চীনের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রযাত্রায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

জো বাইডেন ও সি চিন পিং
জো বাইডেন ও সি চিন পিং

চীনের পারমাণবিক কর্মসূচির দ্রুত অগ্রগতি উদ্বেগজনক বলে গত বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দেশটি বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন এ কর্মসূচি ঘিরে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়, যাতে অস্থিতিশীল অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি হ্রাস পায়। রয়টার্সের খবর।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, পরমাণু কর্মসূচির অগ্রযাত্রা নিয়ে লুকোছাপা করা চীনের জন্য এখন আরও বেশি কঠিন। পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে দেশটি কয়েক দশক ধরে ন্যূনতম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার যে নীতি অনুসরণ করে আসছিল, দৃশ্যত এখন তা থেকে তারা সরে আসছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ওপর করা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন প্রাইস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি মরু এলাকায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের শতাধিক নতুন সাইলো (সংরক্ষণাগার) নির্মাণ করছে। এমন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বেইজিংয়ের অন্যান্য তৎপরতায় এ ইঙ্গিতই পাওয়া যায়, চীন তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আরও দ্রুততার সঙ্গে ও পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি উচ্চপর্যায়ে এগিয়ে নেবে।

প্রাইস আরও বলেন, ‘চীনের পারমাণবিক কর্মসূচি এভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক। ফলে তার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা বলতে চাই, চীন যেন পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি প্রশমনে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেয়। ’

প্রাইস বলেন, চীনের এ তৎপরতার কারণেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের করা মন্তব্য গুরুত্ব দিয়ে নজরে নিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে এখনই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না ওয়াশিংটন।

সি চিন পিং তাঁর ভাষণে হুঁশিয়ার করে বলেন, যেসব বিদেশি শক্তি চীনের প্রতি চোখ রাঙাচ্ছে, তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তিনি তাঁর দেশের সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন। তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণ করা এবং বেইজিংয়ের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি হংকংয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে গত বছর দাখিল করা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের ধারণা, চীন যেভাবে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ও এর আধুনিকায়ন করছে, তাতে দেশটি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা অচিরেই অন্তত দ্বিগুণ করে তুলবে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, এসব যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে ১ হাজার ৩৫৭টি গত ১ মার্চ পর্যন্ত মোতায়েন ছিল।

ওয়াশিংটন বারবারই চীন ও রাশিয়ার প্রতি নতুন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বেইজিং এতে সাড়া দিচ্ছে না। উপরন্তু দেশটি অস্ত্র কর্মসূচি নাটকীয়ভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।