গাড়ি পার্ক করার জন্য কিছু কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে নিরাপদে গাড়ি পার্ক করা যায়।
গাড়ি পার্ক করার জন্য কিছু কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে নিরাপদে গাড়ি পার্ক করা যায়।

সহজে গাড়ি পার্ক করার ৬ কৌশল

সোজা পথে গাড়ি চালানো তুলনামূলকভাবে সহজ। গাড়ির আকার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা এবং থ্রটল ও ব্রেকের ব্যবহার সঠিকভাবে জানলে সামনের দিকে চালানো যায়। কিন্তু পেছনে বা সমান্তরালভাবে গাড়ি পার্ক করার জন্য কিছু কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে নিরাপদে গাড়ি পার্ক করা যায়।

গাড়ির দুই পাশে পেছনের দৃশ্য দেখার জন্য দুটি রিয়ারভিউ মিরর (আয়না) থাকে। আয়না দুটি পেছনে দেখার পাশাপাশি গাণিতিকভাবে পার্ক করতেও সহযোগিতা করে। এ ছাড়া গাড়ির হাতল ও সামনের গাড়ির দুরত্ব সম্পর্কে ধারণা এবং মিররের সেটিংসের মাধ্যমেও সহজে গাড়ি পার্ক করা যায়।

সমান্তরাল পার্কিং

যখন কোনো পার্কিং স্থানে সামনে ও পেছনে গাড়ি থাকে এবং মাঝখানের জায়গায় আরেকটি গাড়ি পার্ক করার জায়গা থাকে, তখন এই পার্কিংকে সমান্তরাল বা প্যারালাল পার্কিং বলে। এ ধরনের পার্কিংয়ে প্রথমে সামনের গাড়ির রিয়ারভিউ মিররে সমান্তরালে নিজের গাড়ির মিরর আসার পর থামতে হবে। এবার রিভার্স গিয়ার (পেছনে যাওয়ার জন্য শক্তি) বা ‘আর’ স্থানে গিয়ার শিফটারকে এনে স্টিয়ারিং হুইল পুরোপুরি ডানে ঘোরাতে হবে। আস্তে আস্তে পেছনে আসতে হবে। বাঁ পাশের আয়নায় পেছনের গাড়ির ডান পাশের হেডলাইট যখন পুরোপুরি দেখা যাবে, তখন ব্রেকে পা রেখে স্টিয়ারিং যতটা ডানে ঘোরানো হয়েছিল, তার বিপরীতে ততটা বাঁয়ে ঘোরাতে হবে। গাড়িটিকে ধীরে ধীরে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। ডান পাশের রিয়ারভিউ মিররে চালকের দিকের দরজার হাতল যখন রাস্তার ফুটপাতের সমান্তরাল হবে তখন স্টিয়ারিং হুইল সোজা অবস্থানে আনতে হবে। এবার পিছিয়ে নিলেই গাড়িটি সোজাভাবে খালি স্থানে পার্ক হয়ে যাবে। বাঁ পাশে গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে এই কৌশল বিপরীতভাবে প্রযোজ্য।

গাড়ির পেছনে গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে

গাড়ি চালানোর সময় সাধারণত চালকের আসন থেকে গাড়ির সামনে কতটুকু জায়গা পর্যন্ত ইঞ্জিন বে বা হুড দখল করেছে, তা পুরোপুরি দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে দূরত্বটি অনুমানের সাহায্যে বুঝে নিতে হয়। তবে অন্য গাড়ির পেছনে থাকার সময় সামনের গাড়ির বাম্পার দেখে গাড়ির সঙ্গে  গাড়ির দূরত্বের স্বচ্ছ ধারণা মেলে। চালকের আসন থেকে সামনের গাড়ির বাম্পারের নিচ পর্যন্ত দেখা গেলে, বুঝতে হবে গাড়িটি এক মিটার দূরত্বে রয়েছে। এ অবস্থায় সামনে গাড়ি থাকলেও নিজের গাড়িকে সহজে বের করা যাবে। ট্রাঙ্ক ওপেনার অথবা বুট স্পেস খোলার পাটাতনের সমান্তরাল যদি দেখা যায়, তাহলে গাড়িটির সামনে মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার জায়গা আছে। এ ক্ষেত্রে সামনে না এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ।

গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করার ক্ষেত্রে

বাড়ির নিচের গ্যারেজগুলোতে গাড়ি রাখার স্থান বা পার্কিং স্পেস সংকীর্ণ থাকে। এ ক্ষেত্রে গাড়ি পার্ক করার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের ডান পাশে যতটুকু জায়গা রয়েছে, সেই জায়গার পরিমাপ স্টিয়ারিং হুইলের ডান পাশের সমান্তরাল। একটি সমান্তরাল রেখায় চিন্তা করলে ডান পাশের স্টিয়ারিং হুইলের প্রান্তভাগে গাড়ির চাকা এবং গাড়ির শেষ প্রান্ত অবস্থিত। বাঁ পাশের মাপের ক্ষেত্রে গাড়ির ডান পাশের ওয়াইপারের শেষ প্রান্তের সমান্তরাল হলো গাড়ির ডান পাশের চাকা ও বডির শেষ প্রান্ত। পার্ক করার ক্ষেত্রে এ দুটি মাপ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করলেই গাড়ি সহজে পার্ক করা সম্ভব। গাড়ি পেছনে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই পাশের লুকিং গ্লাসগুলোকে এমনভাবে সেটিং করা উচিত, যাতে চালকের আসন থেকে পেছনের দুটি চাকা সহজে দেখা যায়। তাহলে গাড়ি আশপাশে ঘষা খাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

খোলা স্থানে গাড়ি পেছনে নেওয়ার সময় রিয়ারভিউ মিররের নিম্নভাগ যদি ফুটপাতের সমান্তরালে থাকে, তাহলে গাড়ি ও ফুটপাতের মাঝখানের দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার।
ইলেক্ট্রনিক মিররের ক্ষেত্রে একটি কৌশল রয়েছে, যা ব্যবহার করলে গাড়ি পেছনে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়নাগুলো চাকা দেখার সুযোগ দেয়। আবার সামনে যাওয়ার জন্য গিয়ার বদলালে পেছনের গাড়ি বা রাস্তা দেখার উপযোগী হবে। এ জন্য প্রথমে গাড়ির গিয়ার লিভারকে ‘আর’–এ নিয়ে আসতে হবে। তারপর দুই দিকের মিররকে অ্যাডজাস্টারের সাহায্যে পেছনের চাকা যাতে দেখা যায়,  সেভাবে সেট করতে হবে। তারপর আবার ‘পি’ বা পার্কিং মোডে গিয়ার শিফটার নিয়ে আসতে হবে। তবে পরবর্তী সময়ে ব্যাকগিয়ার ব্যবহার করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেছনের চাকা দেখাবে।

সোজাসুজি পার্কিং

গাড়ি সোজা পার্ক করার ক্ষেত্রেও গাড়ির আকার নিয়ে চালকের দ্বিধা হতে পারে। যদি কোনো রাস্তায় ফুটপাতের সামনে গাড়ি পার্ক করা হয়, তবে রিয়ারভিউ মিররের নিচের অংশ ও রাস্তার মাপ যদি সমান্তরাল মনে হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক ধরে থামতে হবে। এ অবস্থায় ফুটপাত বা রাস্তা থেকে গাড়িটির দূরত্ব হবে মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার। যদি সামনাসামনি গাড়ি ঘোরাতে হয়, তবে গাড়ির হুড আর ফুটপাতের সামনের অংশ সমান হলে গাড়ি ও ফুটপাতের দূরত্ব হবে তিন মিটার। এ অবস্থায় ডানে বা বাঁয়ে যেকোনোভাবেই গাড়ি নিরাপদে ঘোরানো যাবে।

আড়াআড়িভাবে গাড়ি ঘোরাতে হলে

যদি সামনের গাড়ি আড়াআড়ি অবস্থায় থাকে, গাড়ি ঘোরানোর জন্য গাড়ির হুড এবং সামনের গাড়ির চাকার অ্যালয়ের মাঝখানটা সমান হলে স্টিয়ারিং ঘোরাতে হবে। এ অবস্থায় ডানে বা বাঁয়ে যেকোনো পাশেই অন্য গাড়ির সঙ্গে ঘষা না খেয়ে গাড়ি ঘুরে যাবে।

পার্কিং থেকে ব্যাক গিয়ারে গাড়ি বের করার ক্ষেত্রে

সোজাসুজিভাবে পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার পর দুই পাশে যদি দুটি গাড়ি থাকে, সে অবস্থায় গাড়ি বের করার জন্য প্রথমে সোজাসুজিভাবে গাড়িটিকে পেছনে নিয়ে আসতে হবে। যখন গাড়ির লুকিং গ্লাসগুলো দুই গাড়ির সীমানা অতিক্রম করবে, তখন স্টিয়ারিং ডানে বা বাঁয়ে ঘুরিয়ে যেদিকে বের হওয়া দরকার, সেদিকেই অন্য গাড়ির সঙ্গে দূরত্ব রেখে গাড়ি বের করা যাবে।

হালনাগাদ গাড়িগুলোতে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাক ক্যামেরা ও পার্কিং সেন্সর রয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে গাড়িতে থাকা মনিটর দেখে সহজে গাড়ি পার্ক করা যায়।