টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে জুলিয়ান উড
টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে জুলিয়ান উড

পাওয়ার হিটিং শিখতে কী বদলাতে হবে, জানালেন উড

পাওয়ার হিটিংয়ের ঘাটতি কাটাতে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ক্যাম্পে আনা হয়েছে জুলিয়ান উডকে। এর আগে বিকেএসপিতে কাজ করেছেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া নারী দলের সঙ্গেও। দুই দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন এই পাওয়ার হিটিং কোচ।

প্রশ্ন

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

জুলিয়ান উড: নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করেছি শুরুতে, এখন ছেলেদের সঙ্গে করছি। নারী ক্রিকেটে এখন বৈশ্বিক একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে। বড় তিনটি দল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত অনেক বেশি এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশ ওই তুলনায় অনেক পিছিয়ে। আমার কাজ হলো বড় দলগুলোর ব্যবধান কমিয়ে আনা, তাঁদের স্কোরিং অপশন বাড়ানো, আরও ভালো ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি কীভাবে পাওয়ার বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেটারদের কথা যদি বলেন—তারা দীর্ঘকায় নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ইংল্যান্ডের মতো পেশির জোর নেই। তারপরও তারা কীভাবে শটে পাওয়ার আনতে পারে, তা বোঝানোর কাজ করেছি। বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের স্কিল ভালো, ব্যাটের টাচ ভালো, হ্যান্ড আই কো–অর্ডিনেশন ভালো, পাওয়ারও আছে যথেষ্ট— বিষয়টা হলো ওই পাওয়ারটা বুঝে তা ব্যবহার করা।

প্রশ্ন

নারী ক্রিকেটারদের সাধারণত ছক্কা খুব একটা মারতে দেখা যায় না। তাঁদের সঙ্গে কী ধরনের কাজ করলেন?

উড: লোকজন বলে যে তাদের পাওয়ার নেই। তারাও এটা বিশ্বাস করে ফেলে। কিন্তু পাঁচ দিন তাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তাদের যে যথেষ্ট পাওয়ার আছে, আমাকে এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। আমি জানি না, এটা সবাইকে দেখাতে কত দিন লাগবে। কিন্তু আশা করি, তাদের মানসিকতা বদলেছে। এই মানসিকতা ধরে রাখাটা মূল বিষয়। যদি তারা ব্যর্থও হয়, আমি চাই না তারা এই মানসিকতা থেকে সরে আসুক। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই কথা। আমার জন্য এটাই চ্যালেঞ্জ, যদি কাজ না–ও হয়, যেটা সব সময় হবেও না, তারপরও তারা যেন মানসিকতাটা ধরে রাখে তা বোঝানো।

জাতীয় দলের সহকারী কোচ সালাউদ্দিন ও পেস বোলিং কোচ শন টেইটের সঙ্গে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন
প্রশ্ন

ছেলেদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেলেন, সাধারণত নতুন কিছু চেষ্টা করলে ব্যাটসম্যানদের একটা অস্বস্তি থাকে...

উড: তারা বেশ খোলামনেই সবকিছু গ্রহণ করছে। বুঝতে পারছে কেন এটা করা হচ্ছে। আসলে ডেটাই সবকিছু বলে দেয়—স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে তারা পিছিয়ে আছে বাকিদের তুলনায়। যদি একই জিনিস করে যেতে থাকে, তাহলে এভাবেই চলবে। তাই তাদের কিছু জিনিস বদলাতে হবে আর নতুনভাবে চেষ্টা করতে হবে। তারা তা–ই করছে। এটা একটা প্রক্রিয়া, রাতারাতি হবে না—কিন্তু তারা ঠিক দিকেই যাচ্ছে।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও তো ভিন্নতা আছে। কারও সহজাত হিটিং সক্ষমতা আছে, কারও তা নেই…

উড: সবারই শারীরিক গড়ন আলাদা। কেউ সহজাতভাবে বল জোরে মারে, তাদের তো আর এটা শেখানোর কিছু নেই। আমি তাদের যেটা শেখাতে পারি, বলটা যেন আরও দূরে নিতে পারে, আরও বেশি জায়গাজুড়ে যেন শট খেলতে পারে। আপনার হাতে যত বিকল্প থাকবে, কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি তত কম ঘাবড়াবেন। যদি পাওয়ার থাকে, তাহলে লম্বা সময় ধরে লড়াই করা যায়। খেলাটা গভীরে নিয়ে যাওয়া যায়, কারণ আত্মবিশ্বাস থাকে যে মেরে জিতিয়ে দেওয়া যাবে। খর্বকায় ছেলেরাও ছক্কা মারতে পারে। কিন্তু জিনিসটা হচ্ছে টাইমিংয়ের জন্য করা মুভমেন্ট আর ছন্দটা ঠিক রাখা, সেটা রাখতে পারলে বল দূরে যাবেই। সঙ্গে মাইন্ডসেটটাও থাকতে হবে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহটা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো দেখিয়েই কেটেছে, দেখেছি তারা কীভাবে পাওয়ারটা কাজে লাগাতে পারে, সিলেটে আমরা ম্যাচ পরিস্থিতি তৈরি করে দেখব, তারা শেখা জিনিসগুলো কতটা প্রয়োগ করতে পারে।

শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে উড
প্রশ্ন

আলাদা করে কোনো খেলোয়াড়কে চোখে পড়ছে?

