বর্তমান সময়ে শিশুদের খেলনায়ও যোগ হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ফলে খেলনাগুলো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করে শিশুদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন করতে পারে। আর এই কথোপকথন কতটা নিরাপদ, তা নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় একটি টেডি বিয়ারের দেওয়া উত্তরের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, শিশুদের হাতে দেওয়া এই প্রযুক্তি আসলে কতটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য?
এআই চ্যাটবট ভুল তথ্য দিতে পারে বা বিভ্রম তৈরি করতে পারে, এমন নজিরও রয়েছে। এখন যখন খেলনা নির্মাতারা এলএলএম ব্যবহার শুরু করেছেন, তখন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুরা এই প্রযুক্তির ঝুঁকি সামলাতে প্রস্তুত কি না, তা নিয়েই ভাবার সময় এসেছে। ওপেনএআইয়ের জিপিটি ৪ও ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এআই খেলনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ববাজারে এআই খেলনার চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ জানিয়েছে, কেবল চীনেই প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান এসব খেলনা তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রেও এর সরবরাহ বাড়ছে। বড় খেলনা নির্মাতা ম্যাটেল চলতি বছরের জুনে ওপেনএআইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।
আধুনিক এআই খেলনা ওয়াই–ফাই সংযোগে শিশুর কথা রিয়েলটাইমে শনাক্ত করে এবং ভেতরে থাকা ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের সাহায্যে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেয়। বাজারে এখন কিউরিওর গ্রক প্লাশি, মাইকের রোবট, পো দ্য এআই স্টোরিবিয়ার, লিটল লার্নার্সের রোবট মিনি ও কেওয়াই টেকনোলজির লুনা রোবট পেটসহ বিভিন্ন মডেল পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য কিউরিওর গ্রক ও ইলন মাস্কের চ্যাটবট গ্রক আলাদা।
শিশুর প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়া, এ সুবিধাই এআই খেলনার সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফোলোটয়ের তৈরি ৯৯ ডলার দামের ‘কুম্মা’ নামের টেডি বিয়ার পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি কখনো বিপজ্জনক জিনিস কোথায় পাওয়া যায়, তা জানিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আলোচনা শুরু করেছে। বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস পাবলিক ইন্টারেস্ট রিসার্চ গ্রুপের নভেম্বরের প্রতিবেদনে। ঘটনার পর ওপেনএআই কুম্মার ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় এবং জানায়, ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে, এমন সেবা তাদের নীতির পরিপন্থী।
ফোলোটয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ল্যারি ওয়াং জানিয়েছেন, ফোলোটয় কুম্মাসহ নিজেদের তৈরি সব এআই খেলনা ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি নিরাপত্তা পর্যালোচনা করেছে। পরীক্ষার পর কুম্মা টেডি বিয়ার আবার বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে টেম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুবোধা কুমার বলেন, কুম্মায় পূর্ণাঙ্গ এলএলএম ব্যবহার করা হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণহীন উত্তর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
ভোক্তার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা পিআইআরজির মতে, বর্তমান বাজারে থাকা বেশির ভাগ এআই খেলনা এখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। এগুলোর নকশায় কখনো আসক্তি তৈরির উপাদান থাকে, কখনো অপ্রাসঙ্গিক উত্তর পাওয়া যায়, আবার কখনো শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যের চেয়ে সামাজিক সঙ্গীর ভূমিকায় জোর দেওয়া হয়। তবে কিছু খেলনায় তুলনামূলক উন্নত ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সেগুলোকে অনুপযুক্ত প্রশ্ন করলে কথোপকথন নিরাপদ দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে পিআইআরজির ডোন্ট সেল মাই ডেটা ক্যাম্পেইনের পরিচালক আর জে ক্রস বলেন, ‘অভিভাবকদের যদি খেলনার আচরণ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর সুরক্ষা।’
সূত্র: সিএনএন