জাপান সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেট অনুমোদন দিয়েছে। গত শুক্রবার টোকিওতে অনুমোদিত এই বাজেটের মোট পরিমাণ ১২২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৫ টাকার সমান। ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের এই বাজেটে প্রতিরক্ষা ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়াই সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড বরাদ্দ। প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ রেখেছে ৯ ট্রিলিয়ন ইয়েন, যা জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পটভূমি সামরিক সক্ষমতা জোরদার করতেই এই উদ্যোগ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপান এখন সবচেয়ে জটিল ও কঠিন নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখে। তাঁর মতে, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতেই এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
জাপান কয়েক বছর ধরে নিজেদের কঠোর শান্তিবাদী অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। ‘কাউন্টারস্ট্রাইক’ বা পাল্টা হামলার সক্ষমতা অর্জন এবং সামরিক ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগ তারই অংশ। নতুন বাজেটে ‘শিল্ড’ নামের উপকূলীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য ১০০ বিলিয়ন ইয়েন রাখা হয়েছে, যেখানে ড্রোন ব্যবহার করে সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এই বড় বাজেট নিয়ে বাজারে উদ্বেগও বাড়ছে। জাপানের সরকারি ঋণের হার ইতিমধ্যে জিডিপির প্রায় ২৩৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজেট ঘোষণার পর ইয়েনের দরপতন ও সরকারি বন্ডের সুদের হার বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, ব্যয় আরও বাড়লে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তীব্র হতে পারে।
সরকার বলছে, এই বাজেট মানুষের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতেই প্রণীত। তবে বাজেটটি এখনো সংসদে পাস হয়নি। সংসদের অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে।