টিভিতে এআই প্রযুক্তি: বদলে যাচ্ছে দেখার অভিজ্ঞতা

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এআই শুধু টিভির রূপই পাল্টে দেয়নি, বরং আমাদের টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকেও নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে
ছবি: স্যামসাংয়ের সৌজন্যে

একসময় আমাদের মানিয়ে নিতে হতো টেলিভিশনের সঙ্গে। টিভিতে গৎবাঁধা যা সম্প্রচার হতো, তা-ই ছিল বিনোদনের খোরাক। দর্শকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের কোনো জায়গা ছিল না। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন টিভিই যেন মানিয়ে নিচ্ছে আমাদের সঙ্গে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় আজকাল টেলিভিশন বুঝতে পারছে আমরা কী দেখতে চাই, কখন দেখতে চাই, এমনকি কেমন ভিজ্যুয়াল বা সাউন্ড কোয়ালিটিতে দেখতে চাই। আর এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।

এআই এখন শুধু স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি টেলিভিশন দেখার প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে করে তুলছে আরও স্মার্ট, পারসোনালাইজড ও হিউম্যান-ফ্রেন্ডলি। কনটেন্ট সাজেশন থেকে শুরু করে ঘরের আলো অনুযায়ী ছবি ঠিক করা—সবকিছুই এখন এআই–নির্ভর। ফলে টেলিভিশন হয়ে উঠছে আমাদের পছন্দ, অভ্যাস ও পরিস্থিতি-সচেতন এক ডিভাইস।

কনটেন্ট সাজেশন ও রিকমেন্ডেশন সিস্টেম

এআই–চালিত টিভিগুলোর অন্যতম জনপ্রিয় সুবিধা হলো, কনটেন্ট রিকমেন্ডেশন সিস্টেম। আগে যেখানে নিজে খুঁজে নিতে হতো কোন অনুষ্ঠান বা সিনেমা দেখবেন, এখন টিভি নিজেই বুঝে নেয় আপনার পছন্দ ও আগ্রহ। এই টিভিগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি কোন ধরনের অনুষ্ঠান বেশি দেখেন—স্পোর্টস, নিউজ, ড্রামা নাকি কমেডি—সে অনুযায়ী কনটেন্ট সাজেস্ট করে।

ফলে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বারবার খোঁজার ঝামেলা ছাড়াই আপনি সহজেই পেয়ে যান নিজের পছন্দের অনুষ্ঠান। এতে সময় বাঁচে এবং অতিরিক্ত খাটাখাটুনি করতে হয় না।

পরিবেশ অনুযায়ী অটো-পিকচার ও সাউন্ড অপটিমাইজেশন

এআই এখন শুধু কনটেন্ট সাজেশনে নয়, দেখার মানও উন্নত করছে। আধুনিক টিভিগুলোতে আছে বিল্ট-ইন সেন্সর ও শক্তিশালী এআই প্রসেসর, যা ঘরের আলো, শব্দ ও পরিবেশ বিশ্লেষণ করে ছবি ও সাউন্ড নিজে থেকেই সমন্বয় করে। ঘরে আলো বেশি থাকলে টিভি উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়, আবার শব্দ বেশি হলে অডিও ব্যালান্স ঠিক করে। এমনকি সংলাপ বা ভয়েস অংশকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, যেন দর্শক কিছুই মিস না করেন।

যেমন স্যামসাংয়ের নতুন প্রজন্মের টিভিগুলোতে থাকা এনকিউ৮ এআই জেন৩ প্রসেসর এসব অপটিমাইজেশন সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করে, ফলে আপনি যেকোনো পরিবেশেই পাবেন নিখুঁত ভিজ্যুয়াল ও সাউন্ডের এক্সপেরিয়েন্স।

ভবিষ্যতে হয়তো টিভি আমাদের মেজাজ, অভ্যাস কিংবা আবেগ পর্যন্ত বুঝে কনটেন্ট প্রস্তাব করবে—যেখানে প্রযুক্তি আর মানুষ মিলেমিশে তৈরি করবে এক নতুন বিনোদনের জগৎ

ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট

রিমোটে বারবার বোতাম চাপার যুগ এখন শেষ বললেই চলে। আধুনিক এআইসমৃদ্ধ টিভিগুলোতে এখন রয়েছে বিল্ট-ইন ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, যেমন বিক্সবি, আলেক্সা বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। যেগুলোর সাহায্যে আপনি শুধু কথা বলেই টিভি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন চ্যানেল পরিবর্তন, ভলিউম বাড়ানো বা কমানো, এমনকি কোনো নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান খুঁজে বের করা পর্যন্ত। ভয়েসের মাধ্যমে নির্দেশ দিলেই টিভি তা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেয়। এতে টিভি ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি হয়ে উঠেছে আরও ইন্টার–অ্যাকটিভ ও ইউজার-ফ্রেন্ডলি।

স্মার্ট হোম কানেকটিভিটি

আজকাল টিভি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি এখন স্মার্ট হোমের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ইউনিট। এআই প্রযুক্তির কারণে টিভি থেকে এখন আপনি ঘরের অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস যেমন ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার বা লাইট—সবই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

টিভি পরিণত হয়েছে একটি কমান্ড সেন্টারে, যেখানে আপনি একটি স্ক্রিন থেকেই পুরো ঘর পরিচালনা করতে পারেন।

একসময় টেলিভিশন ছিল নাটক-সিনেমা দেখার জন্য নিছক একটি স্ক্রিন, এখন তা হয়ে উঠেছে স্মার্ট পার্টনার, যা আমাদের জীবনযাপনকে আরও সহজ, আরামদায়ক ও পারসোনালাইজড করে তুলছে। প্রযুক্তির এই অগ্রগতিতে এআই শুধু টিভির রূপই পাল্টে দেয়নি, বরং আমাদের টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকেও নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো টিভি আমাদের মেজাজ, অভ্যাস কিংবা আবেগ পর্যন্ত বুঝে কনটেন্ট সাজেস্ট করবে—যেখানে প্রযুক্তি আর মানুষ মিলেমিশে তৈরি করবে এক নতুন বিনোদনের জগৎ।