চেরনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষের ওপর থাকা ক্ষতিগ্রস্ত ডোম
চেরনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষের ওপর থাকা ক্ষতিগ্রস্ত ডোম

চেরনোবিলে আবারও মহা বিপর্যয়ের আশঙ্কা

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিলে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বেশি পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ধ্বংসাবশেষের ওপর প্রায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে বিশেষ ডোম বা সুরক্ষা আবরণ তৈরি করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে বর্তমানে ইউক্রেনের আওতাধীন চেরনোবিলে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশেষ ডোমটি। এতে কয়েক দশক ধরে আটকে রাখা পুরোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবার পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সুরক্ষা দেওয়া ডোমটি ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি মাসে আইএইএর একটি বিশেষ দল নিরাপত্তা মূল্যায়ন করে দেখেছে, ডোমটি তার প্রধান নিরাপত্তা সক্ষমতা, বিশেষ করে তেজস্ক্রিয়তা আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে। আইএইএর ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানিয়েছেন, ছাদের ওপর সাময়িকভাবে কিছু মেরামত করা হলেও, আরও অবনতি রোধ করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন।

ডোমটির মূল কাঠামো ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এখনো সচল থাকলেও এর ভেতরে ১৯৮৬ সালে দুর্ঘটনার পর থেকে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রয়ে গেছে। বর্তমান সংঘাতের কারণে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তেজস্ক্রিয় চুল্লি ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। আইএইএ দ্রুত আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও উচ্চপ্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের তাগিদ দিয়েছে।

ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সহায়তায় ২০২৬ সালে চেরনোবিলে অতিরিক্ত অস্থায়ী মেরামতের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলমান যুদ্ধ শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। চেরনোবিলের অভিশপ্ত এলাকায় প্রাণের বিবর্তন চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকা মানুষের বসবাসের জন্য নিষিদ্ধ হলেও সেখানে বন্য প্রাণীরা টিকে রয়েছে।

২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সেখানকার কুকুরের শরীরে জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা ১১৬টি কুকুরের রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে তারা দীর্ঘমেয়াদি বিকিরণ, ভারী ধাতু এবং দূষণের মধ্যে বেঁচে থাকার এক অনন্য ক্ষমতা বা সুপারপাওয়ার অর্জন করেছে। তাদের জিনের প্রায় ৪০০টি স্থানে এই পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যা তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই বৈরী পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করছে। প্রকৃতির এই অবিশ্বাস্য অভিযোজন সত্ত্বেও মানুষের জন্য চেরনোবিলের বর্তমান পরিস্থিতি একটি বড় সতর্কবার্তা। ডোমটি পুরোপুরি ভেঙে পড়লে তা পুরো ইউরোপের পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।

সূত্র: ডেইলি মেইল