধারাবাহিক। কিন্তু দল হিসেবে আরও ধারাবাহিক হতে হবে।

প্রথম টেস্টে অনন্য এক কীর্তি ছিল নাঈমুর রহমানের।
প্রশ্ন

এখন তো দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেই অনেক খেলোয়াড়ের অনীহা...

হ্যাঁ, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, ইদানীং টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারেও কারও কারও অনীহা দেখা যায়। এটা হওয়া উচিত নয়। টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়। টি-টোয়েন্টিতে টাকা, গ্ল্যামার বেশি হতে পারে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট আসল ক্রিকেট। সেটার প্রতি জাতি হিসেবেই আমাদের কেন জানি অনীহা। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে হলেও আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হবে।

প্রশ্ন

ক্রিকেটাররাই যদি দীর্ঘ পরিসরের খেলায় অনাগ্রহী হন, সেটা কীভাবে সম্ভব?

আমাদের ঘরোয়া কাঠামোকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, সেটাও দেখতে হবে। আর্থিক প্রাপ্তি বেশি হলে খেলোয়াড়েরা আগ্রহী হবে। সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়াতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতিটাও কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের কাছাকাছি হওয়া উচিত।

প্রশ্ন

আর ৫ বছর পর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের রজতজয়ন্তী হবে। প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হিসেবে টেস্টের বাংলাদেশ দলকে কোথায় দেখতে চাইবেন তখন?

বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দলকে টেস্টের সেরা পাঁচ-এ দেখতে চাই। তবে এ জন্য সবাইকেই কাজ করতে হবে। খেলোয়াড়দের আগ্রহী হতে হবে। তাদের মধ্যে যদি কোনো ঘাটতি থাকে, আমাদের সংগঠকদের সেই ঘাটতি দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।