শীর্ষ ১০

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় এই ১০ খাবার

বিশ্বজুড়ে মানুষ নানা ধরনের খাবার খায়। তবে কিছু খাবার এমন, যা প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের খাদ্যতালিকার শীর্ষে থাকে। এগুলো শুধু পুষ্টির প্রধান উৎস নয়; বরং স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবনধারার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং ম্যাশড ডটকমের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খাওয়া ১০টি খাবার সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হলো।

চাল

চাল
 ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ তাদের দৈনিক খাদ্য চাহিদার ৮০ শতাংশ চাল থেকে পূরণ করে। আর বিশ্বের মোট চাল উৎপাদনের ৯০ শতাংশই এশিয়ায় হয়ে থাকে।

চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এ খাদ্যশস্যের প্রধান উৎপাদক। চালের জনপ্রিয়তার কারণ, এটি সহজলভ্য, পুষ্টিকর ও বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহারযোগ্য।

গম ও রুটি

গম

বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য গম। এটি থেকে তৈরি রুটি অনেক দেশের খাদ্যতালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে।

প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ প্রতিদিন রুটি খায়। আর এ ক্ষেত্রে এগিয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ভারতের মানুষ। ইতিহাসে যুদ্ধ, ধর্ম ও উৎসবের সঙ্গেও রুটি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। চালের মতো গম ও রুটিও সহজলভ্য, পুষ্টিকর ও বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য।

পাস্তা

পাস্তা

পাস্তা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি। এটি মূলত ইতালির খাবার হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপাদন ও ভোক্তা দ্রুত বাড়ছে।

পাস্তার জনপ্রিয়তার কারণ হলো, দ্রুত রান্না ও বহুমুখী ব্যবহার করা যায় এবং প্রায় প্রতিটি দেশের স্থানীয় মসলার সঙ্গে মানানসই। ইতিহাস অনুযায়ী, অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে আরব ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ইতালিতে ড্রাই পাস্তা পৌঁছায়।

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস

এফএওর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে মাংসের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে মুরগি। বেশির ভাগ দেশেই মুরগির মাংস অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। ২০২০ সালে বিশ্বের মোট মাংস উৎপাদনের ৩৫ শতাংশই এসেছে মুরগির মাংস থেকে।

উন্নত দেশগুলোতে প্রতিবছর একজন ব্যক্তি গড়ে ৮৮ কেজি মুরগির মাংস গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রাজিল, ভারত ও মেক্সিকো সবচেয়ে বেশি মুরগির মাংস উৎপাদন করে।

কম চর্বি ও উচ্চমানের প্রোটিনের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত সস্তা ও রান্নায় বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় এটির জনপ্রিয়তা অনেক।

শূকরের মাংস

শূকরের মাংস

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি খাওয়া মাংসের মধ্যে অন্যতম হলো শূকরের মাংস। এশিয়া, বিশেষ করে চীন বিশ্বে এককভাবে শূকরের মাংসের সবচেয়ে বড় ভোক্তা। উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেশটি সবার চেয়ে এগিয়ে।

২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ৩ কোটি ২০ লাখ টন শূকরের মাংস উৎপাদন হয়েছিল। বিশ্বে যে পরিমাণ মাংসের চাহিদা রয়েছে, তার ৩৬ শতাংশ শূকরের মাংস। তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে এটি খাওয়া হয় না।

গরুর মাংস

গরুর মাংস

তালিকায় গরুর মাংসের অবস্থান ষষ্ঠ। বৈশ্বিক মাংস উৎপাদনের ২২ শতাংশই আসে গরুর মাংস থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন ও আর্জেন্টিনা গরুর মাংস উৎপাদনে শীর্ষে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকায় গরুর মাংস বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

গরুর মাংস উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও লৌহসমৃদ্ধ। এটি মানুষের অন্যতম প্রধান প্রাণিজ খাদ্যের উৎস। তবে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি। পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বছরে এ মাংস প্রায় ৭৪ মিলিয়ন টন উৎপাদিত হয়।

গরুর মাংস যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন, আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রধান প্রাণিজ খাদ্য। এটির জনপ্রিয়তা শুধু প্রোটিন ও লোহায় সমৃদ্ধ হওয়ার কারণেই নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহারযোগ্য।

ডিম

ডিম

ডিমকে বলা হয় ‘সম্পূর্ণ খাবার’। প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর হওয়ায় ডিম বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় থাকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন করা হয়।

সকালের নাশতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের রান্নায় সহজেই ব্যবহার করা যায় বলে ডিমের জনপ্রিয়তা সব জায়গায়। ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৬১টি ডিম খেয়েছেন।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পৃথিবীর বহু মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ। দুধ, দই, মাখন, পনির—এসব খাবার ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনসমৃদ্ধ হওয়ায় শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের জন্যই দুধ অপরিহার্য। শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও রান্নায় ব্যবহারের জন্যও এর জনপ্রিয়তা অনেক।

মাছ

মাছ

বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চল ও নদীনির্ভর দেশগুলোর মানুষের জন্য মাছ হলো অন্যতম প্রধান প্রোটিনের উৎস। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মোট প্রাণিজ প্রোটিনের প্রায় ২০ শতাংশই আসে মাছ থেকে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে মাছ বেশি খাওয়া হয়।

বাংলাদেশ, জাপান, নরওয়ে ও পেরু মাছ ধরা এবং খাওয়ায় শীর্ষস্থানীয় দেশ। মাছ শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অপরিহার্য হয়ে আছে প্রাচীনকাল থেকেই।

ভুট্টা

ভুট্টা

ভুট্টা বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। এটি সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি পশুখাদ্য, তেল, সিরাপ, কর্নফ্লেক্স, হালকা নাশতাসহ নানা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যবহৃত হয়।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বের মোট ভুট্টার প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে। চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনাও বড় উৎপাদক দেশ।

আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু মানুষের প্রধান খাদ্য ভুট্টা। সহজলভ্য, সস্তা ও বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি বৈশ্বিক খাদ্যতালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে।