বিশ্বের শীর্ষ প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বিভিন্ন প্রাণীর অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে। যেসব প্রাণী ঝুঁকিতে আছে, তাদের লাল তালিকায় (রেড লিস্ট) রাখা হয়েছে। তালিকায় প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬২০টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৮ হাজার ৬৪৬টি প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আর্কটিক সিল ও পাখিরা জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের কার্যকলাপের কারণে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির হালনাগাদ তালিকায় নতুন নতুন অনেক প্রাণীর নাম দেখা যাচ্ছে।
আইইউসিএন জানিয়েছে, বনায়ন ও কৃষি সম্প্রসারণের কারণে প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে বলে পাখিরা হুমকির মধ্যে আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জাহাজ চলাচলের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। আইইউসিএন জানিয়েছে, হুডেড সিল এখন বিপন্নপ্রায় থেকে বিপন্ন অবস্থায় চলে গেছে। অন্যদিকে বিয়ার্ডেড ও হার্প সিল এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। সংস্থার মহাপরিচালক গ্রেথেল আগুইলার বলেন, হালনাগাদ তালিকায় প্রকৃতি ও জলবায়ুর ওপর মানুষের কার্যকলাপের ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিধ্বংসী পরিণতি দেখা যাচ্ছে। সামুদ্রিক ট্রাফিক, খনন ও তেল উত্তোলন, শিল্পভিত্তিক মাছ শিকার ও শিকারি প্রজাতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক প্রাণী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আইইউসিএন জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চার গুণ দ্রুত ঘটছে। এতে সমুদ্রের বরফের ব্যাপ্তি ও স্থায়িত্ব মারাত্মকভাবে কমছে। বরফনির্ভর সিল অন্যান্য প্রাণীর জন্য খাদ্যের একটি প্রধান উৎস। তারা খাদ্যশৃঙ্খলে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী খেয়ে পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করে। এসব সিল তাদের বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম মূল প্রজাতি হিসেবে ভূমিকা রাখে। নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কিট কোভাকস নরওয়ে ও উত্তর মেরুর মাঝামাঝি স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কয়েক দশক আগে যখন আমি এই দ্বীপপুঞ্জে থাকতাম, তখন এমন অঞ্চলে পাঁচ মাস ধরে সমুদ্রের বরফ থাকত। এখন এই এলাকা শীতকালে বরফমুক্ত থাকে। আর্কটিক যে কত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন।’
পাখিদের উপস্থিতি সম্পর্কে আইইউসিএন জানিয়েছে, পাখিদের রেড লিস্ট বিশেষজ্ঞরা ৯ বছর ধরে কাজ করে তৈরি করেছেন। মোট ৬১ শতাংশ পাখি প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৪ শতাংশ। হ্রাস পাওয়া প্রাণীর সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার পাখি প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করেছে। দেখা যায়, মূল্যায়ন করা ১১ হাজার ১৮৫টি প্রজাতির মধ্যে ১ হাজার ২৫৬টি, প্রায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রজাতি বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে রয়েছে।
চলতি বছরের তালিকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন ধ্বংসের কারণে পাখিদের ওপর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মাদাগাস্কারে ১৪টি প্রজাতিকে নতুন করে আশঙ্কামুক্ত নয় হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। অন্য তিনটি প্রজাতিকে বিপন্নপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকায় আরও পাঁচটি পাখি প্রজাতি আশঙ্কামুক্ত নয় হিসেবে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মধ্য আমেরিকায় একটি অতিরিক্ত প্রজাতিকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতিরও তথ্য দেখা যায়। সংস্থাটি জানিয়েছে, সবুজ কচ্ছপ এখন আর বিপন্ন নয়। গত কয়েক দশকের টেকসই সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপের কারণে সবুজ কচ্ছপ এখন নিরাপদ। ১৯৭০–এর দশক থেকে এই সংখ্যা ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেরিন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিকোলাস পিলচার বলেন, এমন সাফল্য আরও কাজ করার জন্য বড় উদ্দীপনা। তালিকায় বাংলাদেশের চারটি প্রাণীর তথ্য দেখা যায়। বাংলাদেশি গিটারফিশ, কোস্টাল বুলফ্রগ, ক্রিকেট ফ্রগ ও স্কিটারিং ফ্রগের তথ্য পাওয়া যায়। এসব প্রাণী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
সূত্র: এনডিটিভি