সুন্দর আবহাওয়া, পরিষ্কার আকাশ; কিন্তু কোনো সংকেত না দিয়েই মধ্য-আকাশ থেকে হারিয়ে গেছে বিমান! বেশ কয়েকবারই রহস্যজনকভাবে বিমানের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখেছে বিশ্ব।
চার দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়ার একটি বিমান। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংগামী ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো রহস্যের কূল-কিনারা হয়নি। যাত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। হঠাত্ রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়া বিমানটিকে খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির সব রকম সুবিধা নেওয়ার পরও কেন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না—এ প্রশ্নটিই এখন ঘুরেফিরে আসছে।
বিমানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ বিমান হিসেবে বোয়িং ৭৭৭ বিমানটির রেকর্ড ভালো। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার আগে বিপদে পড়ার কোনো সংকেত পর্যন্ত পাঠায়নি এমএইচ৩৭০ বিমানটি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়ার আগে এটি একবার পেছনের দিকে ফিরতে চেয়েছিল। গত চার দিনে হারিয়ে যাওয়া বিমান সম্পর্কে আর তেমন আশাব্যঞ্জক তথ্য মেলেনি।
অতীতে হারিয়ে যাওয়া বিমানের রহস্য উদঘাটনে প্লেনের ব্ল্যাকবক্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ব্ল্যাক বক্সে ফ্লাইট-সংক্রান্ত তথ্য ও ককপিটের ভয়েস সংরক্ষিত থাকে।
এখন পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া বিমানটির জন্য তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়া কয়েকটি বিমান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ।
এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭ (২০০৯)
২০০৯ সালে রিও ডি জেনেরিও থেকে ফ্রান্সে ফেরার পথে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। পরে জানা যায় এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এই বিমান দুর্ঘটনার কথা কয়েক মাস ধরেই রহস্যঘেরা ছিল। ওই সময় ১ জুন দুর্ঘটনার দিন থেকে পরের দুই সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ ও ২২৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর তিন বছর ধরে এই দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলে এবং ২০১২ সালের জুলাই মাসে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটি, অদক্ষ চালক ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্রুত বিমানটি সাগরে পড়ে যায়।
টিডব্লিউএ ফ্লাইট৮০০ (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের তীরবর্তী অঞ্চলে মধ্য-আকাশে বিস্ফোরিত হয় টিডব্লিউএ ফ্লাইট৮০০। এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও রহস্যের শেষ নেই। ধারণা করা হয়, ২৩০ জন যাত্রী নিয়ে প্যারিসগামী এই বিমানটিতে মিসাইল ছোড়া হয়েছিল। আবার অনেকেই ধারণা করেন, বিমানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন, উল্কার আঘাতে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিমান দুর্ঘটনার পর এফবিআই চার বছর ধরে তদন্ত করে। তদন্তে দাবি করা হয়, আকাশে ওড়ার ১২ মিনিটের মাথায় ত্রুটিপূর্ণ তারের কারণে বিমানটিতে আগুন লাগে এবং বিমানের ফুয়েল ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়।
ইউএসএয়ার ফ্লাইট ৪২৭ (১৯৯৪)
শিকাগো থেকে পিটসবার্গে যাওয়ার পথে ১৩২ জন যাত্রী নিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএসএয়ার ফ্লাইট ৪২৭। ১৯৯৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অবতরণ করার মাত্র আট মিনিট আগে ৩০০ মাইল গতিতে আছড়ে পড়ে বিমানটি। বোয়িং৭৩৭-৩বি৭ বিমানটির আকস্মিক এই দুর্ঘটনার তদন্ত চলে চার বছর। তদন্তে দাবি করা হয়, রাডারে ত্রুটি ছিল। ঠিকমতো সংকেত না পাওয়ার কারণে পাইলট দক্ষ হওয়ার পরও বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল।
ফ্লাইং টাইগার ফ্লাইট ৭৩৯ (১৯৬২)
১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মার্কিন বিমান ফ্লাইং টাইগার ফ্লাইট ৭৩৯। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ভিয়েতনামের সাইগনে ১০৭ জন সেনা ও রসদ নিয়ে যাচ্ছিল এটি। গুয়ামে এটি জ্বালানি নেওয়ার জন্য থামার পর এর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। এই বিমানটির হারিয়ে যাওয়ার রহস্যের আজও কোনো কিনারা করতে পারেননি গবেষকেরা।
প্যান আম ফ্লাইট ৭ (১৯৫৭)
১৯৫৭ সালের ৮ নভেম্বর প্যান আম ফ্লাইট ৭ সান ফ্রান্সিসকো থেকে হাওয়াই ফেরার পথে প্যাসিফিক সাগরের ওপর হারিয়ে যায়। বোয়িং ৩৩৭ বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলে এক সপ্তাহ পর। এই দুর্ঘটনায় ৪৪ জন মারা যান। কিন্তু এই বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিমানটি থেকেও কোনো বিপদবার্তা পাঠানো হয়নি। এমনকি এই বিমানে মৃত যাত্রীদের শরীরে পাওয়া অতিরিক্ত কার্বন মনো-অক্সাইড রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছিল।