আফগানিস্তান সংকট

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তালেবানের প্রতি ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৯ দেশের আহ্বান

আফগানিস্তান এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নির্বিঘ্নে ক্লাস করছে স্কুলছাত্রীরা। গত রোববার দেশটির হেরাত নগরীতে
ছবি: এএফপি

তালেবান যোদ্ধাদের হাতে গত রোববার কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তানে নারী ও কিশোরীদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আরও ১৮ দেশ। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। একই সঙ্গে নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

এ বিবৃতি প্রকাশের আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আফগানিস্তানে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফেরা তালেবানের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে কাজ করার ও তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁর দেশের আগ্রহের কথা জানান।

বুধবার প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আফগান নারী ও কিশোরীদের নিয়ে; তাদের শিক্ষা, চাকরি ও চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা আফগানিস্তানজুড়ে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আফগানিস্তানে অন্য সবার মতো আফগান নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধ করা দরকার। তাদের কণ্ঠ যাতে শোনা যায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো হলো আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা, উত্তর মেসিডোনিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, প্যারাগুয়ে, সেনেগাল ও সুইজারল্যান্ড।

আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে অধিকার ও স্বাধীনতা নারী ও কিশোরীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, এমন দাবি করে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বলেছে, দেশটির ভবিষ্যৎ সরকার এই অধিকার ও স্বাধীনতা কীভাবে নিশ্চিত করে, সেদিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখবে তারা।

আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের কূটনীতিকসহ অন্যান্য নাগরিক ও গত দুই দশকের আফগান যুদ্ধে এসব দেশের সেনাদের সহায়তাকারী আফগান নাগরিকদের (যেমন দোভাষী) সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগের মধ্যে এ যৌথ বিবৃতি দেওয়া হলো।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে রোববার দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন আফগানিস্তানের নারী ও কিশোরীদের অধিকারসহ নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ আফগান সরকার তার জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখলে এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দিলে তার সঙ্গে আমরা কাজ করতে ও তাকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিপরীতে যে সরকার তা করবে না, নারী, কিশোরীসহ তাদের জনগণের মৌলিক অধিকার তুলে ধরবে না...সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেবে...যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটবে...তাদের ক্ষেত্রে এটি হবে না।’

তালেবানের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, এমন প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয় সাক্ষাৎকারে। জবাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, তারা আফগান জনগণের মৌলিক অধিকার বজায় না রাখলে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালাতে পারে, সেই সন্ত্রাসীদের সমর্থন ও আশ্রয় দিলে ‘এখনই এর কোনোটা দেওয়া হবে না, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে না, তারা ভ্রমণের (যুক্তরাষ্ট্রে) সুযোগও পাবে না।’

২০০১ সালে আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে আগ্রাসন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ও তার মিত্র দেশগুলোর সেনাদের ব্যাপক অভিযানের মুখে পতন ঘটে তৎকালীন ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের। পরে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধ ও সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে বহু নিরীহ বেসামরিক লোক। নিহত হয়েছেন তিন হাজারের মতো মার্কিন সেনাও। কিন্তু দেশটিতে শান্তি ফেরেনি।

এরই মধ্যে গত বছর দোহায় তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে চলতি বছর মে থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে দেশটি। এরপর আফগান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেন তালেবান যোদ্ধারা। ঝড়ের গতিতে নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকেন একের পর এক এলাকা। সর্বশেষ কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহে দেশটিতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরা।

তালেবানের এই সামরিক সাফল্যে রীতিমতো বিস্মিত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের এই বিস্ময় ও নানা উদ্বেগের মধ্যে তালেবান নেতারা বিরোধীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন। নেতারা বলেছেন, এখন তাঁদের তৎপরতা হবে আগের চেয়ে ভিন্ন। ইসলামি মূলনীতি অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষারও অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা।