গুটি কয়েক সহযোগী নিয়ে চারদিকে বিদ্রোহী যোদ্ধা পরিবেষ্টিত অবস্থায়ও শেষ লড়াই করতে চেয়েছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তবে এক ছেলেসহ সঙ্গীরা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে রাজি করান। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কাউন্সিলের চলতি বসন্তকালীন অধিবেশনে প্রকাশ করা হয়েছে। তিন সপ্তাহ এর ওপর আলোচনা চলবে।বিদ্রোহীদের অব্যাহত হামলায় টিকতে না পেরে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের নেতা গাদ্দাফি গত বছরের অক্টোবরে গাড়িবহর নিয়ে নিজ শহর সির্ত ছেড়ে যাওয়ার সময় ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে পড়েন। এর কিছু পর বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ার পর তিনি নিহত হন।২০০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটিতে উভয় পক্ষের প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে গাদ্দাফির জীবনের শেষ মুহূর্তের কিছু নাটকীয় ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গাড়িবহরের গাদ্দাফির ঠিক আগের গাড়িটি ধ্বংস হয়। তখন ছেলে মুতাসিম ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবু বকর ইউনিসসহ কয়েকজনকে নিয়ে কাছের একটি বাড়িতে অবস্থান নেন লিবীয় নেতা। একপর্যায়ে ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে গোলা ছুড়তে থাকে বিদ্রোহীরা। গাদ্দাফি তখনো লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে ছেলে মুতাসিম ও সহযোগীরা তাঁকে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে রাজি করাতে সক্ষম হন। মরুভূমির বালুর মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাঁরা দুটি নর্দমার পাইপের ভেতরে ঢুকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেন। বিদ্রোহীদের এগিয়ে আসতে দেখে তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়েন গাদ্দাফির এক দেহরক্ষী। তবে গ্রেনেডটি পাইপের ওপরের সিমেন্ট-নির্মিত দেয়ালে বাধা পেয়ে গাদ্দাফিরই সামনে গিয়ে পড়ে। ওই দেহরক্ষী গ্রেনেডটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে সেটি বিস্ফোরিত হয়। এতে দেহরক্ষী নিজে ও মন্ত্রী ইউনিস নিহত হন। আহত হন গাদ্দাফি। তাঁর কপালের পাশের এক ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছিল। তখন আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে গাদ্দাফির এক সহযোগী সাদা পাগড়ি নাড়তে শুরু করেন। তবে গাদ্দাফি কীভাবে নিহত হন, সে ব্যাপারে শক্ত কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পায়নি জাতিসংঘের ওই তদন্ত কমিশন। কমিশন দেখতে পেয়েছে, ২০১১ সালে লিবিয়ায় সহিংসতা চলাকালে উভই পক্ষই হত্যা ও নির্যাতনসহ যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করেছে। রয়টার্স।