উড: আলাদা করে কারও নাম বলতে চাই না। কারণ, সবাই ভালো। কে কেমন হিট করছে, কোন পজিশনে নামছে, তা–ও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। সামনে নেদারল্যান্ডস সিরিজ আছে, আমি ওখানে দেখব এটা।

প্রশ্ন

আপনি তাহলে মূলত তাঁদের শট খেলায় বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করছেন?

উড: সবকিছুই দেখছি। স্কিল, টাচ, পাওয়ার—শুধু বল স্ট্রাইকিং না। এখানে শুধু পাওয়ারের বিষয় নয়। তাদের ব্যাট সুইং, টাইমিংয়ের সময় মুভমেন্ট, মুভমেন্টের সিকুয়েন্স—এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এসব নিয়ে কাজ হচ্ছে, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি কীভাবে শরীরটা মুভ করে।

প্রশ্ন

পাওয়ার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে কী খাদ্যাভ্যাস—আবহাওয়ারও একটা প্রভাব থাকে?

উড: তা তো থাকেই। নাথান (স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেলি) কঠোর পরিশ্রম করছে। এটা আমার কাজ না। কিন্তু আরও ফিট হলে আরও শক্তিশালী হলে তো অবশ্যই ভালো। ফিজিও–ট্রেনাররা এটা নিয়ে কাজও করছে।

স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেলির সঙ্গে উড
প্রশ্ন

মাঝেমধ্যে দেখা যায়, খেলোয়াড়েরা পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য অন্য খেলাও খেলে…

উড: টেনিস, বেসবল, টেপ বল, স্কোয়াশ, এমন যেকোনো কিছুই ক্রিকেটের জন্য ভালো। এটা আপনার হ্যান্ড আই কো–অর্ডিনেশন বাড়ায়।

প্রশ্ন

গলফ ও বেসবল কি একটু বেশি সাহায্য করে?

উড: গলফ বল স্থির থাকে। বেসবলে বল মুভ করে। গলফ সুইং ক্রিকেটের সঙ্গে বেশি মেলে, যখন বল ফুল লেন্থে হয়। যখন শর্ট বল কোমর উচ্চতায় আসে, তখন এটা আবার বেসবলের সঙ্গে মিলে যায়। ব্যাটিংয়ের ভালো বিষয় হলো, কোনো নিয়ম নেই, আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন। আমি অনুশীলনে গলফ, টেনিস, আইরিশ গেম হার্লিং, বেসবলকে কাজে লাগাই।

প্রশ্ন

আপনার প্রো–ভেলোসিটি ব্যাট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা নিয়ে কিছু বলবেন?

উড: এটার ওজন ৩.৩ পাউন্ডের মতো (১৩০০ গ্রাম)। ক্রিকেট ব্যাটের চেয়ে একটু ভারী। যদি আপনি ব্যাটটা ভালোভাবে সুইং না করান, তাহলে কিন্তু কাজ হবে না। ঠিকভাবে সুইং করালে দুটি সাউন্ড হবে, না করাতে পারলে একটা। আমি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের হ্যান্ড স্পিড, ব্যাটের স্পিড, জোন এসব মাপতে পারি। ক্রিকেটাররা তাৎক্ষণিক একটা ফিডব্যাক পায়। জোনটা যত বড় হবে, তত ভালো। এটা ব্যাটসম্যানরা খুব পছন্দ করেছে।

প্রশ্ন

কোনো খেলোয়াড় কি এই ব্যাট কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে?

উড: বিসিবি কয়েকটা কিনবে বলে শুনেছি। আমি চলে যাওয়ার পরও তাদের অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। আমি পাঁচ সপ্তাহ শেখালাম, তারপর তারা আর কিছু করল না, তাহলে এটা অর্থহীন। আমি চাই তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে। কিন্তু যখন আমি থাকব না, তখনো এই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন

চোখ পড়ার মতো একটা উন্নতি দেখার ব্যাপারে আপনি তাহলে আশাবাদী?

উড: আমি না পারার কোনো কারণ দেখি না। আপনার উইকেটটাও দেখতে হবে, ভালো উইকেট হলে তা সাহায্য করবে। তবে স্মার্টও হতে হবে। তাদের আরও বেশি অপশন দিতে হবে। কখনো কখনো প্রয়োগ করতে না পারলেও তাদের মাইন্ডসেট যদি ঠিক থাকে, তাহলেই হলো।