মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে বসুন্ধরা সিটি মোবাইল মার্কেটে
মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে বসুন্ধরা সিটি মোবাইল মার্কেটে

বসুন্ধরা সিটিসহ সব মোবাইল মার্কেট বন্ধ, ক্রেতাদের দুর্ভোগ

রাজধানীর ছোট-বড় সব মোবাইল মার্কেট বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। বিশেষ করে বসুন্ধরা সিটি মোবাইল মার্কেটসহ অন্য বৃহৎ বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও ফটকের কাছে এসেই তাঁরা জানতে পারেন মার্কেট বন্ধের কথা। এ ছাড়া অনেকে আসছেন মোবাইল সারাতে, তাঁরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

আজ বুধবার বিকেলে বসুন্ধরা সিটির মূল ফটকে ঢুকতেই দেখা যায় ‘মোবাইল সিটি’ মার্কেট বন্ধ। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় সেখানে। মূল ফটকেই দাঁড়িয়ে তারা আলোচনা করছেন কেন মোবাইল মার্কেট বন্ধ। মোবাইল সার্ভিসিং, নতুন ফোন কেনা বা দেখতে আসা অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কবে মার্কেট খুলবে, সে বিষয়েও নেই কোনো স্পষ্ট ধারণা। একই দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর মোতালেব প্লাজা ও স্টার্ন প্লাজায়।

আজিমপুর থেকে আগত সাবিহা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসেছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে ফোন কিনতে। পুরো বসুন্ধরা সিটি খোলা থাকলেও মোবাইল সিটি মার্কেট বন্ধ। কেন বন্ধ বুঝতে পারছি না। অন্যদের মতো আমাকেও ফিরে যেতে হচ্ছে।’

ধর্মঘটের কারণ

সারা দেশের মোবাইল বিক্রি বন্ধের এই ঘোষণার নেপথ্যে রয়েছে স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)। আজ (বুধবার) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন: মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে তাঁরা এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।

এর আগে গত রাতে এমবিসিবির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস এবং সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাসা থেকে নিয়ে যায়। এই ‘আটকের’ প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করেন। মিজানুর রহমানকে সকালে ও আবু সাঈদ পিয়াসকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবি ছেড়ে দেয়।

এমবিসিবির একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো অভিযোগ ছাড়াই রাতে তুলে নিয়ে যাওয়াটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমরা ব্যবসায়ী, আমাদের ওপরেই কেন এত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে? আমাদের সঙ্গে বসে কথা বলুক। কী করতে হবে, কোন নিয়মে করতে হবে—আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু এভাবে ২০-২৫ হাজার ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে কী প্রমাণ করতে চায়?’

ফোনের দাম বাড়ার শঙ্কা ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যমান করনীতি অনুসারে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার) বাস্তবায়িত হলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।

মুঠোফোন বিক্রেতা সাইম প্লাসের স্বত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাগেজ ফোনের ওপর প্রস্তাবিত ৫৭ শতাংশ ভ্যাট ও কর আরোপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ব্যবসায়ী লাগেজ ফোনের (আনঅফিশিয়াল) ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব ফোন কিন্তু নকল নয়। এই উচ্চ শুল্ক আরোপ হলে ফোন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে, অবৈধ উপায় অবলম্বনকে উৎসাহিত করবে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাবে।

মো. কামাল হোসেন আরও বলেন, ৯টি কোম্পানির সংযোজন করা ফোন বাজারে সব পছন্দের ব্র্যান্ডের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। লাগেজ ফোন বিক্রেতারা অতি সামান্য লাভে (১০০-২৫০ টাকা) বিক্রি করে কোনোমতে টিকে থাকেন। দোকানভাড়া ও কর্মী খরচ মেটাতে না পারায় তাঁরা সেকেন্ড অপশন (লাগেজ ফোন) অবলম্বন করতে বাধ্য হন। তিনি সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ভ্যাট–ট্যাক্স কমিয়ে আনেন। এটি করা হলে সরকার ও ব্যবসায়ীরা উভয়ই উপকৃত হবে এবং সরকারের ভালো রাজস্ব আসবে।

প্রসঙ্গত, অনিবন্ধিত মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু করতে যাচ্ছে এনইআইআর ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার।