ল্যাপটপ আর আধুনিক সতর্কব্যবস্থা উদ্ভাবনের এ যুগের আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটত। মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত পুরো শহর। গত রোববার গুয়াতেমালার ফুয়েগো আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ায় এ বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
গুয়াতেমালার ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত ৪৬ জনের বেশি। হাওয়াইয়ের মাউন্ট কিলাউয়া নামের আরেকটি আগ্নেয়গিরি প্রায় এক মাস ধরেই লাভা ও ছাই উদ্গিরণ করছে। কিলাউয়ার উদ্গিরণে কেউ মারা না গেলেও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইউএসএ টুডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইতিহাসে এমন অনেক মারাত্মক আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণের ঘটনা রয়েছে। জেনে নিন ৫টি ঘটনা:
তাম্বোরা, ইন্দোনেশিয়া (১৮১৫)
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার তাম্বোরার ঘটনাটি। খাদ্যাভাব ও অসুখে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় কোনো কিছু উৎপাদন করা যেত না। এ ঘটনাটিকে ‘গ্রীষ্ম ছাড়া বছর’ বলা হয়। ছাই, সালফার ও অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণে অনেক দিন সূর্যের আলো বঞ্চিত ছিল অঞ্চলটি। ফলে গ্রীষ্মেই তুষারপাতের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ওই আগ্নেয়গিরি থেকে পরে ১৮৮০ ও ১৯৬৭ সালে আবার উদ্গিরণ হয়। তবে তা ১৮১৫ সালের তুলনায় মাত্রায় কম ছিল। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই এলাকায় ভূকম্পন হয়।
ক্রাকাতু, ইন্দোনেশিয়া (১৮৮৩)
এ ঘটনাটিও ইন্দোনেশিয়ার। তাম্বোরা থেকে শত শত মাইল পশ্চিমে ল্যাম্পুং প্রদেশে ক্রাকাতুর উদ্গিরণ ঘটে। অরিগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকানো ওয়ার্ল্ড ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ক্রাকাতু উদ্গিরণের ফলে ছাই সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৮৮৩ সালে দুটি বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ধারণা করা হয়, এ উদ্গিরণের সময় সবচেয়ে জোরে শব্দ হয়। এ বিস্ফোরণের ফলে বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়। এতে যে ধুলা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, এতে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পড়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। নিউইয়র্কসহ বিশ্বের কিছু অঞ্চলে লাল আভার সূর্যাস্ত পরিলক্ষিত হয়। ক্রাকাতু এখনো একটি জ্বালামুখে সক্রিয় এবং সেখান থেকে ক্রমাগত উদ্গিরণ হচ্ছে। তবে বিপজ্জনক মাত্রায় নেই।
পেলি, মার্টিনিক (১৯০২)
আরেকটি ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে ১৯০২ সালে, ফ্রান্সে। এ ঘটনায় ৩০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ফ্রান্সের মার্টিনিক দ্বীপে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় পুরো শহর ধ্বংস হয়ে যায়। আর্থ ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, হঠাৎ আগ্নেয়গিরির ফুঁসে ওঠার আগে জ্বালামুখের দেয়ালে ফাটল দেখা যায় এবং সেখান থেকে পোকামাকড় ও সাপ শহরের দিকে ছুটতে থাকে। এরপর বিশাল এক বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক মিনিটেই সেন্ট পিয়ের শহরটি চাপা পড়ে। সেখানকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। ওই সময় আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল সীমিত, সতর্ক বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থাও ছিল অপ্রতুল। কেউ শহরবাসীর কথা বলেনি। অনেকেই গ্রামাঞ্চল থেকে পালিয়ে ওই শহরে আশ্রয় নিয়েছিল।
রুইজ, কলম্বিয়া (১৯৮৫)
মাত্র ৩৩ বছর আগে কলম্বিয়ায় ভয়াবহ এক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। দুটি বিধ্বংসী বিস্ফোরণের পর কাদার ঢেউ আর ছাইয়ের পাহাড় থেকে নিচে নামতে থাকে। আরমেরোর আশপাশের বেশির ভাগ শহর এ ঢেউয়ের নিচে চাপা পড়ে। আরেকটি কাদাধস নেমে চিনচিন শহরকে ঢেকে ফেলে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা থেকে ৮০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত রুইজ আগ্নেয়গিরিটি আরও দুই ডজন আগ্নেয়গিরি উত্তর দিকে অবস্থান করছে।
উনজেন, জাপান (১৭৯২)
১৭৯২ সালে জাপানের মাউন্ট উনজেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। এ অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট ভূমিধস ও সুনামিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এ ঘটনায় সৃষ্ট প্রলয় লীলায় সিমবারা শহর পুরোটাই মুছে যায়। পরে সেই ভূমিধস আরিয়াক সাগরে বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। ২২০ বছর আগের সেই অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিধসের চিহ্ন আজও রয়ে গেছে। ১৯৯০ মালে মাউন্ট উনজেন থেকে ছোটখাটো উদ্গিরণ শুরু হলে ওই অঞ্চলে ঘনবসতির কারণে মানুষ ভীত হয়ে পড়ে।