সস্তা হলেও কলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আর তাই কলা আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে পরিচিত। তবে একটি অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রচলিত আছে, যেখানে কলাকে তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ফল বলা হয়। শুনতে অবাক লাগলেও এই তথ্য কিন্তু সম্পূর্ণ সত্য! তবে কলায় থাকা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এতই কম যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো বিপদের কারণ হয় না। কলার এই তেজস্ক্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট আইসোটোপ। এটি প্রকৃতিতে প্রাকৃতিকভাবেই বিদ্যমান।
কলার তেজস্ক্রিয়তার অন্যতম কারণ পটাশিয়াম-৪০। পটাশিয়াম মানবদেহের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, যা স্নায়ু ও পেশির সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন। এই পটাশিয়ামের একটি প্রাকৃতিক আইসোটোপ হলো পটাশিয়াম-৪০। পটাশিয়ামের সব প্রাকৃতিক আইসোটোপের মধ্যে প্রায় শূন্য দশমিক ০০১১৮ শতাংশ হলো পটাশিয়াম-৪০। আইসোটোপটি প্রাকৃতিকভাবে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বা রেডিওঅ্যাকটিভ ডিকের মধ্য দিয়ে যায়। এটি ক্ষয় হওয়ার সময় মূলত বিটা কণা ও কিছু পরিমাণে গামারশ্মি নির্গত করে। এ জন্য কলা তেজস্ক্রিয় হয়।
কলা পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। অন্যান্য পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের, যেমন আলু, শিম বা বাদামের মতোই এটিতে অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পটাশিয়াম-৪০ থাকে। বিজ্ঞানীরা কলার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি মজার একক তৈরি করেছেন। একে বলা হয় কলার সমতুল্য ডোজ বা ব্যানানা ইক্যুইভ্যালেন্ট ডোজ। একটি কলার তেজস্ক্রিয়তার গড় মাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক১ মাইক্রোসিভার্ট। মাত্রাটি বেশ কম। পৃথিবীতে বাস করা প্রত্যেক ব্যক্তি প্রাকৃতিকভাবেই পারিপার্শ্বিক বিকিরণ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ৮০০ গুণ বেশি বিকিরণের শিকার হন। এই পটভূমি বিকিরণ আসে মাটি, বাতাস, নির্মাণসামগ্রী ও মহাজাগতিক রশ্মি থেকে। আবার একটি সাধারণ এক্স-রে থেকে যে বিকিরণ পাওয়া যায়, তা প্রায় ১ হাজার থেকে ১০ হাজার কলা খাওয়ার সমান।
কলার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এতটাই কম, তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, তেজস্ক্রিয়তা–সংক্রান্ত ক্ষতি হওয়ার জন্য আপনাকে প্রায় এক কোটি কলা একসঙ্গে খেতে হবে।
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস ও দ্য কনভারসেশন ডটকম