বাজারে ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার স্মার্টফোন পাওয়া গেলেও আইফোনে এখনো সেই ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাই ব্যবহার করা হয়। গুগলের পিক্সেল সিরিজের স্মার্টফোনেও তা-ই। এর মূল কারণ হলো, স্মার্টফোনের ক্যামেরার সেন্সরের জন্য ১২ মেগাপিক্সেলই আদর্শ।
এর বেশ কিছু কারণ আছে। স্টোরেজের ব্যাপার আছে। ছবি প্রসেসিংয়ে প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপারও আছে। আবার কম আলোয় ভালো ছবি তোলার ব্যাপারটিও ব্র্যান্ডগুলোকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। তা ছাড়া বেশি রেজল্যুশনের ছবি বা ভিডিও দেখার পর্যাপ্ত ডিভাইসও নেই। এর সঙ্গে আছে ব্যাটারির আয়ু এবং ক্যামেরার অ্যাপের মতো কম প্রত্যক্ষ বিষয়গুলোও।
ক্যামেরা যত বেশি মেগাপিক্সেলের হবে, স্মার্টফোনের তত বেশি ডেটা প্রসেস করতে হয়। এতে ফোন ধীরগতির হয়ে যায়, ব্যাটারি ফুরোয় দ্রুত। আর নাইট মোড কিংবা পোর্ট্রেট মোডে তোলা ছবি প্রসেস করতে আরও বেশি সময় লাগে।
তা ছাড়া বেশি মেগাপিক্সেলের ছবি বেশি রেজল্যুশনের হয়। এতে ছবির ফাইলের আকার বেড়ে যায়। মেমোরি কার্ডে বেশি জায়গা খরচ করে। আবার কোথাও আপলোড করার সময় ব্যান্ডউইডথও বেশি খরচ হয়। সব ফোনে তো আর অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড স্লট যোগ করার সুযোগ থাকে না।
আরেকটি সত্য এখানে মাথায় রাখা জরুরি। আমরা যত বেশি মেগাপিক্সেলেই ছবি ধারণ করি না কেন, তা দেখার সুযোগ আমাদের কদাচিৎ হয়। ঘরে যদি আলট্রা এইচডি রেজল্যুশনের টিভিও থাকে, তাতে বড়জোর ৮ দশমিক ৩ মেগাপিক্সেলের ছবি বা ভিডিও দেখা যায়। অর্থাৎ মোটামুটি সব ধরনের ডিসপ্লেতে দেখার জন্য ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যথেষ্টের চেয়েও বেশি। আলট্রা এইচডি ডিসপ্লেতে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ছবি পূর্ণ রেজল্যুশনে দেখতে হলে জুম করে দেখতে হবে।
স্মার্টফোনে বড়জোর আলট্রা এইচডি ফোরকে রেজল্যুশনের ভিডিও দেখা যায়। পুরোনো ফোনগুলোতে সে সুযোগও নেই। আর আলট্রা এইচডি ভিডিও ধারণ করার জন্যও ১২ মেগাপিক্সেল প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই।
আইফোন কেনায় ক্যামেরায় গুরুত্ব দেন অনেকেই। ১২ মেগাপিক্সেলের হলেও খুব একটা অভিযোগ কিন্তু শোনা যায় না
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ এসওসি চিপসেটের সঙ্গে এইটকে ভিডিও ধারণ করার সুযোগ এসেছে ঠিকই। তবে এইটকে ভিডিও দেখার মতো ডিসপ্লে এখনো সহজলভ্য হয়নি। আর এইটকে রেজল্যুশনে ভিডিও ধারণ করলে স্টোরেজের বড় সংকট দেখা দেবে।
ক্যামেরার রেজল্যুশনই সব নয়। আরও অনেক বিষয় আছে। ২০১৫ সালে বাজারে আসা আইফোন ৬এসে প্রথম ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সরের ক্যামেরা যুক্ত হয়। এখন তা-ই আছে। কিন্তু আইফোন ৬এসের সঙ্গে আইফোন ১২ প্রোর ক্যামেরায় তোলা ছবি তুলনা করলে রাত-দিন তফাত পাবেন। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের উন্নতির জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।
ইদানীং ‘এআই ক্যামেরা’ শব্দযুগল প্রায়ই শোনা যায়। গুগল হোক, অ্যাপল হোক কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি স্মার্টফোনে তোলা ছবির চূড়ান্ত মান নির্ভর করে ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যারের ওপর।
সেন্সরের আকার একই রেখে মেগাপিক্সেল বাড়ানোর সমস্যা হলো, তখন প্রতিটি পিক্সেলের আকার ছোট হয়ে যায়। আর পিক্সেল ছোট হলে তাতে কম আলো ধারণ করতে পারে, নয়েজ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অন্যদিকে সেন্সরের আকার যত বড় হয়, ছবি তৈরির জন্য ক্যামেরায় তত বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে। আর আলো যত বেশি, ছবি তত ভালো। কারণ, এই আলোই ক্যামেরার এক্সপোজার ব্যালান্স, ডায়নামিক রেঞ্জ, এমনকি শার্পনেস ঠিক করে দেয়।
স্মার্টফোনে যখন আরও শক্তিশালী প্রসেসর, বেশি স্টোরেজ আসবে, তখন ৪০ মেগাপিক্সেলের বেশি ক্যামেরার স্মার্টফোন দরকার হতে পারে। এখন তো সেই মানের ছবি বা ভিডিও দেখার সুযোগও নেই। তাই বর্তমানে ১২ মেগাপিক্সেলই যথেষ্ট। আর সে কথা মাথাই রেখেই আইফোনে এখনো ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন মেগাপিক্সেলের পরিমাণও বাড়ানো হবে।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড অথরিটি