বা ং লা ২ য় প ত্র

এইচএসসি পরীক্ষার বিশেষ প্রস্তুতি-৩৬

প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ২য় পত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
প্রশ্ন: বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে?

উত্তর: বাংলা ব্যাকরণ: যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সবদিক দিয়ে আলোচনা করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বা বাংলা ব্যাকরণ বলে।
# ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, যে শাস্ত্র জানলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়, তার নাম বাংলা ব্যাকরণ।
# ডক্টর সুকুমার সেনের মতে, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতির বিচার ও বিশ্লেষণ আছে এবং যে শাস্ত্রে জ্ঞান থাকলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, লিখতে ও শিখতে পারা যায়, তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বলে।
বৈশিষ্ট্য: ব্যাকরণ শব্দের অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। শব্দটি গঠিত হয়েছে এভাবে: বি+আ+কৃ বা কর+অন অর্থাৎ বিশেষ এবং সম্যকরূপে বিশ্লেষণ করা।
প্রশ্ন: ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ—আলোচনা করো।
উত্তর: ব্যাকরণের মধ্যে ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটে। ভাষার গতি-প্রকৃতি, তার স্বরূপ ধরন-ধারণ ব্যাকরণে রূপ লাভ করে। ভাষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ব্যাকরণ থেকে ধারণা লাভ করা যায়। ভাষার দীর্ঘদিন ব্যবহারে যেসব রীতিনীতি প্রচলিত হয়েছে, তার বিশ্লেষণই ব্যাকরণের বিষয়বস্তু। ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে। ভাষার পথ ধরে, ভাষা ব্যবহারের ফলে যখন বিশেষ কিছু নিয়ম দাঁড়িয়ে গেছে, তখন তা হয়ে উঠেছে ব্যাকরণের নিয়ম। ব্যাকরণের নিয়মকানুন ভাষাকে বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। সে জন্য ব্যাকরণকে ভাষার সংবিধান বলা হয়। তবে ব্যাকরণ ভাষাকে অনুসরণ করে কিন্তু ভাষা ব্যাকরণকে অনুসরণ করে না। ভাষার বিশুদ্ধতার জন্য ব্যাকরণের সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু ভাষা নিজের গতিতে চলে বলে কখনো কখনো ব্যাকরণের বিধি-বিধান অতিক্রম করে যায়। আর তখন সে ব্যতিক্রমকে ব্যাকরণ স্বীকার করে নেয়। ভাষায় এমন কিছু প্রয়োগ আছে, যা ব্যাকরণগত দিক থেকে ভুল। কিন্তু ভাষায় ব্যবহারে গ্রহণযোগ্যতার জন্য সে ভুলও শুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। মূলত ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়মশৃঙ্খলার আলোচনাই ব্যাকরণ। ব্যাকরণের সাহায্যে ভাষার বিশুদ্ধ রূপ বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই বলে ব্যাকরণ ভাষাকে শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে।
প্রশ্ন: ‘ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে।’
অথবা, ‘ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, নির্মাণও করে না, তবু ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না।’ বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
উত্তর: সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিভিন্ন ভাষা চলে আসছে মানুষের মুখে মুখে। কালক্রমে মানুষের ভাষার মধ্যে নানা রকম বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এমনকি মানুষের ভাষার ভিন্নতাও লক্ষ করা যায়। ফলে মানুষ ভাষাকে আপন ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে শুরু করে। যার ফলে ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। আর ভাষাকে সুন্দর, সঠিক ও সাবলীলভাবে প্রকাশ করার জন্য তখন আবিষ্কৃত হয় ব্যাকরণ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা বিশ্লেষণ এবং এদের প্রয়োগবিধিই ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। যেহেতু ভাষাকে সমৃদ্ধ, সঠিক ও শ্রুতিমধুর করার জন্য ব্যাকরণের সূচনা হয়েছে, সেহেতু ব্যাকরণের জন্ম ভাষা সৃষ্টির অনেক পরে। সংগত কারণেই বলা যায়, ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে। কিন্তু ভাষার সঠিক প্রয়োগের জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন: ব্যাকরণ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: ব্যাকরণের প্রকারভেদ: ব্যাকরণ চার প্রকার। যথা:
ক. বর্ণনাত্মক ব্যাকরণ খ. ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
গ. তুলনামূলক ব্যাকরণ ও ঘ. দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ।
# বর্ণনাত্মক ব্যাকরণ: বিশেষ কোনো কালের কোনো একটি ভাষার রীতি ও প্রয়োগ বর্ণনা করা এর বিষয় এবং সে বিশেষ কালের ভাষা যথাযথ ব্যবহার করতে সাহায্য করা এর উদ্দেশ্য।
# ঐতিহাসিক ব্যাকরণ: আধুনিক বা কোনো নির্দিষ্ট যুগের ভাষাগত প্রয়োগরীতি আলোচনা করে আলোচ্য ভাষার রূপটির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করা এর লক্ষ্য।
# তুলনামূলক ব্যাকরণ: যে শ্রেণীর ব্যাকরণ কোনো বিশেষ কালের বিভিন্ন ভাষার গঠন, প্রয়োগরীতি ইত্যাদির তুলনামূলক আলোচনা করে থাকে, তা-ই তুলনামূলক ব্যাকরণ।
# দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ: ভাষায় অন্তর্নিহিত চিন্তা প্রণালিটি আবিষ্কার ও অবলম্বন করে সাধারণভাবে কিংবা বিশেষভাবে ভাষার রূপের উৎপত্তি ও বিবর্তন কীভাবে ঘটে থাকে, তার বিচার করা এর পর্যায়ভুক্ত।
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল