
চুলের পরিচর্যায় কিংবা নতুন নতুন হেয়ার কাট দিতে সেলুনে দীর্ঘক্ষণ কাটান অনেক আফ্রিকান নারী। পুরোটা সময় আরও কোনো কাজ থাকে না। বসে থাকতে হয় চুপটি করে। এই অলস সময়টুকুকে কাজে লাগাতে অভিনব পন্থা বের করেছেন আইভরি কোস্টের প্রধান গ্রন্থাগারিক। সেলুনেই নিয়ে যাচ্ছেন বই। চুপটি করে বসে না থেকে বরং বইয়ে মজে যাক নারীরা, এটাই মূল্য উদ্দেশ্য।
প্রধান গ্রন্থাগারিক চান্তাল আদজিমান এই প্রকল্প শুরু করেন ২০১২ সালে। বর্তমানে ২৩ সেলুন জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে বই ধার নিয়ে নিজেদের গ্রাহকদের দিচ্ছে। সাড়াও পড়েছে প্রচুর।
সেলুনের লোকজন বলেন, গ্রন্থাগার থেকে অনেক বই ধারে এনে রাখা হয় সেলুনে। চুলে ক্রিম দেওয়া, চুল সোজা করা ও লোশন কিংবা রং করার জন্য অনেক সময় লাগে। ওই সময়টুকুতে বই পড়েই কাটান অনেক নারী গ্রাহক। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ।
আদজিমান বলেন, আইভরি কোস্টের শহরতলিতে পাঠাগার ক্রমেই কমে যাচ্ছে। যেগুলো আছে সেখানেও পাঠকের আনাগোনা সামান্য। নারী পাঠকেরা তো যান না বললেই চলে। ঘর, সন্তান ও কাজ সামলে বই পড়তে যাওয়ার সুযোগ সত্যিই হয় না। তাই তাঁদের বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এমন স্থান বেছে নেওয়া হলো, সেখানে তাঁরা প্রায়ই যান। তিনি বলেন, আইভরি কোস্টের নারীরা সৌন্দর্যপ্রেমী। অনেক নারীই সেলুনে গিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অবিবাহিত করেন চুলের যত্ন নিতে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ১ হাজার ৭৫০টি বই নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে সেলুনগুলোর জন্য। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, শিশুসাহিত্য এবং নারী ও শিশু অধিকারবিষয়ক সচেতনতামূলক প্রবন্ধ সংগ্রহ। সেলুনগুলো এই বইগুলো ধারে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়া নারী গ্রাহকেরা বইগুলো পড়ে বিনোদিত হন এবং অধিকার-সচেতন হন।
একটি সেলুনের সামনে বেঞ্চিতে বসে বই পড়ছিলেন এক নারী। বললেন, ‘আমার আসলে বই কিনে পড়ার সামর্থ্য নেই, তাই এখানে মাঝেমধ্যে এসে পড়ি।’
ওই সেলুনের ভেতরে চুলের পরিচর্যার ফাঁকে উপন্যাস পড়ছিলেন আরেক নারী। সেলুনের মালিক বেনিডিকটে ওগুহি জানালেন, বই পড়ার সুবিধা রাখার কারণে তাঁদের গ্রাহকও বেড়ে গেছে।