
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার মেয়ে দুদুজিলে জুমা-সাম্বুদলা জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ১৭ নাগরিককে রাশিয়ায় যেতে প্রলুব্ধ করার অভিযোগ উঠার পর তিনি এই ঘোষণা দিলেন। ওই সব নাগরিক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভাড়াটে সেনা হিসেবে লড়াই করতে গিয়ে আটক হয়েছেন।
জুমা-সাম্বুদলা গতকাল শুক্রবার পদত্যাগ করেন। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকদের যুদ্ধ করতে রাশিয়ায় যেতে প্রলুব্ধ করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকার একদল তরুণকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের সারিতে দেখা গেছে এমন অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করার ঘোষণা দেয়।
জুমা-সাম্বুদলা ২০২৪ সালের জুন থেকে উমখোনতো উইসিজওয়ে (এমকে) দলের সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২৩ সালে সাম্বুদলার বাবা জ্যাকব জুমা দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর এমকে দলটি গঠন করেছিলেন।
এমকে দলের জাতীয় চেয়ারম্যান এনকোসিনথি এনহলেকও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, কমরেড দুদুজিলে জুমা-সাম্বুদলার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে দলটির জাতীয় কর্মকর্তারা স্বাগত জানিয়েছেন। এসব তরুণ দক্ষিণ আফ্রিকানদের নিরাপদে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনার সব ধরনের উদ্যোগের প্রতি তাঁদের সমর্থন রয়েছে।
এমকে দলের নেতারা বলেন, জুমা-সাম্বুদলা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং জাতীয় পরিষদ ও অন্য সব দলীয় পক্ষ থেকে তাঁর বিদায় অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
এমকে-এ চেয়ারম্যান এনহলেকও আরও বলেন, এসব পুরুষকে রাশিয়ায় প্রলুব্ধ করার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং জুমা-সাম্বুদলার পদত্যাগ কোনো অপরাধের স্বীকারোক্তি নয়। ইউক্রেনে আটকে পড়া আফ্রিকার নাগরিকদের পরিবারকে এমকে দল সহায়তা করবে।
জুমা-সাম্বুদলা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও কোনো কথা বলেননি। তিনি তাঁর সৎবোনের অভিযোগের প্রকাশ্যে কোনো জবাব দেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই মাসের শুরুতে জানিয়েছিল, ১৭ নাগরিককে লাভজনক চাকরির চুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে প্রতারিত হয়ে তাঁরা ভাড়াটে সেনা হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করেন। এখন তাঁরা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে আটক রয়েছেন।
গত সপ্তাহান্তে পুলিশ জানায়, জুমা-সাম্বুদলার সৎবোন তাঁর এবং আরও দুজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্তের অনুরোধ করার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করবে।
পুলিশ বলছে, জুমা-সাম্বুদলার সৎবোন এনকোসাজানা বোঙ্গানিনি জুমা-এমকিউব এক হলফনামা জমা দিয়ে অভিযোগ করেন, জুমা-সাম্বুদলা এবং আরও দুজন রাশিয়ায় নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকদের প্রতারণার মাধ্যমে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছেন। অন্য দুই ব্যক্তির পরিচয় স্পষ্ট নয়।
হলফনামায় অভিযোগ করা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার এসব নাগরিককে রাশিয়ার একটি ভাড়াটে সেনা দলের হাতে তুলে দিয়ে তাঁদের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, এই ১৭ ব্যক্তির মধ্যে আটজন জুমা-সাম্বুদলা ও জুমা-এমকিউবের বর্ধিত পরিবারের সদস্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া আল–জাজিরাকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে আটকে পড়া এই দলের কাছ থেকে সরকার ‘বিপদের বার্তা’ পেয়েছে। কর্তৃপক্ষ ‘তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে নীরবে কাজ করছে।’
ম্যাগওয়েনিয়া আরও বলেন, এ ঘটনায় তদন্তও চলছে। কীভাবে রাশিয়ায় তাঁদের পাঠানো হয়েছিল, এর সঙ্গে কারা জড়িত ছিল এবং তাদের কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেন দাবি করেছে, মস্কো ১২৮টি দেশ থেকে অন্তত ১৮ হাজার বিদেশি যোদ্ধাকে নিয়োগ দিয়েছে। ইউক্রেনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দিমিত্রো ইউসভের দেওয়া তথ্য অনুসারে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জন বিদেশি নিহত হয়েছেন।
জোহানেসবার্গ থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক মাইকেল অ্যাপেল জানান, জুমা-সাম্বুদলাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়। ২০২১ সালের অস্থিরতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ‘গুরুতর অভিযোগ’ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জুমা-সাম্বুদলা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।