পানি স্বচ্ছ ও রংহীন হলেও বিভিন্ন রূপে দেখা যায়
পানি স্বচ্ছ ও রংহীন হলেও বিভিন্ন রূপে দেখা যায়

পানির রং বদল হয় কেন

পানির রং কী? এই প্রশ্ন যদি আপনার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, তবে তিনি হয়তো বলবেন, পানির তো কোনো রং নেই! গ্লাসে পানিকে স্বচ্ছ ও রংহীন দেখা গেলেও সমুদ্রের ধারে গিয়ে দাঁড়ালে বিশাল নীল জলরাশি দেখে মুগ্ধ হতে হয়। কেন গ্লাসে পানি নিজের রূপ লুকিয়ে রাখে আর সাগরে গেলেই তার আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে? এটা কি কোনো জাদু, নাকি স্রেফ চোখের ভুল? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানে আসলে পানি কোনো রং মাখে না, বরং সে আলোর সঙ্গে একধরনের লুকোচুরি খেলায় মেতে ওঠে।

একটি স্বচ্ছ গ্লাসের পানি যখন আমরা দেখি, তখন তার একপাশ থেকে অন্য পাশের দূরত্ব থাকে বড়জোর কয়েক সেন্টিমিটার। অ্যাপ্লাইড অপটিকসে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পানির ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আলো তার দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রং হারিয়ে ফেলে। কিন্তু গ্লাসের কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে গিয়ে আলো প্রায় কিছুই হারায় না। মানুষের চোখ পানির এই অতি ক্ষুদ্র পরিবর্তন ধরতে পারে না। তাই আমাদের কাছে গ্লাসের পানিকে বর্ণহীন বা স্বচ্ছ মনে হয়। সহজ কথায়, গ্লাসে পানি তার স্বভাব লুকানোর যথেষ্ট জায়গা পায়।

এখন ভাবুন তো, ওই কয়েক সেন্টিমিটার যখন কয়েক মিটারে রূপ নেয়, তখন কী হবে? সাগরের তলদেশ যখন অনেক গভীর হয়, তখন সূর্যের আলোকে পানির অনেক গভীরে যেতে হয়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় পানি আলোর লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলোকে অল্প অল্প করে শুষে নিতে থাকে। কিন্তু নীল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অত সহজে ফুরিয়ে যায় না। ফলে গভীর থেকে যে আলোটি আপনার চোখে ফিরে আসে তাতে লাল রং থাকে না বললেই চলে। তখন দাপট থাকে কেবল নীলের। পানি আসলে নীল হয়ে যায় না বরং সে লাল রংকে খেয়ে ফেলে, যা অবশিষ্ট থাকে তা আমরা দেখি।

বৃষ্টির পানি স্বচ্ছ হলেও মাটির কারণে নদীর পানি বাদামি হয়ে যায়। আবার যখন শেওলা জন্মায় তখন পানির ভেতর থাকা রঞ্জক পদার্থ সবুজ আলোকে প্রতিফলিত করে ফলে পুরো এলাকা সবুজ দেখায়। আবার সৈকতের অগভীর স্বচ্ছ পানির নিচে সাদা বালি থাকলে তা বাড়তি আলো প্রতিফলিত করে পানিকে উজ্জ্বল ফিরোজা রং দেয়। গ্লাসের ট্যাপের পানি কখনোই এই বৈচিত্র্য দেখাতে পারে না।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে শান্ত পানি আয়নার মতো কাজ করে আকাশের নীল রংকে ধারণ করে। তবে মেঘলা দিনেও পানি তার অন্তর্নিহিত নীল আভা বজায় রাখে। আকাশ কেবল পানির ওপরের স্তরে রং মাখায় কিন্তু ভেতরের আসল রঙের কারিগর হলো সেই আলোর শোষণ প্রক্রিয়া। কোনো উপকূলে পানি ঘন নীল বা ইন্ডিগো দেখায় আবার হিমবাহের কাছে গেলে পাথরের গুঁড়ার কারণে পানিকে দুধের মতো ঘোলাটে মনে হতে পারে। আসলে অল্প পরিমাণে থাকলে পানি তার আসল পরিচয় গোপন রাখতে পারে কিন্তু যখনই সে বিশাল আকার ধারণ করে তখন আর রহস্য ধরে রাখতে পারে না। গ্লাস পানির রং গোপন রাখে আর সাগর বলে দেয় সত্যিটা।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া