বা ং লা ২ য় প ত্র

২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি

ভাব সম্প্রসারণ 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ তোমাদের জন্য বাংলা ২য় পত্র থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ দেওয়া হলো।

ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
সুখী হওয়ার আশা মানুষের চিরন্তন। সাধারণ মানুষের ধারণা, ভোগের মধ্যেই সুখ নিহিত। তাই সুখপ্রয়াসী সাধারণ মানুষ নিরন্তর ভোগের উপকরণ সংগ্রহেই মত্ত হয়ে থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ভোগপ্রবণতা মানুষে বিলাসী, আরামপ্রিয়, কর্মবিমুখ ও স্বার্থপরতা প্রাণীতে পরিণত করে। শেষ পর্যন্ত তার ভোগের ক্ষমতা লোপ পায়। সুখ সম্বন্ধে তাদের ধারণা যথার্থ নয়। যথার্থ সুখ পরিভোগের প্রবণতার মধ্যে পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় নিরন্তর কাজের মধ্যে দেশব্রতী ও মানবব্রতী ভূমিকার মধ্যে। সুখ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ভ্রান্তিজনক। তারা ভোগ-বিলাসিতা, দৈহিক আরাম-আয়েশকে সুখের উৎস ও মাধ্যম বলে মনে করে। আর তাই ভোগ-বিলাসের নানা উপকরণ আয়ত্তে আনার জন্য তাদের চেষ্টার শেষ থাকে না। ভোগের ধর্ম এই যে তা আরও ভোগাকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। ফলে, সৃষ্টি হয় গভীর অতৃপ্তির। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ভোগাকীর্ণ জীবন চূড়ান্ত বিচারে সুখ নিশ্চিত করতে পারে না। ভোগই যদি সুখের আকর হতো, তবে বিত্ত ও ক্ষমতাবানেরাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বলে গণ্য হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তারাও জীবনে সুখী হতে পারে না। আসলে সুখ ভোগে-বিলাসের ঊর্ধ্বে মানুষের এক মূল্যবান প্রাপ্তি। প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় মহান কর্ম সম্পাদনে। মানুষের জীবন কর্মের মধ্যেই সৃষ্টিশীল হয়, সার্থক হয়। মানুষের সৃজনক্ষমতার চূড়ান্ত স্ফূর্তি পায় কর্মে। দেশব্রতী, মানবব্রতী কর্মেই মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। এসব কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও মননশীলতার প্রকাশ ঘটে। মানুষ হয়ে ওঠে সার্থক ও পরিপূর্ণ। মানুষের সৃজনশীল ও সার্থক কর্ম যে সুখবোধের জন্ম দেয়, তার চেয়ে বেশি সুখ আর কিছুতেই উপলব্ধি করা যায় না। দেশের জন্য, মানবতার জন্য যারা আত্মত্যাগের পথ বেছে নেয়, তাদের সেই আত্মত্যাগের চেয়ে বড় সুখ আর কী আছে। আমাদের দেশে অজস্র শ্রমজীবী মানুষ, যারা কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের জীবনের অগ্রগতি নিশ্চিত করছে, তারা খুব সামান্য পেয়েই সন্তুষ্ট হয়। শত অভাবের মধ্যেও কর্ম ও ত্যাগের সুখে তারা বেঁচে থাকে। ভোগ ও ত্যাগ মানবজীবনের দুটি বিপরীতধর্মী জীবন-জিজ্ঞাসা। ভোগ-বিলাসিতা মানুষকে ঠেলে দেয় আত্মবনতির চরম অন্ধকারাচ্ছন্ন ভুবনে। পক্ষান্তরে ত্যাগের মহান আদর্শ মানুষকে নিয়ে যায় আলোকোজ্জ্বল জীবন পথে। পক্ষান্তরে ভোগ নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ; ত্যাগের মধ্যেই নিহিত মানুষের প্রকৃত সুখ। কারণ, ভোগ-বিলাসিতা জীবনের ধর্ম নয়, জীবনের ধর্ম হচ্ছে কর্ম সম্পাদন, মানবসেবায় জীবন বিসর্জন। কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে মাুনষের জীবন সাধনার পুষ্পকলিরা।
শেষে বলা যায়, ভোগ মানুষকে সুখ দিতে পারে না, বরং ত্যাগই মানুষকে সুখ দিয়ে থাকে।

সিনিয়র শিক্ষক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মতিঝিল, ঢাকা