৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প কতটা শক্তিশালী
ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল। কম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তা টের পাওয়া গেছে ইসরায়েল, সাইপ্রাস—এমনকি সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড থেকেও। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পটি আঘাত হানে আজ সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্প এর চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে। তবে সেটি কত ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে, তা বেশি নির্ভর করে ভূমিকম্পটি কোথায় হচ্ছে, উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠ থেকে কতটা গভীরে, উপদ্রুত অঞ্চলে জনবসতি কেমন, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোগুলো কতটা শক্তপোক্ত—এমন কিছু বিষয়ের ওপর।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের ভূমিকম্পবিশারদ জানুকা আত্তানায়াকে বলেন, এই ভূমিকম্প থেকে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়েছে, তা প্রায় ৩২ পেটাজুলসের সমান। এই পরিমাণ শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরকে চার দিনের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারবে
আজকের ভূমিকম্পের ৩০ মিনিট পর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএসজিএস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০০ থেকে ১ হাজার জনের মধ্যে থাকার ৩৪ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। ৩১ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষের মারা যাওয়ার। আর ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কের অর্থনৈতিক ক্ষতি দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
ভূমিকম্পটি কতটা শক্তিশালী ছিল, তা নিয়ে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের ভূমিকম্পবিশারদ জানুকা আত্তানায়াকে। তাঁর ভাষ্যমতে, এই ভূমিকম্প থেকে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়েছে, তা প্রায় ৩২ পেটাজুলসের সমান। এই পরিমাণ শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরকে চার দিনের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারবে। ২০২১ সালে মেলবোর্নে আঘাত হানা ৫ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শক্তি উৎপন্ন হওয়ার দিক দিয়ে দেখলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার কম্পন ৭০৮ গুণ বেশি শক্তিশালী।’
ভূমিকম্প কতটা শক্তিশালী, তা পরিমাপ করা হয় ম্যাগনিচিউড স্কেলের মাধ্যমে। এর আগে এই পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হতো রিখটার স্কেল। লগারিদমভিত্তিক ম্যাগনিচিউড স্কেলের হিসাব অনুযায়ী, কম্পনের মাত্রা পুরো এক ধাপ বৃদ্ধির অর্থ হলো, আগের ধাপের চেয়ে ৩২ গুণ বেশি শক্তি উৎপন্ন হয়েছে।
২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভূমিকম্পের বিভিন্ন মাত্রা নিয়ে কথা বলেছিলেন ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অব ভলক্যানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজির পরিচালক রেনাটো সোলিডাম। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির প্রায় ৩০ গুণ বেশি।
তবে ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি মানেই যে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে, তা কিন্তু নয়। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বেশি নির্ভর করে উপদ্রুত অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব কেমন এবং উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে কতটা গভীরে, তার ওপর। উৎপত্তি যত কম গভীরে হবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তত বাড়তে পারে। আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ১০ মাইল।
Also Read: ৮৪ বছর পর তুরস্কে আবার এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবেশি হতে পারে ভূমিকম্প আঘাত হানা অঞ্চলের অবকাঠামোগুলো নির্মাণের মানের কারণেও। ইউএসজিএসের প্রতিবেদন বলছে, তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে যেখানে ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে, সেখানের মানুষের বসতবাড়িগুলো ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ নিয়ে ইউএসজিএসের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সুসান হগ টুইটারে লিখেছেন, গত কয়েক দশকে বিশ্বে শক্তিশালী যত ভূমিকম্প হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় আজকের ভূমিকম্পের মাত্রা হয়তো কিছুটা কম, তবে এই অঞ্চলের অবস্থান এবং উৎপত্তিস্থলের কম গভীরতার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।
আজকের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিকে ‘বড়’ ভূমিকম্প বলে উল্লেখ করেছে তুরস্ক। ২০১৩ সালে পাকিস্তানে প্রায় একই মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছিল ৮২৫ জনের। আর ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখন তুরস্কে যেভাবে হতাহতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে মোট ক্ষয়ক্ষতির চিত্রটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
Also Read: তুরস্ক ও সিরিয়ায় আরেকটি ভূমিকম্পের আঘাত