৭০টির বেশি নতুন প্রজাতি এবং একটি খনিজ পদার্থের নামকরণ করেছেন গবেষকেরা
৭০টির বেশি নতুন প্রজাতি এবং একটি খনিজ পদার্থের নামকরণ করেছেন গবেষকেরা

জাদুঘরের নমুনা থেকে ৭০টির বেশি নতুন প্রজাতির প্রাণীর নামকরণ

পৃথিবীর প্রাণের অভিধানে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রজাতির প্রাণী। নতুন সব প্রজাতি যে কেবল দুর্গম বনাঞ্চল বা গভীর সমুদ্র থেকেই আসছে তা নয়; অনেক ক্ষেত্রে তা বছরের পর বছর ধরে জাদুঘরে থাকা নমুনা থেকেও আবিষ্কৃত হচ্ছে। এ বছর ৭০টির বেশি নতুন প্রজাতি এবং একটি খনিজ পদার্থের নামকরণ করেছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির গবেষকেরা। তালিকায় প্রাচীন জীবাশ্ম থেকে শুরু করে বর্তমানে জীবিত পশুপাখিও রয়েছে। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের একটি বিশাল অংশ এখনো আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে।

আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্রভোস্ট চেরিল হায়াসি বলেন, একটি নতুন প্রজাতির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত করার আগে গবেষকদের প্রমাণ করতে হয় যে তা বিদ্যমান অন্য সব প্রজাতি থেকে আলাদা। এই প্রমাণ আসে শরীরের গঠন ও ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। প্রতিটি নতুন নামের বিপরীতে একটি টাইপ স্পেসিমেন বা আদর্শ নমুনা রাখা হয়। এসব ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য স্থায়ী রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় মাঠপর্যায়ে।

গবেষকেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং নমুনার অবস্থান, তারিখ ও পরিবেশ নথিবদ্ধ করেন। গবেষণাগারে পৌঁছানোর পর নমুনাগুলো শুকিয়ে, জমিয়ে বা অ্যালকোহলে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয় যাতে সেগুলোর সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যগুলো নষ্ট না হয়। এখন অনেক নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে জাদুঘরের পুরোনো সংগ্রহশালা থেকে। অনেক নমুনা হয়তো কয়েক দশক ধরে সেখানে পড়ে ছিল, কিন্তু আগে তা আলাদা করার মতো উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। আধুনিক ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এখন এমন সব বংশধারা উন্মোচন করছে যা আগে কেবল খালি চোখে দেখে বোঝা অসম্ভব ছিল।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়ে আমাদের জানাশোনা অনেক বেশি মনে হলেও সেখানেও চমক রয়েছে। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে যারা দেখতে হুবহু এক হলেও জিনগতভাবে আলাদা। এদের বলা হয় ক্রিপ্টিক স্পেসিমেন। কয়েক প্রজন্মের ডিএনএ পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এদের আলাদা প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এবার যেমন দীর্ঘ নাক ও লেজবিশিষ্ট এক নতুন প্রজাতির মাউস অপোসাম শনাক্ত করা হয়েছে।

জীবাশ্মবিদ্যায় ২০২৫ সাল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা চীনে দুটি নতুন পালকযুক্ত ডাইনোসরের বর্ণনা দিয়েছেন। এদের নাম সাইনোসৌরোপটেরেক্স ও হাউডানোসরাস। এই থেরোপড ডাইনোসর প্রায় সাড়ে  ১২ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, একটি জীবাশ্মের পেটের ভেতরে দুটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এটি প্রমাণ করে যে সমাহিত হওয়ার ঠিক আগে ডাইনোসরটি তার শিকারকে গিলে ফেলেছিল।

এ বছর লুকাসাইট নামক একটি নতুন খনিজ পদার্থকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি কিম্বারলাইট নামক আগ্নেয় শিলা থেকে পাওয়া গেছে। এর স্ফটিক কাঠামো ও রাসায়নিক গঠন প্রমাণ করে যে এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি খনিজ।

সূত্র: আর্থ ডটকম