
যাঁরা কম্পিউটারের ইতিহাস জানতে আগ্রহী, তাঁদের কাছে ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম বেশ পরিচিত একটি নাম। ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর ইউনিক্সের অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম সংস্করণ উন্মুক্ত করা হয়। শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেমটি ওপেনসোর্স ও ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে পরিচিত। স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা ও নেটওয়ার্কিংয়ে বাড়তি সুবিধা থাকায় আইএসপি, টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানসহ বড় ডেটা সেন্টারগুলো তাদের ওয়েব সার্ভার, ডোমেইন নেম সার্ভার ও রাউটিং সিস্টেম পরিচালনায় লিনাক্স ও ফ্রিবিএসডির মতো ইউনিক্স-সদৃশ সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ও জটিল কাজের জন্য ইউনিক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউনিক্সকে আধুনিক কম্পিউটিংয়ের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬০–এর দশকের মাঝামাঝি শুরু হয় ইউনিক্স তৈরির কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, বেল ল্যাবস ও জেনারেল ইলেকট্রিক একটি যৌথ প্রকল্পে মাল্টিক্স নামে একটি টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছিল। প্রকল্পটি খুব বড় ও জটিল হওয়ায় ১৯৬৯ সালে বেল ল্যাবস প্রকল্প থেকে সরে যায়। মাল্টিক্সের জটিলতায় অসন্তুষ্ট হয়ে বেল ল্যাবসের গবেষক কেন থম্পসন ও ডেনিস রিচি একটি সহজ ও কার্যকর বিকল্প তৈরির উদ্যোগ নেন। নতুন অপারেটিং সিস্টেমটির নাম রাখা হয় ইউনিপ্লেক্সড ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্পিউটিং সার্ভিস বা ইউনিক্স রাখা হয়। মাল্টিক্সের নামের বিপরীতে এই নাম রাখা হয়।
১৯৭৩ সালে কেন টম্পসন ও ডেনিস রিচি এর মূল অংশ বা কার্নেলকে সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে পুনরায় লেখেন। সে সময় অপারেটিং সিস্টেমগুলো সাধারণত অ্যাসেম্বলি ভাষায় লেখা হতো। সি ভাষা ব্যবহার করে লেখার ফলে ইউনিক্স একটি যুগান্তকারী পোর্টেবল অপারেটিং সিস্টেমে পরিণত হয়। এর ফলে এটিকে সহজেই বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ চালানো যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কম মূল্যে বা বিনা মূল্যে বিতরণ করায় এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। সহজলভ্যতা এবং সোর্স কোড উন্মুক্ত থাকায় ইউনিক্সকে ঘিরে একটি বিশাল ডেভেলপার সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের বিএসডি সংস্করণ এর বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কম্পিউটিংয়ের ইতিহাসে ইউনিক্সের গুরুত্ব অপরিসীম বলা হয়। সি ভাষা ব্যবহার করার কারণে ইউনিক্সকে সহজে বিভিন্ন কম্পিউটার আর্কিটেকচারে স্থানান্তরিত করা যায়। এটিই আধুনিক সফটওয়্যার শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে। ইউনিক্স প্রথম দিকের অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা একই সময়ে একাধিক ব্যবহারকারীকে আলাদা প্রক্রিয়া চালাতে ও একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে দেয়। এখন ব্যবহৃত অধিকাংশ অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ করে সার্ভার ও ওয়েব অবকাঠামোয় ব্যবহৃত লিনাক্স, অ্যাপলের ম্যাকওএস সবই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ইউনিক্স থেকে উদ্ভূত বলা হয়।
সূত্র: ইউনিক্স