
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা সাময়িকী নেচার ২০২৫ সালে বিজ্ঞানের জগতে বিশেষ প্রভাব ফেলা ১০ জন ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় এমন সব ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে, যাঁরা মহাকাশের অসীম দূরত্ব থেকে শুরু করে মহাসাগরের গভীরতম প্রদেশ পর্যন্ত গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন।
জনস্বাস্থ্যের অতন্দ্রপ্রহরী যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের সিডিসির পরিচালক সুসান মোনারেজ দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় বরখাস্ত হন। নতুন ভ্যাকসিনের সুপারিশ বা কাজের প্রমাণ না দেখে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। সুসান প্যাট্রিসিয়া কলার মোনারেজ একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভের স্ট্র্যাটেজিক হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ফান্ডিং অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন।
গবেষণার স্বচ্ছতা রক্ষাকারী ভারতীয় এই বিজ্ঞানী নিজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের হার নিয়ে সাহসী প্রশ্ন তুলেছেন। ব্যক্তিগত ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি গবেষণার শুদ্ধতা রক্ষায় আপসহীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আগরওয়াল ২০১৬ সালে ফ্রান্সের ওরসেতে অবস্থিত প্যারিস-স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৮ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। শুধু বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনার লক্ষ্যবস্তু গবেষণা নীতি ও শিক্ষাকে প্রভাবিত হতে দেখেন। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর তিনি ইন্ডিয়া রিসার্চ ওয়াচ চালু করেন। এই সংগঠন গবেষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অনলাইন দল যাঁরা গবেষণা–সংক্রান্ত চুরি ও অনৈতিক কাজের তথ্য তুলে ধরেন।
টেলিস্কোপের রূপকার পদার্থবিজ্ঞানী টনি টাইসন নবনির্মিত ভেরা রুবিন অবজারভেটরির পেছনের মূল কারিগর। তার দূরদর্শী চিন্তার সল এই মানমন্দির মহাবিশ্বকে দেখার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে জানিয়েছে নেচার। পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী টনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিসের অধ্যাপক। তিনি দুর্বল মহাকর্ষীয় লেন্সিং কৌশলের পথিকৃৎ।
প্যান্ডেমিক নেগোসিয়েটর হিসেবে বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক মহামারি চুক্তির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন প্রেশাস মাৎসোসোর। দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় একটি আইনি কাঠামো তৈরিতেও সফল হয়েছেন তিনি।
নিউরোলজিস্ট সারাহ তাবরিজি মস্তিষ্কের মারাত্মক রোগ হান্টিংটন ডিজিজ নিরাময়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং উন্নত চিকিৎসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ৪২০ টিরও বেশি পিয়ার-রিভিউ প্রকাশনা প্রকাশ করেছেন। তিনি রয়েল সোসাইটি, ইউকে একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেস ও ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিনের ফেলো। তাবরিজি প্রতিষ্ঠিত ল্যাবের লক্ষ্য হান্টিংটন রোগ ও সম্পর্কিত ব্যাধির জন্য চিকিৎসার উপায় বের করা।
গভীর সমুদ্রের অভিযাত্রী চীনা এই গবেষক পৃথিবীর গভীরতম স্থানে অবস্থিত প্রাণী বাস্তুসংস্থান আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণকারী চীনের মেংরান ডু চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ডিপ-সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক। তিনি গভীর সমুদ্রের ইন-সিটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ।
মশা প্রজননকারী বিজ্ঞানী ব্রাজিলের বিজ্ঞানী লুসিয়ানো মোরেইরা রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কোটি কোটি মশা প্রজনন করছেন। একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে রোগ ছড়ানো বন্ধ করার কৌশলে সফলও হয়েছেন তিনি।
এ বছর বাজারে আসার পরপরই প্রযুক্তি-দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে ডিপসিক চ্যাটবট। আর তাই দ্রুত তারকা বনে গেছেন চ্যাটবটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ডিপসিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং।
পেপটাইড গোয়েন্দা কোষের পরিত্যক্ত অংশ বা ‘সেলুলার ট্র্যাশ’-এর ভেতর লুকিয়ে থাকা মানব রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি সম্পূর্ণ নতুন দিক উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানী ইফাত মার্বল।
নতুন প্রাণের স্পন্দন মাত্র ছয় মাস বয়সে কেজে মালডুন প্রথম শিশু হিসেবে হাইপার-পার্সোনালাইজড ক্রিসপার জিন-এডিটিং থেরাপি গ্রহণ করেছে। কেজে জন্ম নেয় ২০২৪ সালের আগস্টে। তার অতি-বিরল জেনেটিক বিপাকীয় ব্যাধি ছিল।
সূত্র: নেচার