নেপালের সিংহদরবার প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলছে। এখানেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় অবস্থিত। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নেপালের সিংহদরবার প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলছে। এখানেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় অবস্থিত। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি শীর্ষস্থানীয় আট দলের

নেপালের প্রথম সারির আটটি রাজনৈতিক দল দেশটির সদ্য বিলুপ্ত পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা অসাংবিধানিক। এটা করার এখতিয়ার তাঁর নেই। তা করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তা করতে হবে।

গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দলগুলো এই দাবি জানায়। এতে নেপাল কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওয়িস্ট সেন্টারসহ মোট আটটি দলের প্রধান হুইপ সই করেন।

পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকার ৪ সেপ্টেম্বর ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। সরকারের দাবি ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শর্ত মেনে কোম্পানিগুলো নিবন্ধন করেনি। তাই তাদের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যাপগুলোর মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এক্স ও লিঙ্কডইন অন্যতম। তবে নিবন্ধন করায় টিকটক, ভাইভারসহ পাঁচটি অ্যাপ চালু ছিল।

কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ নিয়ে নেপালের তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ৮ সেপ্টেম্বর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে ওই দিনই অন্তত ১৯ জন নিহত ও কয়েক শ মানুষ আহত হন।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮ সেপ্টেম্বর রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সরকার। কিন্তু হতাহতের ঘটনায় পরদিন বিক্ষোভ আরও সহিংস রূপ নিলে প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করেন। তিনি সিপিএন-ইউএমএলের প্রধান। পদত্যাগের পর থেকে তিনি কোথায় আছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অলির পদত্যাগের তিন দিনের মাথায় গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র সুশীলাকে শপথ পাঠ করান। তিনি ছয় মাস দায়িত্ব পালন করবেন।

শপথ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের ৫ মার্চ পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে বিবৃতিতে দলগুলো দাবি করে, প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করা অসাংবিধানিক হওয়ার পাশাপাশি নেপালের বিচার বিভাগের পূর্ববর্তী নজিরগুলোরও বিরোধী।

নেপালে কয়েক দিনের বিক্ষোভে ব্যাপক সহিংসতা হয়। পার্লামেন্ট ভবনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও মন্ত্রীদের বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভে এখন অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত হন প্রায় দেড় হাজার। দুই হাজারের বেশি কয়েদি কারাগার থেকে পালিয়েছেন। তাঁদের অনেককে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অনেক অস্ত্র লুট হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে গত বুধবার থেকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। জারি করা হয়েছিল কারফিউ। শুক্রবার থেকে দেশটিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কাঠমান্ডুতে দোকানপাট খুলেছে। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

তবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা নেপালে সহজে শান্তি ফিরবে কি না, তা বলা কঠিন। তাই সুশীলা কারকিতে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা তাঁর প্রধান দায়িত্ব।

তরুণ বিক্ষোভকারীরা দেশটির সাবেক এই প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির ওপরই এই বড় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, যাদের জেনারেশন জেড বা জেন-জি বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও হলেন সুশীলা। এখন তিনি এক কঠিন পরীক্ষার মুখে।